Published : 07 Dec 2011, 01:00 PM
ওয়েলথ এক্স সংস্থাটির একটা রিপোর্টই সবচেয়ে বেশি আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিপোর্টটি যতটা না সঠিক তথ্য দিয়েছে তার চেয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বেশি।
বাংলাদেশে অতি ধনী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে। অতি ধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে-এটা চমক সৃষ্টি করার মতো কথা বটে।
রাজনীতিবিদরা বলছেন, সমাজে বৈষম্য বেড়ে গেছে ও ধনীশ্রেণি অবৈধভাবে কালো টাকা উপার্জন করেছেন আর বঞ্চিত হচ্ছে গরীব মানুষ।
শুধু রাজনৈতিক দলগুলো নয়, অনেক অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত এক দশকে ব্যাংকিং খাতে, শেয়ারবাজারে লুটপাট, ব্যাপক দুর্নীতির ও বিদেশে অর্থপাচার করার কারণে ধনী আরো ধনী হয়েছেন। ওয়েলথ এক্সের রিপোর্ট তার প্রমান।
প্রথম কথা, কালো টাকা বা অবৈধ টাকার মালিক হয়ে ধনীদের তালিকায় আসা যায় না। টাকার বৈধ হিসাব থাকতে হয়।
দ্বিতীয়ত, ওয়েলথ এক্স বাংলাদেশের অতি ধনীদের সংখ্যা উল্লেখ করেনি। তারা শুধু সংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখ করেছে। সংখ্যা বৃদ্ধির শতকরা হার ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এটার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, বাংলাদেশে অতি ধনীদের সংখ্যা আগে থেকে খুব কম ছিল। এই কারণে সংখ্যার সামান্য বৃদ্ধিতে শতকরা হার অনেক বেড়ে গেছে। অতি ধনীদের সংখ্যা আগে থেকে কম ছিল, তার কোনো কোনো সঠিক তথ্য নেই. তবে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বার্ষিক শত কোটি ডলারের মালিকদের তালিকায় কোনো বাংলাদেশি নেই. অন্য কোনও ভাবেও দেশে অতি ধনীদের সংখ্যা বেশি প্রতীয়মান হয়নি।
ওয়েলথ এক্স তাদের রিপোর্টে প্রথম ১০টি দেশের অতি ধনীদের সংখ্যা উল্লেখ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতি ধনীদের সংখ্যা ৮০ হাজার, সাড়ে ছয় হাজার বাড়ার অর্থ মাত্র ৮ শতাংশ বৃদ্ধি। বাংলাদেশে যদি ১০০ জন অতি ধনী থাকে, তাদের সংখ্যা মাত্র ১৭ জন বাড়লেই ১৭ শতাংশ বৃদ্ধির হার হয়।
অবৈধ টাকার হিসেবে অতি ধনীর তালিকায় আসা যায় না
অতি ধনী বলতে ৩০ মিলিয়ন ডলার বা ২৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের মালিক বোঝায়। নিজের বাড়ি, গাড়ির মূল্য এই পরিমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। ঢাকার অভিজাত এলাকার বাড়ির মূল্য ২৫০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। কিন্তু এই বাড়ির মালিকানার বদৌলতে সংজ্ঞা অনুযায়ী অতি ধনী হওয়া যায় না।
২৫০ কোটি টাকার প্রকৃত সম্পদ থাকতে হবে। উদাহরণ দেই , কারো ৫০০ কোটি টাকার বন্ড আছে, কিন্তু ঋণের পরিমান ৩০০ কোটি। তার প্রকৃত সম্পদ ২০০ কোটি।
২৫০ কোটি টাকার মালিকানা দৃশ্যমান হতে হবে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকা করা হয় তাদের কোম্পানির বাজার মূল্যের ভিত্তিতে। কার কত শেয়ার আছে, তার কত মূল্য তা প্রতিদিন স্টক মার্কেটের চার্ট দেখে জানা যায়।
দেশে যাদের ২৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে, তা বিনিয়োগ করা থাকে শেয়ার বাজারে , মিউচুয়াল ফান্ডে, সঞ্চয় পত্রে। এই বিনিয়োগের তথ্য হিসাব আয়কর বিভাগের কাছে থাকে।
অবৈধ টাকা কার কত আছে, তা জানা খুব কঠিন। এই পরিমান হাজার কোটি টাকা হোক বা যাই হোক কোনো যায় আসে না। ওয়েলথ এক্স কিংবা ফোর্বস লুকানো টাকার পরিমান জানে না। তারা তালিকা করে যে বৈধ টাকা যা খুঁজে পাওয়া যায়, তার উপর।
দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে, এমন অভিযোগ অনেকের। হতে পারে অনেকের কাছে প্রচুর কালো টাকা আছে। এই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিৎ, সেটা অন্য প্রসঙ্গ কিন্তু অতি ধনীর সংখ্যা কালো টাকার কারণে বাড়তে পারে না।
দেশে অতি ধনীর সংখ্যা কম
"২০১৩-১৪ সালের করবর্ষের সম্পদ বিবরণীর তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের শীর্ষ সম্পদশালী ৫০ ব্যক্তির তালিকায় দেখা গেছে ১০০ কোটি টাকার বেশি নিট সম্পদের মালিক রয়েছেন ২৭ জন। আর ৫০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি টাকার নিট সম্পদের মালিক রয়েছেন এমন সম্পদশালীর সংখ্যা ৪৬ জন।" –(সূত্র priyo.com )। পরবর্তী সময়ের তালিকা পাওয়া যায়নি।
ধনী সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খবর শোনা যায় কিন্তু কোনো তাদের সম্পত্তির প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায় না। আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য অনেকে সম্পত্তি গোপন করে।
৩ বছর আগে ১০০ কোটি টাকার মালিক ছিল ২৭ জন ও মাত্র ৪ জনে ২৫০ কোটির বেশি টাকার মালিক ছিল।
দেশের জাতীয় যায় বেড়েছে এবং ধনী ব্যক্তিদের আয় আরো বেড়েছে।
সেই হিসাবে আগের বেশি মানুষের ২৫০ কোটি টাকা আছে. কিন্তু শখটি খুব বেশি হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
ওয়েলথ এক্সের রিপোর্ট কতটা বিশ্বাসযোগ্য ?
ওয়েলথ এক্সের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টার মধ্যে গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ নেই. ডাটা গুলো কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, কে সংগ্রহ করেছে এবং ডাটা বিশ্লেষণ কিভাবে করা হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই. তাদের রিপোর্ট কী কারণে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য মেনে নেওয়া যাবে, তার কোনো প্রমান দেওয়া হয়নি।
আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করা খুব কঠিন। শেয়ারের মূল্য বের করা যেতে পারে কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রে কার কত বিনিয়োগ আছে বের করা কঠিন। ব্যাংকের ঋণ জানা একেবারেই অসম্ভব।
এক্ষেত্রে একটাই পথ হতে পারে, ধনীদের ইন্টারভিউ করা। কিন্তু তারাও সঠিক তথ্য দেবেন তার নিশ্চয়তা নেই।
আমি ব্যক্তিগতভাবে ওয়েলথ এক্সের রিপোর্ট নির্ভরযোগ্য মনে করি না। এটা একটা ছোট বাজার গবেষণা কোম্পানি। মোট কর্মী ১৫০ জন।
এই ধরনের গবেষণার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সংস্থা ফোর্বস। ফোর্বস ও ওয়েলথ এক্সের তথ্যের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের ফোর্বস সম্পদের ডাটাগুলোর সাথে ওয়েলথ এক্সের রিপোর্ট মেলে না।
ওয়েলথ এক্সের রিপোর্ট বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে তেমন কোনো সাড়া জাগাতে পারেনি।