Published : 28 Feb 2018, 08:09 PM
সত্য কি না জানিনা। তবে খবরে দেখলাম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল গেছিলেন ড: কামাল হোসেনের কাছে। খালেদা জিয়ার হয়ে আইনি লড়াইয়ে সামিল হবার অনুরোধ জানাতে। ড. কামাল হোসেন নাকি বলে দিয়েছেন, তিনি ক্রিমিনাল ল প্র্যাকটিস করেন না।
ফলে এ মামলায় লড়বেন না।
প্রকারন্তরে খালেদা জিয়াকে ক্রিমিনাল বলার মত কথা বৈকি! মির্জা সাহেব নিশ্চয়ই জানেন ড. কামাল হোসেন নিজের হয়েই লড়েন না। আমাদের যৌবনে দেশে একনায়কের শাসনামলে তাঁকে ধরেবেঁধে প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড় করানো হয়েছিল ঐক্য জোটের প্রার্থী হিসেবে। ঢাকার সর্দার পরিবারের নেতা কাম মস্তান আবুল হাসনাতের এক ধমকে দেশবাসীকে ফেলে বিদেশ চলে গিয়েছিলেন কামাল হোসেন। তাঁর একাত্তরে পাকিস্তান যাত্রার মতো অনেক যাত্রা যেমন প্রশ্নবোধক তেমনি তিনি কোনদিন কারও হয়ে লড়েছেন এমনটা শুনিনি। বিএনপির মহাসচিবের মন খারাপের আরো খবর আছে।
ছবিতে দেখলাম মহাসচিব একলা বসে আছেন। একুশের সকালে মন খারাপ করে ফুটপাথে বসে থাকা মির্জা ফখরুলকে দেখে মনে হলো- হায়রে নিয়তি! বিএনপি তার মহাসচিবদের প্রতি কখনো সুবিচার করেনি। সালাম তালুকদারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের।
তখন কি রমরমা তাদের! গদিতে এসে দু:সময়ের মহাসচিব সালাম তালুকদারকে উপেক্ষা করলেন বেগম জিয়া। বেচারা তালুকদার একসময় হারিয়ে গেলেন এবং বিদায় নিলেন দুনিয়া থেকে। একই পরিণতি দেখেছি মান্নান ভূঁইয়ার বেলায়। মান্নান ভূঁইয়া বামদল মানে ভাসানী ন্যাপের নেতা ছিলেন। স্বভাবতই মুসলিম লীগ এবং নব্য বিএনপি নেতাদের চাইতে আলাদা। রাজপথে থাকা বিএনপিকে বেগবান করা তিনিও পড়লেন ছিটকে। ওয়ান ইলেভেনের পর তাঁকে চরম অপমানের সাথে বিদায় দিয়েছিল বিএনপি।
এরপর খন্দকার দেলোয়ার । ভদ্রলোক এখন মরহুম। কিন্তু বলতে হবে একমাত্র তাঁরই একটি ভিডিও ছিলো যেখানে কথা বলতে বলতে পাতলুন খুলে যাবার দৃশ্যও ছিলো। জানিনা কতটা বানোয়াট, আর কতটা সত্য। তবে সেই পাতলুন খোলার শুরু। মুশকিল হলো মহাসচিবদের এই অপমান আর বেদনার পরও আমাদের সুশীলদের চোখে পড়লো আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হয়ে পড়া সচিব আবদুল জলিলকে। এক রাজাকার ঘেঁষা লেখক যিনি আবার মুক্তিযোদ্ধাদের নামে চাঁদা তুলে চলেন- উপন্যাস লিখে ফেললেন, আবদুল জলিল যেভাবে মারা গেলেন। কেন বাবা? খন্দকার সাহেবের কীভাবে পাতলুন খুললো বা সালাম তালুকদার কিভাবে একা হলেন সেটা লিখলেন না কেন? আজ যখন মির্জা সাহেব পথে একা বসে তখন আপনারা কি লিখবেন এ নিয়ে?
লিখবেন না।
বেগম জিয়ার এটাই দুর্ভাগ্য। তাঁর দলে সুবিধাবাদী আর সুযোগসন্ধানীদের ভিড়। কারণ, বিএনপি মূলত একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। দল হবার পথে পা বাড়ালেও, পারেনি। যেখানে বামদল ভাঙতে ভাঙতে ছোট হবার পরও ঢাকার রাজপথ লাল পতাকায় লাল করে দিতে পারে, যেখানে এখনো অনেক ইস্যুতে সাধারণ মানুষের চাপে সরকার সমঝোতায় বাধ্য হয়, সেখানে বিএনপি আন্দোলন দূরে থাক, মাঠেই নামতে পারেনা।
এই দীনতা দূর হবে লন্ডনের নেতার জোরে! যারা মনে করেন আমরা আওয়ামী লীগের হয়ে লিখি তাদের বলি, সত্য বললে যদি তা কোন দল বা মতের দিকে ঝুঁকে পড়ে আমাদের কী করার আছে? আসলে সত্য এমনই। সে কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা। একটা সময় ছিলো যখন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়া দূরে থাক, ওই রাস্তায় হাঁটবেন এটাও ভাবা যেত না। অথচ আজ এটাই সত্য।
বিএনপি এখনো টিকে আছে মিডিয়ার জোরে। তার একটা শক্ত অবস্থান মানুষের মনে থাকলেও সাংগঠনিক ভিত্তি বড় দূর্বল। যার মূল কারণ তাদের আদর্শগত সমস্যা। আমি তাদের অনেক নেতাকে চিনি যাদের ব্যবহার এবং সৌজন্য আওয়ামী নেতাদের চাইতে অনেক বেশি। এরা ভদ্রলোক। কিন্তু এরা দলে ভালো জায়গায় থাকতে পারেননি। সামনের সারিতে চলে আসা বাবর, গিয়াস উদ্দীন- এদের দেখলেই বোঝা যাবে কোথায় চলে গিয়েছিল নেতৃত্ব। সে পাপের ফল পাচ্ছে তারা আজ। পরিচয় সঙ্কট বিএনপিকে কতটা দুর্বল করেছিল এখন তা তারা বুঝলেও ফেরার পথ নাই।
দূর প্রবাসেও আমরা এদের নাম ভাঙানো এজেন্টদের চিনি। ওপরে মুখে বড় কথা বললেও মূলত অন্তরে জামাত। মজার ব্যাপার এই তাদের টার্গেট আওয়ামী নেতারা নন। তাদের টার্গেট আমাদের মত লেখকেরা। যারা গান করেন, কবিতা লেখেন কিংবা শিল্প চর্চা করেন তাদের পেছনে ঘেউ ঘেউ করতে থাকা নেড়ি কুকুরকে দেখলেই বুঝি বিএনপি মার্কা বুদ্ধিজীবীর দৌড় কতটুকু। এরাই সর্বনাশের মূল কারণ। একবার আইনের আওতায় আনলে এরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। যে তালিকায় এখন বিদেশের অনেকেই আছে।
বলছিলাম ফখরুল সাহেবের কথা। এই ভদ্রলোক বলেন ভালো। আচরণও মন্দ না। কিন্তু তাঁর রাজনীতি মানুষ কেন নেবে? শুধু সহমর্মিতার জন্য কেউ রাজনীতিতে যায়না। সেখানে ঘাত- প্রতিঘাত আর বিবাদের ভেতরই দল বড় হয়। নেতারা হয়ে ওঠে মানুষের চোখের মণি। ফখরুল সাহেব একবার চোখের পানি ঝরিয়ে বলেছিলেন তিনি আর রাজনীতিতে থাকতে চাননা।
সিঙ্গাপুর চলে যাওয়া তাঁর দুচোখের পানিতে মানুষ ব্যথিত হবার পরিবর্তে জানতে চেয়েছিল, যে মেয়েটি তাদের আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যের কারণে একচোখ হারিয়েছিল সে কীভাবে দু' চোখে কাঁদবে? এই বিষয়টাই মাথায় নাই তাদের। তারা ভাবে সস্তা জনপ্রিয়তা পাকিস্তান প্রীতি দিয়েই পথ পার হয়ে যাবে। মনে আছে একবার মুন্নী সাহা খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করেছিলেন, একশ'র ওপর মানষের জান নিয়ে বিএনপি কী পেল? চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বেগম জিয়া দম্ভভরে উত্তর দিয়েছিলেন জনগণের সমর্থন। এখন হয়তো সেই শতাধিক লাশের গোপন জিজ্ঞাসা ঘুরছে কারাগারের দেয়ালে, কোথায় সেই গণসমর্থন?
খালেদা জিয়া আইনের আওতায় জামিন পাবেন না; মুক্তি পাবেন, না ছাড়া পাবেন, সেটা আমাদের বিচার্য না। কিন্তু বলবো ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ দেশের অস্তিত্ব আর শিল্প সাহিত্য মনন নিয়ে খেলা বন্ধ করুন। কোন কারণে গদি ফিরে ফেলে যদি প্রতিশোধের রাজনীতিতে ফেরেন, তবে তো আর কোনকালে আপনাদের চিহ্ন ও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
মনে পড়ছে জেলে যাবার কদিন আগে খালেদা জিয়া বলতে শুরু করেছিলেন তারা সরকারে এলে আর কোনদিন প্রতিশোধের রাজনীতি করবেন না। কিন্তু সেটা যে কথার কথা, মনের কথা না, সেটা মানুষ বোঝে। কারণ তাদের দাবার ঘুঁটি চলে লন্ডন থেকে। যেখানে উস্কানি ছাড়া আর কিছু নাই। মনে পড়ছে আওয়ামী লীগের কথাও। তাদের যখন দু:সময় নির্বাচনে জিতে আসাটা প্রশ্নবোধক বি চৌধুরী দম্ভ করে টিভিতে বলেছিলেন আগামী ৫০ বছরেও নাকি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারবেনা। মানুষ সে বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি। নিয়েছিল ঢাকার প্রয়াত মেয়র হানিফ সাহেবের কথা। তিনি আগত সন্ধ্যায় ঢাকার এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে অতীতের সব দোষত্রুটির জন্য মার্জনা চাওয়ার পর মানুষ ভোট ঢেলে দিয়েছিল নৌকার বাক্সে। মানুষ এমনই। তারা শান্তিপ্রিয়। তাদের কামনা মঙ্গল আর শান্তি।
খালেদা জিয়া জেলে। মওদুদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বাকীরা এই আছে এই নাই। আর মির্জা ফখরুল মাটিতে একা বসে দিন গুণছেন। এই কি বিএনপির শেষ যাত্রা? সময় এর উত্তরদাতা। তবে মানতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতি কারো দম্ভ বা গর্ব মানেনি। তার মাটিতে রক্ত আকাশে রক্তীয় সূর্য নদীতে মায়ের মুখ ফুলে শহীদের ভালোবাসা। এদেশকে ভালো না বাসলে, সে গোপনে এমন প্রতিশোধ নেয় যা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যদিনের রক্তমাখা কেক, নিহত লাখো মানুষের সংখ্যার সাথে প্রতারণা দেশকে তুচ্ছ করা ইতিহাসকে পায়ে ঠেলার যে পাপ, সে পাপই আজ মির্জা ফখরুল ও তার দল বিএনপিকে নি:সঙ্গ করে রেখেছে। এখান থেকে সরকারি দলকেও শিখতে হবে। এক মাঘে শীত যায়না কারোই। রাজনীতি সেটা মানলেও রাজনীতিবিদেরা সেটা বোঝেন না। যখন বোঝেন তখন হয় জেলে, নয় তো পদহীন। নয় তো তখন অনেক দেরি।
মহাসচিব তিনি আওয়ামী লীগ আর বিএনপি যে দলেরই হোক না কেন সবাই জানেন এরা ঠুটো জগন্নাথ। যতদিন পরিবারতন্ত্র আর রক্তের উত্তরাধিকার চলবে, ততদিন তাঁরা মহাসচিব সেক্রেটারি জেনারেল বা সম্পাদক যে নামেই পরিচিত হন না কেন তাঁদের কথা দল ও দলের বাইরে গুরুত্বহীনই থেকে যাবে।
রক্তের উত্তরাধিকারে মেধা যদি কখনো সামনে আসে তবেই হয়তো এর পরিবর্তন সম্ভব। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতি বসু সিংহাসনে থাকলেও দল চালাতেন কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত। বাজপেয়ী বা মোদী থাকলেও দলের নেতা আদভানী । বিদেশে তো কথাই নাই। আমাদের দেশের বড় দলের মহাসচিবেরা দলে যেমন বাইরেও আসলে অসহায়। কারণ রাজনীতি এখন আর কোন নীতি মানেনা।