Published : 21 Dec 2017, 08:36 PM
আবার ১৬ ডিসেম্বর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে কোটি কোটি হৃদয়ে আনন্দ আর অশ্রুর বন্যা বইয়ে দিয়ে গেল, আবারও মনে পড়ল ৪৬ বছর আগের সেই উদ্দাম আনন্দ আর অশ্রুস্রোত।
"যে দেখেনি বুঝবে না সে এমন কেয়ামত ছিল,
কেয়ামতেই জাতির স্বাধীনতার নেয়ামত ছিল"।
কেমন হত যদি তখনকার আটকে পড়া পাকিস্তানিদেরকে বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দাস হিসেবে বিতরণ করত, মুক্তিযোদ্ধারা পুরুষদেরকে বিক্রি করে দিত আর নারীদেরকে যৌনদাসী হিসেবে রেখে দিত, বলত – 'আল্লাহ বলেছেন?' কি হয় যদি কোনো দেশে বিজয়ী সরকার পরাজিত দেশের নারী পুরুষকে দাস-দাসী বানিয়ে বিজয়ী সৈন্যদের মধ্যে বিতরণ করে? তারা দাসীদেরকে ইচ্ছেমতো বিছানায় নিয়ে যায়, বাজারে বিক্রি করে বা বন্ধুদেরকে 'উপহার' দেয়?
চিরকাল ইসলাম বিদ্বেষীরা (যাদের চোখে ইসলাম মুসলিমের সব কিছুই খারাপ) ও ইসলামের সমালোচনাকারীরা (যারা অনেক পড়াশোনা করে দলিলের ভিত্তিতে ভদ্রভাবে ইসলাম-মুসলিমের সমালোচনা করেন) অভিযোগ করে এসেছে, ইসলাম যদি শান্তির ধর্মই হয় তবে দাসপ্রথা উচ্ছেদ করল না কেন। অভিযোগটা যৌক্তিক।
বলাই বাহুল্য মাত্র দু'আড়াইশ বছর আগেও পশ্চিমা অনেক দেশ আইন করে এটা বন্ধ করার আগে এ বর্বর প্রথা চালু ছিল, এমনকি গির্জাগুলো পর্যন্ত দাস-ব্যবসা করত। অথচ কোরান সেই ১৪০০ বছর আগেই দাসপ্রথা শেকড় থেকে উচ্ছেদ করেছিল। পরে মুসলিম রাজারা ইসলামের নামেই নানারকম শরিয়া আইন ও হাদিস বানিয়ে ধূর্তভাবে দাসপ্রথাকে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই দুটো পদ্ধতিই দেখব আমরা এখন।
নবীজীর (স) পর বহু শতাব্দী ধরে বহু দেশ বিজয়ের ফলে মুসলমানরা অসংখ্য দাস-দাসীর মালিক হয়েছিল। মাত্র সাতজন সাহাবী মুক্ত করেছিলেন ৩৯,২৫৯ জন দাস-দাসীকে (সূত্র ৪)। হাকিম বিন হাজাম একাই মুক্ত করেছিলেন ২০০ জনকে (সূত্র ৫)। কিন্তু এই শতাব্দী-প্রাচীন কুপ্রথাকে কোরান হঠাৎ একদিন বিপ্লব করে উচ্ছেদ করলে ভেঙে পড়ত ফ্রি-শ্রম ভিত্তিক অর্থনীতি, জনগণ হয়ে পড়ত বিভ্রান্ত আর অসংখ্য দাস-দাসী হয়ে পড়ত নিরাশ্রয় অন্নহীন। কারণ জনগণ যদি মনের দিক থেকে তৈরি না হয় তবে যে কোনো ভাল জিনিসও জোর করে চাপিয়ে দিলে ফল খারাপ হতে বাধ্য। সে-জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিপ্লবের চেয়ে বিবর্তনই ভাল, অতীত-বর্তমানে এর বহু উদাহরণ আছে।
দাসদের ওপরে অনিয়ন্ত্রিত অত্যাচার হত ইসলাম আসার আগে। যেহেতু যুদ্ধবন্দিনীরা ছিল দাসী, তাই এদের সাথে শোয়া বিজয়ী মুসলিম-সৈন্যদের জন্য প্রথম দিকে জায়েজ ছিল (সূত্র ২২, ২৬, ২৯)। (ড: আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার, আমীর আলি, হারুন ইয়াহিয়া, ড: এডিপ ইউকসেল প্রমুখ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য দাবি করেন, দাসীর সাথে শোয়ার ব্যাপারটা বুঝবার ও অনুবাদের গোলমাল, কোরান কখনো একে অনুমতি দেয়নি। কিন্তু উনারা মেইনস্ট্রিম নন)।
যাই হোক, যুদ্ধবন্দিনীদের দূর দেশে পাঠিয়ে দাসের হাটে বিক্রিও করা হত (সূত্র ২৩)। কোরান (ক) প্রথমে দাসদের সাথে দুর্ব্যবহার করা বন্ধ করেছে। তারপরে (খ) কিছু অধিকার দিয়ে জনগণের মন-মানসে দাসদের 'মানুষ' ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে, তারপরে (গ) তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছে এবং সবশেষে (ঘ) দাসপ্রথার শেকড় কেটে দিয়ে পুরো উচ্ছেদের বিধান দিয়েছে।
কোরান যদি দাসপ্রথার পক্ষে থাকত তবে দাসের ওপর শতাব্দী প্রাচীন অনিয়ন্ত্রিত অত্যাচার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকত।কিন্তু আমরা দাসপ্রথার বিরুদ্ধে এক উদ্বিগ্ন কোরানকে দেখতে পাই যে কিনা কারণে হোক অকারণে হোক, যুক্তিতে হোক বাহানায় হোক, যেসব ব্যাপারের সাথে দাসপ্রথার কোনোই সম্পর্ক নেই সেগুলোকেও প্রয়োগ করেছে দাসমুক্তির জন্য। যেমন:
১। সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হলে দাস-দাসীদের মুক্তি দাও (সূত্র ১১)।
২। রমজানে রোজা না রাখলে বা রোজা রাখার প্রতিজ্ঞা ভাঙলে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাস-দাসীদের মুক্তি দাও (সূত্র ২)।
৩। রোজা অবস্থায় হঠাৎ আল্লা-রসুলের প্রতি খারাপ কথা মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলে দাস-দাসী মুক্তি দাও (সূত্র ২৫)।
৪। জাকাতের পয়সা দিয়ে দাস-দাসী কিনে তাদের মুক্তি দিতে পারো (সূত্র ২৭)।
৫। কোনও গর্ভবতীকে আঘাত করে কেউ গর্ভপাত ঘটালে দাস-দাসী মুক্তি দিয়ে ক্ষতিপূরণের রায় দিতে পারে আদালত (সূত্র ৩)।
৬। ক্রীতদাসদের বলা হয়েছে 'ভাই', অর্থাৎ দাসীরা বোন। একই খাবার-পোশাক দিতে বলেছেন নবীজী(স), সাধ্যাতীত কাজ দিতে
নিষেধ করেছেন, আরো অনেক ভালো কথা আছে (সূত্র ১৫)।
৭। দাসীদের মুক্ত করে বিয়ে করার চাপও দিয়েছে ইসলাম, একেবারে দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলে উদ্বুদ্ধ করেছে (সূত্র ১৪, ১৮, ১৯)।
৮। মৃত্যুশয্যায় সাহাবীদের প্রতি দাসদের জন্য নবীজীর (স.) উৎকণ্ঠিত নির্দেশ অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী।
যদিও একটি ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মুসলিম দাসদেরই মুক্ত করার কথা বলেছে কোরান (সূত্র ৬), তবু সব মিলিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৪০০ বছর আগে এ এক অসাধারণ বিপ্লব। এতসব পদক্ষেপ নেবার পর গণমানসে যখন দাসদের ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে 'হুকুম পালনকারী পশু' থেকে 'হুকুম পালনকারী মানুষ'- এ উন্নীত হল তখন এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, দাসপ্রথার একেবারে শেকড়ে মরণাঘাত হানল কোরান।
কি সেই মরণাঘাত ? কোন সূরা, কোন আয়াত ? ইসলামের প্রথমদিকে মক্কার, না শেষের দিকে মদিনার আয়াত সেটা ?
এবারে আবেগবর্জিত হয়ে অংক করা যাক। ১৪০০ বছর আগের আরবভূমি – চারদিকে শুধু গোত্র আর গোত্র – পরস্পরের সাথে লড়াই ঝগড়া লেগেই আছে। কেউ স্বগোত্রের কাউকে হারাতে চায় না কারণ সদস্য সংখ্যাই গোত্রের শক্তি, তাই সাধারণভাবে স্বগোত্রের কাউকে দাস বানাবার সামাজিক সংস্কৃতিও নেই। দাসের একমাত্র উৎস যুদ্ধবন্দীরা। যুদ্ধবন্দী যদি না থাকে তাহলে দাসও থাকবে না। কোরান আঘাতটা হেনেছে সেখানেই – সূরা মুহম্মদ আয়াত ৪। সংশ্লিষ্ট অংশ:-
"…যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেঁধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও…।"
পরিষ্কার হুকুম, যুদ্ধবন্দীদেরকে মুক্তি দিতে হবে মুক্তিপণ নিয়ে বা না নিয়ে। ব্যাস, চ্যাপ্টার ক্লোজড। আয়াতটা মদীনায় অবতীর্ণ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরে ইসলামের এই মানবাধিকারকে সম্পূর্ণ উল্টে দেয়া হল। দাস-দাসীর ওপরে এমন অনেক হাদিস আছে যেগুলো ওপরে দেখানো মানবিক সুত্রগুলোর বিরোধী, স্বভাবতই সেগুলো স্বার্থের জন্য বানানো।
শরিয়া আইন বানানো হয়েছে – "যুদ্ধবন্দিনী হওয়া মাত্র নারীদের পূর্বের বিবাহ বাতিল হইবে" (সূত্র ঝ)। ওরা ওদের ধর্মমতে বিয়ে করেছে, তুমি তাদের বিয়ে বাতিল করার কে? মতলবটা পরিষ্কার, বন্দীনি ধর্ষণ। বিজয়ী সৈন্যেরা বলছে–"আমরা যুদ্ধের গণিমত হিসেবে প্রাপ্ত রমণীদের সাথে আজল (নারী-দেহের বাইরে বীর্যপাত) করিতাম (সূত্র ৭)। এমন হাদিসও আছে-কিছু সৈন্য বন্দিনীদের স্বামীদের সামনেই তাদের ধর্ষণ করত, কিছু সৈন্য "তাহা পছন্দ করিত না" ( সূত্র ৩২)। কিন্তু এ হাদিসটা ঠিক নয়, এর উল্টো হাদিস আছে সহি মুসলিমে।
অনুবাদ বিশেষে হাদিস নম্বরগুলোর কিছু ব্যত্যয় ঘটে। আমরা খেয়াল করিনা, শরীয়া আইন বানানো হয়েছে হাদিস সংকলনের আগে, সেজন্যই আমরা অন্যায় আইনগুলোর সমর্থনে 'জাল হাদিস' দেখতে পাই। যে হতভাগী দাসীগুলোর একই সাথে দুই, তিন, বা দশ-বারো জন মনিব ছিল, কিভাবে কাটত তাদের দিন-রাত ?
দু'একটা নয়, ছয় ছয়টা হাদিস এবং হানাফি আইন বলছে দাসীদের একসাথে কয়েকজন মনিবের প্রথা ছিল এবং মনিবদের অধিকার ছিল তাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ঐ দাসীদের সাথে শোয়ার (সূত্র ৯)। নবীজীর চোখের সামনে এ অনাচার হয়েছে তা আমরা বিশ্বাস করি না, এ-সব হাদিস পুরুষতন্ত্রের স্বার্থে পরে বানানো হয়েছে। কে জানে কত লক্ষ লক্ষ হতভাগিনীর জীবন শুধু এর-ওর-তার বিছানায় কেটেছে। একটা সূত্র দিচ্ছি, সহি বুখারী ভল্যুম ৩ হাদিস ৬৯৮, এটা আছে হাদিস ৬৯৭, ৬৯৯, ৭০১ ও ৭০২-তেও :-
"আল্লাহ'র নবী (দঃ) বলিয়াছেন যদি কেউ কোন এজমালি (যার অনেক মালিক আছে) দাস-দাসীকে নিজ অংশ থেকে মুক্ত করে এবং তাহার কাছে পুরো মুক্তি দেবার মত যথেষ্ট অর্থ থাকে তাহলে তাহার উচিত কোন ন্যায়পরায়ন লোক দ্বারা সেই দাস-দাসীর উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করা, এবং তাহার অংশীদারদের তাদের অংশের মূল্য দিয়া সেই দাস-দাসীকে মুক্ত করিয়া দেয়া। তাহা না হইলে সে শুধু সেই দাস-দাসীকে আংশিক মুক্ত করিল।" এর সাথে হানাফি আইনটা মিলিয়ে নিলে পরিষ্কার হবে :- "অংশীদার (মালিকগণ) পরস্পরের সম্মতিক্রমে ক্রীতদাসীকে দৈহিকভাবে উপভোগ করিতে পারিবে" (সূত্র ১)।
আশ্চর্য নয়, মুসলমানদের অমঙ্গল এসেছে তাদেরই আচরণ থেকেই (সূত্র ২৮)। এবারে আমরা দেখব সূরা মুহাম্মদ আয়াত ৪ লঙ্ঘন করে কি নির্মম নৃশংস পদ্ধতিতে দাসপ্রথাকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে:-
১. "দাসী (স্ত্রীর) গর্ভ থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সে মালিকের গোলাম হয়" (সূত্র ১০)। বিয়ে করা দাসীর বাচ্চা-ই যদি গোলাম হয় তবে বিয়ে না-করা দাসীর বাচ্চারা তো গোলাম হবেই। এতে দাসপ্রথা কখনোই বন্ধ হবে না।
২. ট্যাক্স দেয়া বড্ড কষ্ট, চিরকাল মানুষ এটা ফাঁকি দিতে চেয়েছে। আর ফাঁকির পদ্ধতিটা "হালাল" হলে তো কথাই নেই। দেখুন শরিয়া আইন :
"অন্যান্য সম্পত্তির ওপরে জাকাত থাকলেও ক্রীতদাস-সম্পত্তির ওপরে জাকাত নেই" (সূত্র ১২)। অর্থাৎ দাস-ব্যবসায়ে টাকা খাটানোকে উৎসাহিত করে দাসপ্রথাকে শক্তিশালী করা হলো।
৩. ক্রীতদাস যদি মালিক ও আল্লাহকে ঠিকমত মেনে চলে তাহলে তার দ্বিগুণ সওয়াব হবে (সূত্র ১৩ ও ১৪)। অর্থাৎ মালিককে একেবারে
আকাশে তুলে দাসের মনে আরও একটা শেকল পরানো হল, মালিক অত্যাচারী হলেও সে বিদ্রোহের কথা চিন্তাও করবেনা।
৪. এটা একটা মারাত্মক কথা। এবং মর্মান্তিক। যদি কোন দাস বা দাসী তার মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে যায় তবে ফিরে না আসা পর্যন্ত
তার কোন ইবাদত কবুল হবে না (সূত্র ২১)। এই নিয়মে দাসপ্রথাকে একেবারে চরম শক্তিশালী করে তোলা হল।
৫. এমনকি মুক্ত করে দেবার পরও দাস-দাসীরা প্রাক্তন মালিকের কাছে অদৃশ্য মালিকানায় বাঁধা থাকত, অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। করলে হুমকি ছিল তাদের কোনো ইবাদত কবুল হবে না – সূত্র ২০।
৬. মালিকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তা অবৈধ, সেটা ব্যভিচার হবে (সূত্র ৩৫)।
৭. যদিও দ্বিগুণ সওয়াবের কথা বলে দাসীদের মুক্ত করে বিয়ে করায় উদ্বুদ্ধ করেছে ইসলাম (সূত্র ১৪, ১৮, ১৯) কিন্তু পরে দেখা গেল, কারো কাছে স্বাধীন নারীকে বিয়ে করার পয়সা থাকলে দাসীকে বিয়ে করাকে (হানাফী মতে) মাকরূহ ও (শাফি' মতে) হারাম করা হয়েছে (সূত্র ৮)।
"যেমনভাবে দাস-দাসীদের মার, তেমনভাবে স্ত্রীদের মারবে না। তারপর (অর্থাৎ স্ত্রীদের মারার পর) রাতে তাদের সাথে শোবে"(সূত্র ২৪) এবং পরকীয়া ছাড়া স্ত্রী-প্রহারকে নবীজী (স) কখনো বৈধতা দেননি (সূত্র ৩৩ ও ৩৪), এসব হাদিস আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি যা তিনি স্ত্রীর ব্যাপারে সুস্পষ্ট বলেছেন, হুবহু উদ্ধৃতি:- "DO NOT BEAT THEM, AND DO NOT REVILE THEM" অর্থাৎ "তাহাদিগকে প্রহার করিবে না, এবং তাহাদিগকে অপমান-নিগ্রহ করিবে না" – সহি আবু দাউদ হাদিস ২১৩৯। হ্যাঁ, এই হলেন শান্তির দূত, হিংস্রতা মারপিটের তথাকথিত "নবী" নন। বৌ পিটিয়ে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে? তাও অনেক সময় বাচ্চাদের সামনে? লজ্জার কথা !
দাসীদের বিয়ে করাকে প্রথমে উৎসাহিত করা হলেও নবীজীর (স) পরে আইন হয়েছে:- "হজরত ইমাম শাফেয়ী ও অন্যান্য ইমামের মতে ইহুদী বা খ্রিস্টান দাসী বিয়ে করা সর্বাবস্থায় অবৈধ" (সূত্র ১৭)। (ইমামেরা লিখেছিলেন অল্প, তাঁদের পরে তাঁদের ছাত্রেরা ও ছাত্রদের ছাত্ররা ইমামদের নামে নিজেদের বহু আইন ঢুকিয়ে দিয়েছে – বিস্তারিত দেখুন আমার বই – "শরিয়া কি বলে, আমরা কি করি"-তে)।
মওলানা মওদুদি বলেছেন:- "ইসলামি আইন অনুসারে যুদ্ধবন্দির নিজের দেশ যদি মুক্তিপণ দেয় তবে বন্দিরা মুক্ত হইবে। বন্দি-বিনিময়ও চলিবে। এই দুই উপায় না থাকিলে যুদ্ধবন্দিরা দাস-এ পরিণত হইবে" (সূত্র ৩০)। তাঁর তাফহীমুল কুরআন বইতে সূরা নিসা আয়াত ২৪-এর ব্যাখ্যাতেও তিনি এসব বলেছেন, ওটাও ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
ড: জাকির নায়েকও কম যান না – ইসলামে দাসপ্রথা এবং বন্দিনী ধর্ষণের সমর্থনে তাঁর সবচেয়ে বড় যুক্তি হল ওই প্রথা আমেরিকার গুয়ান্তানামো বে' কারাগার থেকে অনেক ভালো। আপনারাই বলুন, এ কোনো যুক্তি হল? এখানে লিংক দেয়া নিষেধ, তবে বক্তৃতাটা ইউটিউবে পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি অন্তত: একটা দরকারী কথা বলেছেন যা মওদুদী বা ডঃ ফওজান বলেন নি; তা হল – ওসব অতীতের ব্যাপার, এখন আর ওগুলো প্রয়োগ করা যায় না। আসলে নবীজীর (স) পরে মুসলিম ক্ষমতাশালীদের কোরান-বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ আছে মওদুদী- ইমাম গাজ্জালী সহ অনেক দলিলে – এবং সাহাবীর এই কথায়:- "হে ভাতিজা ! তুমি তো অবগত নও রসুলুল্লাহ (দঃ)-এর ইহকাল ত্যাগের পর আমরা কি কি বিপরীত কার্য করিয়াছি"- সূত্র ৩১? (বইটা হারিয়ে গেছে, কেউ পৃষ্ঠাটা স্ক্যান পাঠালে ভাল হয়)।
মর্মবাণী : কোরানের কিছু হুকুম শুধু মুসলিমের জন্য, কিছু সারা মানবজাতির জন্য, কিছু পুরুষের ও কিছু নারীর জন্য, কিছু সেই সমাজের জন্য ও কিছু চিরকালের। পরিস্থিতির পরিবর্তন হবার ফলে কিছু হুকুম নবীজীর (স) জীবদ্দশাতেই পরিবর্তন করা হয়েছে – প্রিন্সিপল্স্ অব ইসলামিক জুরিস্প্রুডেন্স − ডঃ হাশিম কামালী পৃঃ ৩২৫ ইত্যাদি। সামাজিক-পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি কোরানে যথেষ্ঠই আছে, সমস্যা হয় যখন আমরা কোরানের হুকুমগুলোর গতিময়তা উপেক্ষা করে সেই সমাজের তাৎক্ষণিক হুকুমকে শ্বাশ্বত মনে করে বর্তমানে প্রয়োগ করি।
নিবন্ধ সূত্র:-
১। চ-এর পৃষ্ঠা ২৩১।
২। খ-এর আইন নং ১৬৬৯, ১৬৭৪, ১৬৮১, ইত্যাদি।
৩। গ-এর হাদিস নং ২৬৩০ এবং ২৬৩১।
৪। ক-এর পৃষ্ঠা ১২৫৭।
৫। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৭১৫।
৬। সুরা নিসা, ৯২।
৭। গ-এর হাদিস নং ২৪৩৪ ও ২৪৩৫ ; ঘ-এর ৩য় খণ্ড, হাদিস ৭১৮ ও অন্যান্য।
৮। ক-এর পৃষ্ঠা ২৪২।
৯। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৬৯৭, ৬৯৮, ৬৯৯, ৭০১, ৭০২, ৭০৩ ও ৭০৪।
১০। ক-এর পৃষ্ঠা ২৪২।
১১। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৬৯৫ ও ৬৯৬।
১২। ঘ-এর ভল্যুম ২, হাদিস নং ৫৪২ ও ৫৪৩ এবং গ-এর হাদিস নং ১১০৮।
১৩। গ-এর হাদিস নং ২৩৮৮।
১৪। ঘ-এর ভল্যুম ৪, হাদিস নং ২৫৫।
১৫। গ-এর হাদিস নং ২৩৮৯ থেকে ২৩৯১-এর অংশ ও ২৬১৭।
১৬। সৌদি ইনফরমেশন এজেন্সি, ইণ্ডিপেণ্ডেণ্ট সৌদি নিউজ
১৭। ক-এর পৃষ্ঠা ২৪২।
১৮। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৭২০, ভল্যুম ৭, হাদিস নং ২০।
১৯। গ-এর হাদিস নং ২৩৮৬।
২০। ঘ-এর ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৯৪ ও ভল্যুম ৪, হাদিস নং ৪০৪।
২১। ছ-এর পৃষ্ঠা ৩৭৭।
২২। সুরা আল মুমিনুন, আয়াত ৫, ৬, ৭।
২৩। জ-এর ভল্যুম ৩, পৃষ্ঠা ১১২।
২৪। গ-এর হাদিস নং ২৪৬৮।
২৫। খ-এর আইন নং ১৬৭৫।
২৬। সুরা আল্-আহযাব, আয়াত ৫২।
২৭। খ-এর আইন নং ১৯৩৩ (৫)।
২৮। ক-এর পৃষ্ঠা ২৬৭।
২৯। সুরা আল্ মা'আরিজ, আয়াত ২৯, ৩০, ৩১।
৩০। মুনির কমিশনের সামনে মওদুদির বক্তব্য, পৃষ্ঠা ২২৫, রিপোর্টটা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।
৩১। ঞ-এর পৃষ্ঠা ২৯৭, হাদিস নং ১৫০৫।
৩২। ট-এর হাদিস নং ১১-এর ২১৫০।
৩৩। ঠ-এর পৃষ্ঠা ৮৫২, ধারা ১৩২২ – বিশ্লেষণ।
৩৪। ড-এর পৃষ্ঠা ১৭১।
৩৫। সহি আবু দাউদ, হাদিস ২০৭৩।
(ক) বাংলায় কোরাণ শরীফের অনুবাদ – মওলানা মুহিউদ্দীন খান।
(খ) ইসলামী আইন – আয়াতুল্লাহ আল্ উজামা সৈয়দ আলী আল্ হুসায়নী আল্ সীস্তানী।
(গ) বাংলায় সহি বোখারীর সঙ্কলন – মুহম্মদ আবদুল করিম খান।
(ঘ) সহি বোখারীর ইংরেজী অনুবাদ – ডঃ মুহম্মদ মহসীন খান, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ঙ) হাদিস সঙ্কলনের ইতিহাস – মওলানা মুহম্মদ আবদুর রহীম।
(চ) হানাফি আইন হেদায়া – ইংল্যাণ্ডের ব্যারিস্টারী স্কুলে পড়ানো হয়।
(ছ) রুহুল কোরাণ – মওলানা আবদুদ দাইয়ান।
(জ) "ক্যাসাসুল আম্বিয়া"র অনুবাদ – মওলানা বশিরুদ্দীন ও মওলানা বদিউল আলম।
(ঝ) ঊমদাত আল্ সালিক – ইমাম শাফি'র আইন নং o.৯.১৩, পৃঃ ৬০৪।
(ঞ) সহি বোখারীর বাংলা অনুবাদ – মওলানা আজিজুল হক (বইটা আপাতত: কাছে নেই)।
(ট) সহি সুনান আবু দাউদ – ইণ্টারনেট সংস্করণ।
(ঠ) বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ৩য় খণ্ড।
(ড) রিয়াদুস্ সালেহীন – আল্লামা ইমাম নববী।