Published : 17 Jul 2016, 05:03 PM
গত কয়েকদিন ধরে ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর সন্ত্রাসবাদীরা অশান্ত করে তুলেছে। এর মোকাবিলায় দিল্লিও চুপ করে বসে নেই। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে সীমান্তে বড় ধরনের গোলমালের আশঙ্কা করছে সাউথ ব্লক। তাই সীমান্তে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে দিল্লির নিরাপত্তাও। তবে কি আরেকটা যুদ্ধ আসন্ন? না, যুদ্ধ কেউ চায় না।
১৯৭১ সালে ভারতের হাতে মার খাওয়ার পর থেকে পাকিস্তান কোনো না কোনো অজুহাতে সন্ত্রাসবাদীদের কাজে লাগিয়ে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করেছে। তাই পরিস্থিতির জটিলতা দেখে আফ্রিকা সফর কাটছাঁট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি ফিরে মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। মোদির নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লাহ এবং বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে আলোচনা করেন। এই তিনটি দলই কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকার কথা বলে উপত্যকায় নিজেদের দলকেও সেই নির্দেশ দিয়েছে।
অপরদিকে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে ভারত যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার পাশেই আছে আমেরিকা। পাকিস্তানের যাবতীয় অপকর্ম ঠেকানোর জন্য রাজ্য সরকারগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে।
কাশ্মীর নিয়ে ধাপে ধাপে সুর চড়াল ভারতও। সার্ক গোষ্ঠীর বৈঠকের আগে জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যে হাওয়া দেওয়ার নীতি নিয়েছে, তা বুঝেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল স্থির করতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আগেই কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এর পর কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ এবং সিপিআই(এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এদিকে, কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা অধিকাংশই তরুণ। আহতের সংখ্যা কয়েক শ। পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে পুলিশ যেভাবে দমনপীড়ন চালাচ্ছে তা দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। প্রস্তাবিত মার্কিন সফল বাতিল করে দিয়েছেন রাজনাথ সিং।
কাশ্মীরের সর্বশেষ অবস্থা এবং কোন পরিস্থিতিতে বুরহানের মৃত্যু হয়েছে তা বুঝিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য তৈরি করার চেষ্টা করছেন রাজনাথ সিং। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে সবকটি রাজনৈতিক দলই। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর পরামর্শ: অযথা দমনপীড়নের রাস্তায় না গিয়ে এখনই বিক্ষোভকারীদের আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করুক ভারত।
ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দিতে বিদেশমন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে, বুরহান প্রসঙ্গে একের পর এক বিবৃতি দেখেই বোঝা যাচ্ছে পাকিস্তান এখনও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো উচিত নয়। কেনিয়া থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও পাকিস্তানের নাম না করে বলেছেন, যারা জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়, তাদের নিয়ে রাজনীতি করে তাদেরও নিন্দা করা উচিত। বস্তুত প্রথমে কাশ্মীর ইস্যুকে জটিল করে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে পাকিস্তান। শুরুতে বিদেশমন্ত্রক থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়। তারপর বিবৃতি দেন খোদ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তৃতীয় পর্যায়ে ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান। এর পরেই নড়েচড়ে বসে ভারতীয় প্রশাসন।
হিজবুল মুজাহিদিন নেতা বুরহানের মৃত্যুর পর কাশ্মীরের নানা প্রান্তে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। শ্রীনগরের নওহাট্টা এলাকায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছে ১২ জন জওয়ান। বিজবেহরা এলাকায় আবার জওয়ানদের বিরুদ্ধেই হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কুলগামের বেহিবাগে ধৃত বিক্ষোভকারীদের মুক্তির দাবিতে এক পুলিশ অফিসারকে পণবন্দি করে জনতা।
পুরো ঘটনাটায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে প্রথম থেকেই জানাচ্ছিলেন গোয়েন্দা অফিসাররা। এরই মধ্যে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে একটি সভা করেন লস্কর-এ-তৈয়বা প্রধান হাফিজ সাঈদ ও হিজবুল মুজাহিদিন নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিন। সেখানে হাফিজ বলেছেন, এক বুরহানের মৃত্যুতে অনেক বুরহান জন্ম নেবে।
তবে এক জঙ্গি নেতার মৃত্যুতে কূটনৈতিক স্তরে এই পর্যায়ের সক্রিয়তা বেশ নজিরবিহীন ঘটনা। বিদেশমন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্য বাড়িয়ে শান্তি প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে পাকিস্তানে নিজের শত্রুর সংখ্যা বাড়িয়েছেন নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও মৌলবাদীরা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানের 'ভারতনীতি'তে নাক গলাতে শুরু করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান রাহিল শরিফও।
সব মিলিয়েই পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকায়।