Published : 21 Mar 2011, 10:21 PM
এদেশে যতগুলো রাজনৈতিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার মধ্যে কর্নেল আবু তাহের হত্যাকাণ্ডটি উল্লেখযোগ্যভাবে বিতর্কিত, সমালোচিত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকর করা, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায়, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করার মধ্য দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জাতিকে অসীম তমসার মধ্যে বিন্দু পরিমাণ হলেও জ্যোতির্ময়তার দিকে নিয়ে যেতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ পথপরিক্রমা নিশ্চয়ই কঠিন । গোপন সামরিক আদালতে অসাংবিধানিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে হত্যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অশুভ প্রভাব ফেলে তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক শরীরে অনেক স্থায়ী দূরারোগ্য কর্কট রোগের জন্ম হয়। দেশকে অনেক বিপন্নতার মুখোমুখি হতে হয়। তাহেরের গোপন সামরিক আদালতের বিচারের বিরুদ্ধে রীটের চূড়ান্ত শুনানি এখনো শেষ হয়নি অথচ এর মধ্যেই বিচারাধীন বিষয়ে দোষী দায়ীদের পক্ষ নিয়ে নানাপ্রকারের মন্তব্য প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন অনেকে। আগামী মঙ্গলবার রীট আবেদনের উপর রায় দেয়ার তারিখ।
তৎকালীন হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইষ্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ পত্রিকার দক্ষিন এশিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজকে তাহেরের গোপন বিচার প্রকাশ করার দায়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিলো। তিনি আদালতে গত ১৪ মার্চে হাইকোর্টে এসে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আদালতের তলব মতো হাজির হতে না পারলেও লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম শিশু। হাজির হন সেসময়কার ঢাকার জেলা প্রশাসক এস এম শওকত আলী। এখন বিচার অনুষ্ঠানে সবচাইতে বেশি দরকার ঘটনাটির ভেতরের ঘটনা তীক্ষ্ম অনুসন্ধান করা এবং ইতিহাস ও সমাজ পরিবর্তনের ধারাকে মাথায় রেখে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া। কারণ রাষ্ট্রদ্রোহিতা যদি বলি তাহলে তো সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানও করেছিলেন একাত্তর সালে। পাকিস্তানিরা পেলে তো জিয়াউর রহমানকে খুব সম্ভবত হত্যা করতো। সমাজবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী রাষ্ট্র শাসন চলে শ্রেনী স্বার্থে । ব্যক্তির ভূমিকা সেখানে মূখ্য নয়, গৌণ। রাষ্ট্রের মূর্তরূপ হচ্ছে তার আইন আদালত, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলাতন্ত্র, কারাগার। এগুলোর চেহারা কর্তাব্যক্তি-ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছামাফিক। তাই সাদা চোখে বাইরে থেকে সামরিক আদালতের বিচারকে দেখলে তা একদেশদর্শী বা একচোখা বিচার হতে বাধ্য। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তাহের রাজনীতিতে আসার আগে সেনাবাহিনীকে উৎপাদনশীল শক্তিতে পরিণত করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। সেটা সম্ভব হয়নি বলে তখন তিনি আর এক গোপন বাহিনীতে যোগ দেন সেটা হচ্ছে গণ বাহিনী। আর সাত নভেম্বরে সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানে এই বাহিনীর বিরাট ভূমিকা ছিল। ইতিহাস বলে জিয়াউর রহমান তাঁর প্রাণরক্ষার জন্য কর্নেল তাহেরের কাছে ঋণী ছিলেন, কৃতজ্ঞও ছিলেন। কিন্তু তিনিই যে তাহেরের প্রাণদণ্ডের আয়োজন করেছিলেন এটাও ঠিক। সেটি ছিল অনিবার্য বাস্তবতা। এ কারণে যে তখন জিয়া কোন ব্যক্তি নন। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা। চুরি, ডাকাতি রাষ্ট্র ক্ষমা করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রদ্রোহিতাকে কখনোই নয়। তাই দল মত গোষ্ঠীর চাপে অথবা প্রভাবে ঢালাওভাবে ওই ঐতিহাসিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত যেন কখনোই না নেয়া হয়। গোপন বিচারে কার কার কতটুকু অংশগ্রহণ ছিল, কোন কোন সেনা কর্মকর্তার কী কী ভূমিকা ছিল তা সবিস্তার বিশ্লেষণ করতে হবে। জানা গেছে, মামলাটির, ওই বিচারের, তেমন কোন দাপ্তরিক নথিপত্র নেই। বিষয়টির উপরে চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে। আগামি মঙ্গলবার রায়ের জন্য দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
কর্নেল আবু তাহের বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ চেয়েছিলেন। সারা দুনিয়ায়ই এ সকল ব্যক্তির সমস্ত শুভ কর্মের বিরোধিতা করে শোষক শ্রেণী। নির্যাতিত হতে হয়, প্রাণ দিতে হয় শোষক শ্রেণীর হাতে এ সকল স্বপ্নতাড়িত মানুষদের। আর বিচারের নাম করে চূড়ান্ত অবিচার, জবরদস্তির মাধ্যমে বিচারকে গ্রাস করা ইতিহাসে কম নেই। তাহেরের বিচারে বিচার ছিল না, সেটি ছিল প্রহসনের বিচার। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাইয়ের গোপন সামরিক ট্রাইবুনালের প্রহসনমূলক বিচারের রায়ে ২১ জুলাইয়ে ফাঁসির দড়িতে জীবন দিতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনা কর্নেল আবু তাহের বীরোত্তমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের সিপাহী ও প্রগতিশীল গণতন্ত্রমনা অফিসারবৃন্দ রাজপথে জনতার কাতারে সামিল হয়ে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিলেন। অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্য বাস্তবায়িত হতে পারেনি। কারণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতরা অভ্যুত্থানী সিপাহী জনতার পক্ষ ত্যাগ করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় অনুচরদের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। ওই ৭ নভেম্বরকে বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। বিএনপির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, এই দিনে সিপাহি- জনতার উত্থানের মধ্য দিয়ে একটি বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল। ফলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায়। অথচ ৭ নভেম্বরের জন্য সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের বীরোত্তম ও তাঁর রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে প্রহসনের বিচারের মুখোমুখি করে তৎকালীন সামরিক সরকার। ফলে ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান তার ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি শুধু নয়, অভ্যুত্থানের নায়ক কর্নেল আবু তাহেরকে গোপন সামরিক ট্রাইবুনালের প্রহসনমূলক বিচারের রায় অনুযায়ী ফাঁসির দড়িতে জীবন দিতে হয়েছিল। নীতির প্রশ্নে অনমনীয়, দেশাত্মবোধের প্রশ্নে দৃঢ় এই বিপ্লবী প্রতিক্রিয়া ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আপোষ না করে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন। অনন্য আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন । নায়ককে প্রতিনায়ক, দেশপ্রেমিককে দেশদ্রোহী, ন্যায়কে অন্যায় বলে চালিয়ে তাহেরকে কোন আত্মপক্ষের সুযোগ না দিয়ে একপ্রকার হত্যা করা হয়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন যে আইনে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল অথচ ওই অপরাধে আইনের বিধানে কোন মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল না। দণ্ড বিধির ১২১(ক)ধারা এবং ১৯৭৫ সালের ১ নম্বর সামরিক আইনের ১৩ নম্বর বিধি মোতাবেক অভিযুক্তদের বিচার করা হয়। শুধু দেশীয় আইন নয়, আন্তর্জাতিক আইনও লঙ্ঘন করেছিল তৎকালীন সরকার। জেনেভা কনভেশন অনুযায়ী কোন পঙ্গু লোককে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান নেই। বাংলাদেশ জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সামরিক ওই আদালত। কর্নেল তাহের ও তাঁর সহযোদ্ধাদের মামলা শুনানির অপর্যাপ্ত এবং শর্তাধীন সুযোগ দেয়া হলেও প্রত্যেক আইনজীবীকে সরকার লিখিত চুক্তিতে সই করতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ওই লিখিত চুক্তিতে বলা হয়েছিল যদি কোন কৌশুলি মামলার তিন বছর পর্যন্ত এ আদালতের বিচারের ব্যাপরে আদালতের বাইরে কোন তথ্য প্রকাশ করে তবে তাদেরকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে। ফলশ্রুতিতে ওই বিশেষ আদালতে কী হচ্ছিলো তা বাইরের কেউ জানতে পারেননি। দেশের গণমাধ্যমগুলোয় কড়া ও উচ্চমাত্রার নিষেধ আরাপ করা হয়। এর মধ্যেই একমাত্র সাংবাদিক লিফশুলজ স্বল্প পরিসরে কিছু তথ্য বাইরে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হন।
তাহের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র চেয়েছিলেন। যদিও তাঁর আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি রণনীতি রণকৌশল নিয়ে পরিষ্কার কোন বক্তব্য, লেখা পাওয়া যায় না। নবজাতক একটি শিশু রাষ্ট্রে বিপ্লবের স্তর কী, বিপ্লবের শত্রু মিত্র কারা, দেশের উৎপাদন পদ্ধতি কী সে সম্পর্কে তাহেরের পরিষ্কার ধারণা ছিল বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু তার টার্গেট ছিল একটি বিপ্লবী পিপলস আর্মি দল গঠন যারা মেহনতী মানুষের বন্ধু হবেন। তাহেরের স্বপ্ন ছিল একটি উন্নত সমাজ যেখানে শোষন থাকবে না। থাকবে উন্নত সংস্কৃতি। এ স্বপ্ন কার্ল মার্কস দেখেছিলেন । দেখেছিলেন এঙ্গেলস, লেনিন, মাও সেতুং। আপাতত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর সাম্যবাদী সমাজ। যেখানে মানবিক সাম্যের কারণে রাষ্ট্র অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। তাহেরের বিপ্লবী কর্মসূচীর ভূমিকায় বলা হয়েছিল 'শুধুমাত্র নেতৃত্বের পরিবর্তনের জন্য আমাদের এই বিপ্লব নয়। আমরা শোষিত শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করছি।…….আমরা বিপ্লব করছি দেশের জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য।' এসব তার চিন্তা আদর্শে থাকলেও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য জনগনের মধ্যে আয়োজন ছিল না। তাদের প্রস্তুত না করেই বিপ্লবের ডাক দেয়া হয়েছিল। সেজন্য গণবাহিনীর বিরাট একটি অংশ স্বপ্নের জন্য জীবন বিসর্জন দিলেও পরে অনেক হঠকারী কাজে অংশ নেয়।
সিরাজ শিকদারেরও স্বপ্ন ছিল শোষনহীন সমাজের। কিন্তু তার দল সর্বহারা পার্টির রাজনীতিতে ব্যাপক জনসমর্থন এবং পরিস্থিতির উপযুক্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণের অভাব ছিল, মুক্তিযুদ্ধে শত্রু মিত্র নির্ধারণ, রণকৌশল গ্রহণে সমস্যার কারণে তাহের সেখানে যোগ দেননি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে থাকেন।
এতদিন সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনীর অস্তিত্ব, সংশোধনীর বৈধতা থাকায় তাহেরের বিরুদ্ধে সংঘঠিত অপকর্মের কোন বিচার চাওয়া যায়নি। ওই ষড়যন্ত্রমূলক বিচার ও রায়ের বিরুদ্ধে কেবল সমালোচনা, রাজনৈতিক পক্ষ বিপক্ষের বক্তব্য, এ নিয়ে দিবস উদযাপন, স্মারক বক্তৃতার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কোন মূল্যায়ন হয়নি। তাহের হত্যা বিশেষ দিবসগুলোতে গণমাধ্যমে আলোচনায়, প্রতিবেদনে স্থান পেলেও বিভিন্ন সভা সেমিনারে স্বল্প সংখ্যক বুদ্ধিজীবীরা, সেসময় সামরিক বাহিনীতে শীর্ষ পদের কেউ কেউ অথবা জাসদ এবং আরো দুই একটি বামপন্থী দল ছাড়া অপর কোন রাজনৈতিক দল কিন্তু তাহেরের গোপন বিচার নিয়ে কথা বলেননি। আর ঘটনার পরপর সিপিবি, ন্যাপ, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ, প্রচারপত্র, কর্মসূচী, কোন বিবৃতি ছিল কিনা তার সাক্ষ্য প্রমাণও খুব বেশি একটা পাওয়া যায় না । লরেন্স লিফসুলজের ভাষ্য অনুযায়ী জেনারেল আবুল মঞ্জুর অবশ্য ওই গোপন বিচারের বিরোধিতা করেছিলেন।
রীট আবেদন গত ২৩ অগাষ্ট সামরিক আদালতের ওই প্রহসনের বিচারের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে কর্নেল তাহেরের সহোদর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের এবং ওই বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আবু তাহেরের অপর ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন দাখিল করেন। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরি ও শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ সেটি শুনছেন। সেদিনই আদালত ওই গোপন বিচারের নথি তলব করে। স্বরাষ্ট্র ,প্রতিরক্ষা ,আইন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব,কারা মহাপরিদর্শক, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্বাবধায়কসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহের রুল দেন। তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে এই রুল দেয়া হয়। পরে ওই সময় গোপন বিচারের মুখোমুখি অপর ছয় ব্যক্তি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, নেতা রবিউল আলম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার,করপোরাল শামসুল হক ও আবদুল মজিদকে আদালতে ওই বিচারের প্রতিবিধান ও হারানো সন্মান ফিরে পাওয়ার জন্য রিট করেন।
আবেদন শুনানিও আইনের ব্যাখ্যার জন্য দেশের ৯ জন শীর্ষ আইনজীবীকে এমিক্যাস কিউরি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন ও ব্যরিষ্টার আমির উল ইসলাম আদালতে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। শুনানিকালে হাইকোর্টে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে নূরুল ইসলাম শিশু বলেছেন ওই বিচারের পরিকল্পনা ছিল জিয়াউর রহমান, আব্দুস সাত্তার এবং আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের। তিনি দাবি করেন এ বিচারের পক্ষে তিনি ছিলেন না।
যদিও আদালত রিটের বিষয় নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত দেননি। কিন্তু এই সরকার পরিবর্তন হলে আদালতের সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন কেমন থাকবে সেটি একটি ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।যদিও গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে সবারই বিষয়টি মেনে নেয়া উচিৎ। আর এ সরকার আমলেই যেহেতু এ বিচার শুরু হলো তাহলে অপর বিপ্লবী সিরাজ শিকদার, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার বিচার কেন শুরু হবে না সে প্রশ্নও থেকে যায়। তাদের বিয়োগান্ত পরিণতি নিয়ে কি সাংবিধানিক আদালতে কোন আবেদন করা যায় না?
এর আগে চারদলীয় সরকারের আমলে জেল হত্যা মামলার বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে রাষ্ট্রপক্ষে সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীরা সঠিকভাবে মামলা পরিচালনার সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবরে জেলহত্যা মামলার রায় দেয়া হয়। এ মামলার ২০ আসামির মধ্যে ৫ জনকেই খালাস দেয়া হয়। জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্য, মামলার সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী, বিভিন্ন মহল এ রায়কে অসঙ্গতিপূর্ন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন। এ মামলাটিও সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে পড়ে আছে। তা হলে দেখা যায় আদালতের উপর ক্ষমতাসীন রাজনীতির প্রভাব থাকে। তাহেরের গোপন বিচারের রিট আবেদনের রায়ে যেন রাজনৈতিক কোন প্রভাব না থাকে ।
তাহেরের বিরুদ্ধে গোপন বিচারের ব্যাপারে যদি আদালতের কোন স্পষ্ট নিরপেক্ষ ঘোষণা না পাওয়া যায় তবে আমাদের এই ভূখন্ডের ভবিষ্যত আকাশে আরো কালো মেঘ পুঞ্জিভূত হতে পারে।