গর্ভপাত আইনে বৈবাহিক ধর্ষণের একটি ধারাও যুক্ত করার আদেশ এসেছে এই রায়ে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের ধর্ষণের বিচারের পথ তৈরি করে দেবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
Published : 29 Sep 2022, 04:00 PM
সেইসঙ্গে গর্ভপাত আইনে বৈবাহিক ধর্ষণের একটি ধারা যুক্ত করার আদেশ এসেছে এই রায়ে, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের ধর্ষণের বিচারের পথ তৈরি করে দেবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
নারী অধিকারকর্মীরা এ রায়কে বর্ণনা করেছেন ‘যুগান্তকারী’ হিসাবে। এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন আইন প্রণেতারাও।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, এএস বোপান্না ও জেবি পারদিওয়ালার বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন।
রায়ে আদালত বলছে, একজন নারীর বৈবাহিক অবস্থা তাকে গর্ভপাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোনো কারণ হতে পারে না। কোনো অবিবাহিত নারীও চাইলে তার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের অবসান ঘটাতে পারবেন ২৪ সপ্তাহের মধ্যে।
“যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হন বিবাহিত নারীরাও। ধর্ষণের সাধারণ মানে, কারও সম্মতি ছাড়া তার সঙ্গে যৌন সংসর্গ; জোরপূর্বক এই ধরনের যৌন সম্পর্ক বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ঘটে। তাই বৈবাহিক অবস্থা কোনো নারীর গর্ভপাতের অধিকার বঞ্চিত করার কোনো ভিত্তি হতে পারে না।”
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিল সুপ্রিম কোর্ট
গর্ভপাত: বিষন্ন যুগলকে সবেতন ছুটি দেবে নিউ জিল্যান্ড
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত বৈধ করে আইন পাস
রায়ে বলা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কারও গর্ভধারণ হলে তার শরীর ও মনের অবস্থা কেউ ‘বুঝতে পারে না’। গর্ভপাতের জৈবিক প্রক্রিয়া নারীর শরীর গঠন করে। তাই পুরোটা সময় গর্ভধারণ করা কিংবা গর্ভপাত ঘটানো নারীর ইচ্ছা বা তার সিদ্ধান্তের বিষয়।
ভারতের ২৫ বছর বয়সী অবিবাহিত এক নারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছে আদালত। ওই নারী দিল্লি হাই কোর্টে এক আবেদনে বলেছিলেন, অবিবাহিত হওয়ায় তিনি ভারতের বিদ্যমান আইনে গর্ভপাত ঘটাতে পারছেন না, যদিও তিনি পারস্পরিক সম্মতিতে যৌন সম্পর্কের ফলেই গর্ভধারণ করেছেন।
ওই নারী জানান, তিনি ২৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এবং তার সঙ্গী এখন তাকে বিয়ে করতে চাইছে না। কৃষক বাবা-মায়ের সংসারে পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। সন্তান লালন-পালনের মতো অবস্থা তার নেই।
এরপর গত ২১ জুলাই আদালত মেডিকেল বোর্ডের সম্মতিক্রমে ওই নারীর গর্ভের ভ্রুণ অপসারণের অনুমতি দেয়।
ওই সময় আদালতের বেঞ্চ বলে, ২০২১ সালে সংশোধিত গর্ভপাত আইনের ধারায় ‘স্বামীর’ বদলে ‘পার্টনার বা সঙ্গী’ যুক্ত করা হয়েছে। সেটা বোঝায় যে, পার্লামেন্ট গর্ভপাতের পরিস্থিতিকে শুধু একটি বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়নি।
ভারতে ১৯৭১ সাল থেকেই গর্ভপাত আইনগত ভাবে বৈধ। কিন্তু ছেলে সন্তানই হোক এমন প্রত্যাশা বেশি সেখানে। এমন লিঙ্গ বৈষ্যমের কারণে কন্যা ভ্রুণ হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়াতে বছরের পর বছর ধরে নারীর গর্ভপাতকে ঘিরে কঠোর নিয়ম রক্ষা করা হচ্ছিল।
গত বছর মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যাক্টে (এমটিপি) সংশোধনী এনেছিল ভারত সরকার। এতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের গর্ভবতীকে গর্ভপাতের সুবিধা দেওয়া হয়।
এর ফলে ধর্ষণের শিকার, সংখ্যালঘু, মানসিক রোগী, ফিটাসে জটিলতা থাকা এবং গর্ভকালে বৈবাহিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটা নারী গর্ভপাত করানোর সুবিধা পায় দেশটিতে।
ভারতীয় আইনে বৈবাহিক ধর্ষণ এখনও অপরাধ নয়। সেখানে আইনে বলা আছে, বয়সে শিশু নন এমন ’পুরুষ যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে’ যৌন সম্পর্ক করেন তা ধর্ষণ নয়।
ব্রিটিশ আমলের এই আইন নিয়ে গত মে মাসে দিল্লি হাই কোর্টে এক মামলায় বিভক্ত রায় দেন দুই বিচারক।
সেই মামলার শুনানি এখন রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।