Published : 28 Oct 2022, 12:04 PM
নতুন আইন ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ রাজ্যে গর্ভপাত পুরোপুরি নিষিদ্ধ অথবা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে ১৩ রাজ্যের নিয়ম হল, গর্ভকালের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েও গর্ভপাত করানো যাবে না।
গার্ডিয়ান লিখেছে, অনেক রাজ্যেই গর্ভপাতকে এখন আর চিকিৎসার অংশ ধরা হচ্ছে না; বরং বিচার করা হচ্ছে নৈতিকতার চোখে।
গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ার আইনের বিরোধিতা যারা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন পেনসিলভানিয়া রাজ্যের সাবেক রিপাবলিকান সেনেটর ডোগ মাসট্রিয়ানো।
প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো যে আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট তা উল্টে দিয়ে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়।
কিন্তু নারীর গর্ভে দশ সপ্তাহের কম বয়সী ভ্রুণের আকার কতটুকু হয়, দেখতে কেমন হয়– এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা কম।
গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে কাজ করা চিকিৎসকদের সংগঠন এমওইএ নেটওয়ার্কের কাছ থেকে পাওয়া নয় সপ্তাহের ভ্রুণের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান।
প্রথম চার সপ্তাহে ভ্রুণ বা টিস্যুর গঠন একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। এমওয়াইএ নেটওয়ার্কের সদস্য ডা. জোয়ান ফ্লেইশম্যান একটি যন্ত্রের মাধ্যমে এই টিস্যুগুলো অপসারণ করেছেন।
পঞ্চম সপ্তাহেও টিস্যু অনেকটাই আগেরই মতো দেখা যায়।
অনেক সময় গর্ভপাতের পর নারী তার অপসারণ করা টিস্যু দেখতে চান।
ফ্লেইশম্যান বলেন, “তারা অবাক হয়ে যান টিস্যুর গঠন দেখে।
“তখনই আমি উপলব্ধি করি, ইন্টারনেট ও প্ল্যাকার্ডে গর্ভকালের শুরুতেই মানব আকৃতির ভ্রুণ দেখানো হয়। তাতে করে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ বিশ্বাসই করতে চায় না যে এই পর্যায়ে টিস্যুর প্রকৃত আকার এতটুকু হতে পারে।”
কাচের পাত্রে রাখলে তুলার টুকরোর মত দেখাবে অপসারণ করা ছয় সপ্তাহের ভ্রুণকে।
গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার খসড়া আইনে ছয় সপ্তাহের পর ভ্রুণ অপসারণ নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, ওই সময় ভ্রুণে হৃদস্পন্দন শনাক্ত করা যায়, যা ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে ফ্লেইশম্যানের ভাষ্য।
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা গর্ভকাল হিসাব করেন শেষবার মাসিকের প্রথম দিন থেকে। তাতে প্রসবের দিন সম্পর্কে একটি অনুমান করা যায়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে নারী কিন্তু প্রথম দুই সপ্তাহ অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন না। ফলে যখন তিনি গর্ভবতী হওয়ার কথা জানতে পারেন, তখন গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ওই ছয় সপ্তাহের মধ্যে খুব বেশি সময় তার হাতে থাকে না।
গার্ডিয়ান লিখেছে, ইন্টারনেট ও বইয়ে যেসব ছবি দেখানো হয়, তা গর্ভকালের প্রাথমিক পর্যায়ের নয়; বরং আরও পরিণত দিকের।
ফ্লেইশম্যান বলেন, ”গর্ভপাতবিরোধীরাই গর্ভকালের শুরু দিকের ভ্রুণের দশার প্রকৃত ছবির বদলে পরিণত ভ্রুণের ছবি বেছে নেন, যেন সবার মনে এমন ধারণা গড়ে ওঠে যে ওই সময়েই ভ্রুণে জীবনের অস্তিত্ব তৈরি হয়ে গেছে। উৎসাহী অভিভাবকরাও এমন করেন, তারা ভাবেন, ওইরকম ছবি নারীকে গর্ভবস্থা নিয়ে উৎফুল্ল করবে। কিন্তু যারা ওই সময় প্রস্তুত নয়, তাদের কী হবে?”
গর্ভকালের সপ্তম সপ্তাহেও ভ্রণের আকার এমনকি আধা ইঞ্চিও হয় না। বিশেষ কোনো গড়নও দেখা যায় না এ সময়।
ফ্লেইশম্যান বলেন, “মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক যারা এই সপ্তম সপ্তাহের টিস্যু দেখেছেন, তারাও অবাক হন। অথচ ভুল ধারণাগুলো ঠিকই ছড়িয়ে পড়ছে।”
এই সময় গর্ভপাতের জন্য নারীরা খুব ভয়ে ভয়ে হাসপাতালে যান। কারণ তাদের মনে অনলাইনে দেখা ছবির ছাপ থেকে যায়। তারা মনে করেন, ওই সময়ই হয়ত তার ভ্রুণ ছোট্ট মানব আকৃতি পেয়ে গেছে, হয়ত তার হাতও রয়েছে।
গর্ভথলি ও ভ্রুণ গঠনে সহায়ক ডেসিডুয়া টিস্যুর ছবিও প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান। কাচের ওপর রাখা এই নমুনা মাইক্রোস্কোপের নিচে নিয়ে দেখলেও মানব আকৃতির কিছু মিলবে না।
অপসারণ করা আট সপ্তাহের গর্ভথলি সামান্য ছড়ানো হলেও মূলত তা আগের মতই দেখা যায়।
গর্ভপাতের ’ভালো’ ও ’মন্দ’ সময় বলে কোনো পার্থক্য করতে চায় না এমওইএ নেটওয়ার্ট। আবার গর্ভকালের যে কোনো সময়ই গর্ভপাতের সঙ্গে যে আবেগ জড়িয়ে থাকে তাও অস্বীকার করতে চায় না তারা।
এ সংগঠনের উদ্দেশ্য, গর্ভকালের একেবারে শুরুতে অপসারণ করা টিস্যু দেখতে কেমন হয়, তা সবাই জানুক।
”গর্ভপাত একটি মেডিকেল সেবা। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সবার জন্যই কঠিন। যদিও প্রথম ১০ সপ্তাহের ভ্রুণের অবস্থা নিয়ে আমাদের তেমন কোনো ধারণাই থাকে না। মানুষের সঠিক তথ্য জানার অধিকার রয়েছে।”
নয় সপ্তাহে কারো গর্ভপাত করানো হলে ছবির মতো গর্ভথলি ও ছড়ানো কিছু অংশ পাওয়া যাবে। এসবের ভেতরে ভ্রুণের মত কাঠামো থাকে যা খালি চোখে দেখা সম্ভব না।
এই টিস্যু বাবা-মাকে দেখানো হলে তারা অনেকটা স্বস্তিবোধ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিল সুপ্রিম কোর্ট
যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় গর্ভপাত নিষিদ্ধের বিল পাস
গর্ভপাতের অধিকার: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সমাবেশে হাজারো মানুষ
ফ্লেইশম্যান বলেন, ”গর্ভপাত নিয়ে মানুষ খুব বেশি একটা কথা বলতে চায় না কারো সঙ্গে। তারা চুপচাপ ও গোপনেই এই সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের মাঝে ভয় কাজ করে। আর তাই আমি একটি সাধারণ পদ্ধতিতে কাজটি সারি, যার জন্য প্যাপ টেস্ট থেকে কয়েক মিনিট মাত্র বেশি সময় লাগে।
”যারা অপসারণ করা ওই টিস্যু দেখেন, তারা যে নিমিষেই ভারমুক্ত হয়ে ওঠেন, তা তাদের দেখলেই বোঝা যায়। এমনিতেই এসময় মানুষ আবেগের ওঠানামায় বেসামাল থাকে। যখন তাদের অপসারণ করা টিস্যু দেখানো হয়, তারা বলে ওঠেন, “আপনি মজা করছেন! এইটুকু মাত্র অপসারণ করা হয়েছে?’”
গর্ভকালের পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম সপ্তাহে অপসারণ করা গর্ভথলি একটি কাচের পাত্র বা পেট্রি ডিশেই পাশাপাশি রাখা যায়। এই থলি প্রতিদিন বাড়ে এক মিলিমিটার করে।
এ ধরনের ছবি কেন সামনে আনা হয় না?
এমওইএ নেটওয়ার্কের সদস্য ডা. মিচেল গোমেজ বলেন, “আমার মনে হয় কোনো কোনো চিকিৎসক নারীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত থাকেন। যদিও কে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। আমরা শুধুমাত্র তথ্য সামনে আনব এবং সত্য তুলে ধরব, যেন বিভ্রান্তির অবসান হয়।
”এটা ভয়ঙ্কর কিছু নয়, বিপদেরও কিছু নয়, হিংস্রও নয়। এটা শুধু একটা ছবি যা কারো শরীরের ভেতরে ছিল।