যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থনে হওয়া সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।
Published : 03 Oct 2021, 04:00 PM
এসব সমাবেশে টেক্সাসে গর্ভপাতের অধিকার সংকুচিত করে করা নতুন এক আইনের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রে যারা গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে তাদের আশঙ্কা, সামনের দিনগুলোতে দেশটিতে এ সাংবিধানিক অধিকার তুলে নেওয়া হতে পারে।
ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার শুনানি হতে যাচ্ছে, যে শুনানিতে ১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড মামলায় দেওয়া ঐতিহাসিক আদেশ উল্টে যেতে পারে বলে কারও কারও ধারণা। ওই আদেশেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গর্ভপাত বৈধতা পায়।
শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থকরা সুপ্রিম কোর্ট ভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যায়, তাদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল ‘গর্ভপাতকে বৈধতা দাও’।
প্রথমদিকে তাদের সমাবেশ দুই ডজনের মতো গর্ভপাতবিরোধী বিক্ষোভকারীর কারণে বিঘ্নিত হয়েছিল।
“নিষ্পাপ শিশুদের রক্ত তোমাদের হাতে লেগে আছে,” চিৎকার করে বলেছিল তাদের একজন; কিন্তু বিপুল সংখ্যক জনতার সমস্বরে গেয়ে ওঠা গান ও হাততালিতে তার কণ্ঠ চাপা পড়ে যায় বলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এক নারী জানান, গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নারী নেবে, এ ধারণার প্রতি সমর্থন জানাতেই তিনি সমাবেশে গিয়েছিলেন।
“সৌভাগ্যক্রমে আমাকে কখনোই গর্ভপাত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, কিন্তু অনেক নারী আছেন, যাদেরকে পড়তে হয়েছে। যখন বিষয়টি আমাদের শরীরের সঙ্গে যুক্ত তখন সরকার বা পুরুষদের এ বিষয়ে কোনো মত থাকতে পারে না,” বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন রবিন হর্ন।
প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যে ‘উইমেনস মার্চ’ হয়, তার পেছনের কারিগররাই শনিবারের এ সমাবেশগুলোর আয়োজক। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের পনদিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের প্রথম এ ধরনের কর্মসূচি হয়। সেবার লাখ লাখ নারী-পুরুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল।
“দেশজুড়ে সবার জন্যই এখন জরুরি পরিস্থিতিতে কিছু করার মুহুর্ত এটি,” বলেছেন উইমেনস মার্চের নির্বাহী পরিচালক রেইচেল ও’লিয়ারি কারমোনা।
নিউ ইয়র্কে রাজ্যটির গভর্নর ক্যাথি হোচুলও গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থনে হওয়া দুটি সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন।
“গর্ভপাতের অধিকারের জন্য লড়াই করতে করতে আমি ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এটি এই দেশের ক্ষেত্রে নিষ্পত্তি হওয়া একটি আইন, আপনি আমাদের কাছ থেকে এ অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না। এখন না, কখনোই না,” বলেছেন তিনি।
শনিবার টেক্সাসের অস্টিনেও গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থনে সমাবেশ হয়েছে। এ রাজ্যের আইনপরিষদ গত ১ সেপ্টেম্বর নতুন একটি আইন কার্যকর করেছে, যাতে ভ্রুণের হৃদস্পন্দন শনাক্ত হওয়ার পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে, ভ্রুণের হৃদস্পন্দন প্রথম যখন আসে, তখনও অনেক নারী তিনি যে গর্ভবতী, তাই জানেন না।
তথাকথিত এই ‘হৃদস্পন্দন আইনে’ ভ্রুণের বয়স ছয় সপ্তাহ হওয়ার পর (সাধারণত এই সময়ে বা এর কাছাকাছি সময়ে ভ্রুণের হৃদস্পন্দন পাওয়া যায়) কোনো চিকিৎসক যদি গর্ভপাত করান, তাহলে যে কাউকে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
আইনটির সমর্থকরা বলছেন, জন্মানোর অপেক্ষায় থাকাদের সুরক্ষা দিতেই আইনটি দরকার।
রিপাবলিকান অধ্যুষিত অনেক রাজ্যের রাজনীতিকরাও এখন টেক্সাসের মতো একই উপায়ে গর্ভপাতের ওপর বিধিনিষেধ দেওয়ার কথা ভাবছেন।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন টেক্সাসের আইনটি আটকাতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল; কিন্তু তাদের আবেদন সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকদের ৫-৪ ভোটে খারিজ হয়ে যায়।
গর্ভধারণের ১৫ সপ্তাহ পর বেশিরভাগ গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে মিসিসিপিতে যে আইন হয়েছে, তার ওপর ১ ডিসেম্বর শুনানির দিন ঠিক করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
এ মামলার রায় ১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড মামলায় দেওয়া আদেশকে উল্টে দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
প্রায় অর্ধশতক আগের ওই আদেশে ভ্রুণ গর্ভের বাইরেও বেঁচে থাকতে সক্ষম (গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহ বা এর কাছাকাছি সময়ে), এমন পর্যায়ে আসা পর্যন্ত গর্ভপাত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার গর্ভধারণকারী নারীকে দেওয়া হয়েছিল।