হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলে বছরে ১২ লাখ স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৩ হাজার ৩৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে ৫০০টি কেন্দ্রকে প্রাথমিক পর্যায়ে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2022, 12:13 PM
Updated : 18 Oct 2022, 12:13 PM

সারা দেশে এক হাজার মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে প্রতি বছর অস্ত্রোপচার ছাড়াই ১২ লাখ নারীর সন্তান জন্মদানের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। 

তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এই ৫০০ মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, "জন্মের সময় অনেক শিশু মারা যায়। অনেকে অসুস্থ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এমন ঘটনা যেন আর না হয় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

"আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব এখনও অনেক কম। এটি বাড়াতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাতৃসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো আটঘণ্টা কাজ করে। এভাবে সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না। তাই আমারা সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেন মায়েরা এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসে এবং সার্বক্ষণিক সেবা পায়।"

জাহিদ মালেক বলেন, “আমরা মোট ৫০০টি সেবা কেন্দ্রে এ সেবা চালু করেছি। এখানে পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে।”

এ উদ্যোগের লক্ষ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, "প্রতি বছর এক লাখ শিশুর মৃত্যু হয়। মোট ডেলিভারির ৬০ শতাংশ সিজারিয়ান হয়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা না।

”আমরা সিজারিয়ান কমিয়ে আনতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছি।"

মন্ত্রী বলেন, "এখন ৫০০টি করেছি, সামনে আরও ৫০০টি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কেন্দ্রে বছরে ১২ লাখ সাধারণ ডেলিভারি করা সম্ভব।”

দেশে মোট সন্তান প্রসবের ৫০ শতাংশ হাসপাতালে এবং বাকিটা বাড়িতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা প্রাতিষ্ঠানিক করতে হবে। এতে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমবে। আমাদের যে পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়ন করতে পারলে ৯০ থেকে শতভাগ ডেলিভারি প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যাবে।"

বর্তমান সরকার শিশুদের স্বাস্থ্য ও অধিকারের বিষয়ে ‘সোচ্চার’ বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, "মায়ের স্বাস্থ্যে নজর দিতে হবে। মা সুস্থ না থাকলে শিশু সুস্থ থাকবে না। আমাদের ব্রেস্ট ফিডিংয়ের হার বেড়েছে। এতে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। তাই এটি বাড়াতে সকলের ভূমিকা রাখতে হবে।"

অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রত্যেক জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতলে তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি আছে। আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রোগীর সংখ্যা না কমালে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো কঠিন। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে।"

 "ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি। যেন খুব শিগগিরই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।"

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যাবতীয় সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, "যেসব এলাকায় মশা বেশি সেসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে অ্যাকটিভ হতে হবে। যেন মশা কমে আসে, আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে।"

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, "নিরাপদ মাতৃত্ব আমাদের লক্ষ্য।

”শুধুমাত্র এসডিজি বাস্তবায়ন নয়, বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে একজন মা কেন মারা যাবে? মানবিক দিক থেকেই আমরা এটি বন্ধ করতে চাই। আমাদের অবকাঠামো আছে। এখন তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।"

দেশে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার জনসাধারণ বসবাস করে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির বাস এখানে।

এসব জনগোষ্ঠির মধ্যে মা নবজাতক ও শিশু মৃত্যু হার তুলনামূলক  বেশি।

এই পরিস্থিতিতে সেবাকেন্দ্র থেকে ২৪ ঘণ্টা স্বাভাবিক প্রসবসেবা দিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি উপজেলা থেকে একটি করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৩ হাজার ৩৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে ৫০০টি কেন্দ্রকে প্রাথমিক পর্যায়ে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে।

ধাপে ধাপে সব কেন্দ্রকে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে।