এতে বলা হয়েছে, অন্যায়ভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে, এমন আইন বাতিল বা সংশোধন করার বিষয়টি কমনওয়েলথ সরকারগুলোর বিবেচনা করা উচিত।
Published : 27 Oct 2024, 09:28 PM
কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক নীতিমালা গৃহীত হয়েছে, যা বাক স্বাধীনতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রোববার সামোয়ার আপিয়ায় জোটের সরকারপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে এই নীতিমালা গ্রহণ করা হয় বলে কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
নীতিমালায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অন্যায়ভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে এমন আইন বাতিল বা সংশোধন করার বিষয়টি কমনওয়েলথের সদস্য সরকারগুলোর বিবেচনা করা উচিত।
কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ ও কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সদস্য দেশগুলোকে এই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের উপর স্বেচ্ছাচারী, মাত্রাতিরিক্ত বিধিনিষেধ অবসানের জন্য বাস্তব এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷
এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কমনওয়েলথকে অবশ্যই এর অগ্রগতি নিরীক্ষণের পাশাপাশি নীতিমালা যাতে বাস্তবায়িত হয় সে জন্য সুশীল সমাজের সঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার হুমকির মুখে রয়েছে জানিয়ে ইউনেস্কোর তথ্যের বরাতে এতে বলা হয়, শুধু কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতেই ২০০৬ থেকে ২০২০ সালের ১৭৮ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। এছাড়া, একই সময়ে সাংবাদিকদের হত্যার দায়মুক্তির হার ৯৬ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাপী দায়মুক্তির ৮৭ শতাংশ থেকে বেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন কারাগারে ৫৪৭ জন সাংবাদিকের আটক থাকার তথ্য নথিবদ্ধ করেছে।
“এছাড়া আইনি হয়রানি প্রায়শই ভিন্নমত এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দমিয়ে রাখার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক কমনওয়েলথ দেশ এখনও বিধিনিষেধমূলক ঔপনিবেশিক যুগের আইন বজায় রেখেছে, যা স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব, বিভিন্ন কণ্ঠস্বরকে দমন করে এবং গণতন্ত্রে যে স্বচ্ছতা প্রয়োজন, তাতে বাধা দেয়।”
কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উইলিয়াম হর্সলে বলেন, “এসব আইন প্রায়ই ফৌজদারি নিষেধাজ্ঞা হিসেবে প্রয়োগ করা হয়, যা অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং অন্যদের উপর একটি পরোক্ষ প্রভাব ফেলে, আর বাকিরা সত্য কথা বলার জন্য প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার ভয়ে ভীত থাকেন।”
“এটি সেলফ সেন্সরশিপ উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং স্বাধীন ও ভিন্নমত কমিয়ে দিচ্ছে, যা একটি সরকারের জবাবদিহিতার দায়বদ্ধ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের ডিরেক্টর স্নেহ অরোরা বলেন, “অনেক সদস্য রাষ্ট্র এখনো ঔপনিবেশিক আইনি উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে, যেখানে আজও দমনমূলক আইন কার্যকর রয়েছে। পাশাপাশি তারা কমনওয়েলথ চার্টারে নির্ধারিত গণতান্ত্রিক শাসন এবং আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারও সমর্থন করে।”
“আইনি সংস্কারের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে উন্নত করার মাধ্যমে এমন একটি উদাহরণের তৈরির সক্ষমতা কমনওয়েলথের আছে। ভিন্নমত দমনে ফৌজদারি আইনের অপব্যবহার যাতে না হয় তা নিশ্চিত হবে এর মাধ্যমে। এই নীতিমালা কমনওয়েলথ সরকারগুলোকে তাদের জাতীয় আইনগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ করে দেবে।”