মোবাইলের টিংটিং শব্দে মন ছুটে গেলে কী করবেন?

স্মার্টফোনের নোটিফিকেশনের শব্দে মনোযোগ নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায় রয়েছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2023, 03:45 PM
Updated : 25 Jan 2023, 03:45 PM

স্মার্টফোনের নোটিফিকেশনের কারণে কাজ থেকে মনোযোগ নষ্ট হলে ফিরিয়ে আনা কষ্টকর।

আর সেই নোটিফিকেশন হতে পারে কোনো বিজ্ঞাপন, সোশাল মিডিয়াতে কারও স্ট্যাটাস, কিংবা ‘গ্রুপ চ্যাট’য়ে আত্মিয় বা বন্ধুদের কোনো আয়োজন।

অবসর সময়ে সমস্যা না হলেও, কাজের মধ্যে এই ধরনের নোটিফিকেশনের শব্দে মনোযোগ ছুটে গেলে ফিরিয়ে আনতেও সময় লাগে।

এই বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার ‘ডিকন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ সাইকোলজি’র জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক শ্যারন হরউড সিএনএন’য়ের একটি প্রতিবেদনে লেখেন, “ব্যাপার হচ্ছে ‘সাইলেন্ট মুড’য়ে থাকুক বা না থাকুক মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার জন্য ফোন সামনে থাকাটাই যথেষ্ট।”

এটা কী কোনো বড় বিষয়?

বড় অর্থে যদি ভাবা হয় তবে এই ‘টিংটিং’ শব্দ গণনায় নিতেই হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি’, ‘ল্যানক্যাস্টার ইউনিভার্সিটি’, ‘ইউনিভার্সিটি অফ লিঙ্কন’ ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট ইংল্যান্ড’ পরিচালিত এক সমিক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে ড. হরউড জানান, ‘হিসাবের তারতম্য হতে পারে, তবে একজন ব্যক্তি দৈনিক গড়ে ৮৫ বার ফোন দেখেন। মানে মোটামুটিভাবে ১৫ মিনিটে একবার।”

টিভি দেখার ক্ষেত্রে বড় বিষয় না হলেও গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে, পড়াশোনা বা প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় এই মনোযোগ হারানো কারও জন্য হতে পারে বিশাল সমস্যা।

সমস্যা হতে পারে দুই ধরনের

ফোনের টিং শব্দের কারণে হতে পারে বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা, যাকে বলা হয় পারিপার্শ্বিক কারণে কোনো কিছুতে বাধা পাওয়া।

বিষয়টা অনেকটা এরকম, জুয়া খেলায় জেতার শব্দে যে মন যেমন আনন্দে নাচে তেমনি মোবাইলের নোটিফিকেশনের শব্দেও মন আকৃষ্ট হয়। ফলে মনোযোগ ছুটে।

তবে ফোন ‘সাইলেন্ট’ করে রাখলেও মুক্তি নেই। এর ফলে তৈরি হতে পারে অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা।

ধরা যাক কোনো কাজে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করছেন। তবে ফোন ‘সাইলেন্ট’ থাকার কোনো শব্দ কানে আছে না। অথচ মন খচখচ করেই যাচ্ছে ফোনে কোনো নোটিফিকেশন আসল কিনা বা অনলাইনে কী হচ্ছে তা জানার জন্য। তারপর একসময় ফোন হাতে নেওয়া হয়ে যায়।

এভাবেই দুই ধরনের সমস্যার বর্ণনা দিয়ে ড. হরউড লেখেন, “এই পরিস্থিতে অনেকটা পুরস্কার জয়ের মতো আনন্দ পেতে আমরা ফোন হাতে তুলে নেই। ফলে ফোনের টিং শব্দের জন্য আর অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হয় না।”

মগজকে বিশ্রাম দেওয়া

ফোনের নোটিফিকেশনের প্রভাবে মন ও মস্তিষ্কে নানান সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদন ক্ষমতা কমা, মনোযোগের অভাব, কাজে বা স্কুলে অমনোযোগী হওয়া।

ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ কোরিয়া’র করা এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. হরউড জানান, যারা নিজেদেরকে অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তারা সাধারণ ব্যবহারকারীদের তুলনায় ‘পুশ নোটিফিকেশন’য়ের ক্ষেত্রে বেশি সংবেদনশীল।

‘পুশ নোটিফিকেশন’ শোনার পর সাধারণ ব্যবহারকারীদের তুলনায় অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাজে মনোযোগ ফেরানোর ক্ষেত্রে বাজে ফলাফল পাওয়া গেছে। যদিও দুই গ্রুপের ক্ষেত্রেই ‘পুশ নোটিফিকেশন’য়ে মনোযোগ নষ্ট হতে দেখা গেছে।

ফোনের কারণে বার বার বাধা পড়লে দেখা দিতে পারে মানসিক চাপ। যা কিনা নোটিফিকেশন দেখা বা উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে তৈরি হয়। এছাড়া বারবার স্মার্টফোনের কারণে কোনো বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির সঙ্গে ‘এফওএমও বা ফিয়ার অফ মিসিং আউট’ সমস্যায় ভোগার পরিমাণও বাড়তে পারে।

এছাড়া ড. হরউড নিজের করা গবেষণায় দেখেছেন, কোনো কারণ ছাড়া বা অফলপ্রসূ ভাবে ফোনে সময় কাটানোর ফলে ভালো থাকার মাত্রাও কমে।

প্রতিকারের উপায়

আগেই বলা হয়েছে ‘সাইলেন্ট’ রেখেও স্মার্টফোনের এই যন্ত্রণা থেকে জাদুমন্ত্রের মতো বের হয়ে আসা যায় না; বিশেষ করে কেউ যদি বার বার ফোন দেখায় অভ্যস্ত হন।

অভ্যস্ততা কাটানো সহজ কাজ নয়। ধাপে ধাপে পরিবর্তন ঘটাতে হয়। যারা ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, ওজন কমানো বা ব্যায়াম শুরু করতে চেষ্টা করেছেন তারা বিষয়টা উপলব্ধি করে থাকবেন।

এক্ষেত্রে ড. হরউড পরামর্শ দেন, “প্রথমেই অপ্রয়োজনীয় সব নোটিফিকেশন আসা বন্ধ করতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে কমাতে হবে ফোন ঘাটাঘাটির সময়।”

  • রাতে ঘুমানোর আগে অন্য ঘরে ফোন চার্জ দিন। নোটিফিকেশনের শব্দে ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা হবেই। ফলে সারারাত প্রয়োজনীয় ঘুমের অভাব দেখা দেবে।

  • ফোন দেখার অভিপ্রায় জাগলে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, এর থেকে ভালো কিছু আসবে কি-না। যেমন- ফোনের কাছে যাওয়া বা হাতে তুলে নেওয়ার আগে থামুন, তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুন মনোযোগ হারানো ছাড়া এর থেকে আর কি ভালো হতে পারে?

  • এক্ষেত্রে ‘পোমোদোরো’ পদ্ধতি অবলম্বন করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে সেখান থেকে কিছুটা সময় অবসর নেওয়াই হল এই পদ্ধতির কৌশল। ধরা যাক ২৫ মিনিট কাজের পর পাঁচ মিনিট বিরতি নিলেন। এই বিরতির জন্য পুরস্কার হিসেবে কিছুক্ষণ মোবাইল ফোন দেখলেন। ধীরে ধীরে নিজেকে এই পুরস্কার দেওয়ার সময়টা কমিয়ে আনতে হবে। এভাবে কাজে মনোযোগ বাড়ানো ও বিরতি নেওয়ার সময় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত হতে হবে।  

আরও পড়ুন:

Also Read: অর্থ খরচে সময় বাঁচলে হতে পারবেন সুখী

Also Read: ফোন থেকে ত্বকের যত সমস্যা

Also Read: যৌন জীবন নষ্টের পেছনে স্মার্টফোন

Also Read: ফোন বিক্রির আগে সাবধান

Also Read: যে কারণে ফোন থেকে হাত সরে না