প্রতিবছর ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা কমতে থাকে বয়সের কারণে।
Published : 17 Feb 2025, 03:37 PM
শুধু শীতে নয়, গরমের সময়েও শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের আলাদা যত্নের প্রয়োজন পড়ে।
তাছাড়া গ্রীষ্মের শুরুতে পরিবেশে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে শুষ্ক ত্বকে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
এই তথ্য জানিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘এনওয়াইইউ ল্যাংগন হেল্থ’য়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জেনিফার স্টেইন বলেন, “চামড়ার ওপরে সুরক্ষার স্তর পর্যাপ্ত আর্দ্রতা ধরে রাখতে না পারলে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।”
আর এটা শুধু শীতল তাপমাত্রার কারণেই হয় না।
“ঘরে ঠাণ্ডা বাইরে গরম কিংবা এর উল্টোটা – তাপমাত্রার এরকম দ্রুত পরিবর্তনের ফলে শুষ্ক ত্বকে সমস্যা আরও বেশি দেখা দেয়”- একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন মাউন্ট সিনাই’য়ে অবস্থিত ‘নিউ ইয়র্ক’স আইকান স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘কিম্বার্লি অ্যান্ড এরিক জে. ওয়াল্ডম্যান ডিপার্টমেন্ট অফ ডার্মাটোলজি’ বিভাগের প্রধান ডা. এমা গাটম্যান ইয়স্কি।
দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের সমস্যা আরও বাড়তে পারে
‘ক্রনিক স্কিন কন্ডিশন’ বা দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের সমস্যা, যেমন- একজিমা এবং সোরায়সিস থাকলে ত্বক শুষ্ক হলে সমস্যা আরও বাড়ে।
“যদি ত্বকে লালচে, জ্বালাভাব, চুলকানিভাব হয় তবে ‘মেডিকেটেড ক্রিম’ ব্যবহার করতে হবে”- পরামর্শ দেন স্টেইন।
সোরায়সিস হল ‘অটোইমিউন স্কিন ডিজিজ’, যা ত্বকে আঁশ ওঠার মতো অবস্থা তৈরি করে এবং জ্বালা অনুভূত হয়। ঠাণ্ডা, শীতল পরিবেশ ত্বকের এই অবস্থা আরও খারাপ করে।
স্টেইন বলেন, “শীতের সময় বেশি কাপড় পরে থাকা হয় বলে সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তবে গরমে বা সূর্যের আলো লাগলে সমস্যা কমে। ময়েশ্চারাইজার মাখা এ ক্ষেত্রে উপকারী। তবে রোগ সারানোর জন্য আরও ভালো পদ্ধতি রয়েছে। যা একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে পরামর্শ দিতে পারবে।”
বয়সের সঙ্গে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা বাড়ে
“প্রতি বছর আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা হারাতে থাকে ত্বক। কারণ ত্বকের সুরক্ষার স্তর দুর্বল হওয়া” বলেন ডা. স্টেইন।
ত্বকের উপরিভাগের এই স্তর প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে কাজ করে। তবে দুর্বল হওয়ার কারণে আর্দ্রতা উবে যাওয়ার পরিমাণ বাড়ে।
যেসব উপাদান উপকারী
শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দূরে রাখতে বারবার ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করতে হবে।
“ত্বক শুষ্ক বোধ হওয়ার আগেই ঘন ঘন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে অনেক সমস্যা দূরে রাখা যায়” বলেন ডা. স্টেইন।
যাদের হাতে পানি লাগে বেশি, বেশিরভাগ সময় ধোয়ার কাজ করতে হয় বা হাত ধুতে হয় বেশি- এসব ক্ষেত্রে ঘন ঘন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
শুষ্ক ত্বকের ময়েশ্চারাইজারের উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কাজ করে হায়ালুরনিক অ্যাসিড।
তাই যে কোনো ময়েশ্চারাইজার কেনার ক্ষেত্রে এই উপাদান আছে কিনা সেটা পরখ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকন্সিন’য়ে অবস্থিত ‘বিলোইট হেল্থ সিস্টেম’য়ের ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. রজার কাপুর।
গ্লিসারিন এবং হায়ালুরনিক অ্যাসিড- দুটাই ‘হিউম্যাকটেন্ট’। মানে আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে ত্বকে।
কাপুর বলেন, “গ্লিসারিন সহজে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে দীর্ঘ সময় ধরে আর্দ্রতা রক্ষা করতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, নিয়াসিনামইড’য়ের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করতে। এটা এক প্রকার ভিটামিন বি-থ্রি, যা ত্বকের সুরক্ষার স্তর মাত্রা বৃদ্ধি করে।
আর আর্দ্রতা ত্বকে বন্দি করে রাখতে সাহায্য করে সেরামাইডস এবং স্কোয়ালিন।
ডা. কাপুর বলেন, “সেরামাইডস হল এক ধরনের চর্বি যা পানি আটকে রাখতে সাহায্য করে। স্কোয়ালিন স্থিরভাবে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।”
অন্যান্য
এছাড়া শুষ্ক ত্বকের সমস্যা এড়াতে গরম পানিতে গোসল এড়াতে হবে। কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। গোসলের পরপরই মাখতে হবে মেয়েশ্চারাইজার।
আর হাত ধোয়ার জন্য স্যানিটাইজারের পরিবর্তে বেশি ব্যবহার করতে হবে হ্যান্ডওয়াশ।
আরও পড়ুন
ত্বক পরিচর্যা সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা