গরমের পাশপাশি রং কিংবা ফুলের স্পর্শে ত্বকে দেখা দিতে পারে নানান সমস্যা। তাই আগে থেকেই হতে হবে সাবধান।
Published : 13 Apr 2025, 05:55 PM
দিনভর রঙিন পোশাক, কাঁচা ফুল, আবির খেলা, আলপনার ছোঁয়া আর ছবি তোলার ধুম। সব মিলিয়ে বৈশাখের প্রথম দিনটি যেন হয়ে ওঠে বাঙালির আত্মপরিচয়ের এক আনন্দময় উদযাপন।
তবে এই উৎসবের আনন্দের মাঝেই ত্বকের দিকে একটু খেয়াল না রাখলে অ্যালার্জি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি, রোদপোড়া বা ব্রণের সমস্যা বাড়তে পারে।
ত্বক যেন থাকে প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল ও সুস্থ থাকে সেজন্যই প্রয়োজন পহেলা বৈশাখকে ঘিরে কিছু বিশেষ ত্বকের যত্ন।
রোদে পোড়া আর অ্যালার্জির ঝুঁকি
পহেলা বৈশাখ মানেই চৈত্র-গ্রীষ্মের দাবদাহ। সকালে হালকা রোদে বের হলেও সূর্যের তাপ বাড়তে থাকে দুপুরের দিকে। সেক্ষেত্রে ত্বক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অতিবেগুনি রশ্মির কারণে।
এতে হতে পারে ‘সানবার্ন’ বা রোদপোড়া, ত্বকের কালচে দাগ বা অ্যালার্জির সমস্যা।
পহেলা বৈশাখে অনেকেই কাঁচা ফুল দিয়ে চুল বা গলার গহনা বানিয়ে ব্যবহার করেন। শিশু বা তরুণীরা ফুলের কুঁড়ি দিয়ে হাত বা কপালে গয়না বানিয়ে সাজেন।
অনেকের ত্বকে এসব ফুল বিশেষ করে গাঁদা, বেলি বা রজনীগন্ধার মতো সুগন্ধি ফুলের পরাগ রেণুর প্রতি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এতে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, লালচে ভাব বা ফোলাভাব হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি প্রকট হয়।
তেমনি, আবির বা বিভিন্ন রং দিয়ে খেলা বা আলপনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা রংয়েও অনেক সময় ক্ষতিকর কেমিকেল থাকে।
যা থেকে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, ‘হাইপারসেনসিটিভ রিয়্যাকশন’, এমনকি কখনও কখনও সংক্রমণও হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল বা আগে থেকেই অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে, তাদের জন্য এসব রং আরও বিপজ্জনক।
“ফুল বা রংয়ের ব্যবহার একেবারে নিষেধ নয়, তবে আগে থেকেই সতর্ক থাকা দরকার। পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর ত্বক এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমায়। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং অবশ্যই রোদে বের হওয়ার অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিন যেন এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি হয় এবং প্রয়োজনে তিন-চার ঘণ্টা পর পুনরায় লাগাতে হবে” বলেন হেল্থ এইড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আফিফ বাসার।
মেইকআপের আগে ত্বক প্রস্তুত করা
পহেলা বৈশাখ মানেই সাজগোজের দিন। মেয়েরা সাধারণত ফুলের গহনা, লাল-সাদা শাড়ি আর হালকা কিংবা একটু বেশি মেইকআপে নিজেকে সাজান। তবে মেইকআপের আগে ত্বক পরিষ্কার না থাকলে ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই মেইকআপের আগে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলা, টোনার ব্যবহার করা, এরপর ময়েশ্চারাইজার এবং প্রাইমার লাগানো জরুরি। এতে মেইকআপ ত্বকে বসে সুন্দরভাবে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী বলেন, “তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে হালকা ফাউন্ডেশন বা বিবি ক্রিম ব্যবহার ভালো। ভারী মেইকআপ ত্বকে ব্রণ বা র্যাশের সমস্যা বাড়াতে পারে।”
আবির ও আলপনা: ত্বকের প্রতি সতর্কতা
অনেকেই পহেলা বৈশাখে গালে হাতে আবির বা আলপনা দিয়ে থাকেন। হালকা রংয়ের আলপনা অনেক সময় প্লাস্টিক রং বা চটচটে রং দিয়ে করা হয়, যেটা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের ত্বক এতে বেশি আক্রান্ত হতে পারে।
“যদি আলপনা করতে হয়, তাহলে প্রাকৃতিক রং যেমন- চন্দন, হালদী বা মেহেদি ব্যবহার করাই নিরাপদ”- বলেন আফরিন মৌসুমী।
এ বিষয়ে তিনি দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।
ঘাম, ধুলাবালি ও র্যাশ
গরমের দিনে অনেকেরই মুখে ঘাম জমে। এই ঘামের সঙ্গে ধুলাবালি যুক্ত হয়ে ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ করে দেয়। ফলে দেখা দেয় ব্রণ, র্যাশ বা অ্যালার্জি।
এই সমস্যা এড়াতে দিনে অন্তত দুতিনবার মুখ ধোয়া জরুরি। বাইরে থাকলে মুখে হালকা ফেইস মিস্ট বা গোলাপ জল স্প্রে করতে পারেন। এতে ত্বক সতেজ থাকে।
উৎসবের পর ত্বকের আরাম
বাইরে সারাদিন ঘোরাঘুরি আর মেইকআপের পর ত্বককে বিশ্রাম দিতে হবে। রাতে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ঘুমাতে হবে।
ত্বকের যত্নে রাতে কী করবেন
মেইকআপ রিমুভার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
‘মাইল্ড ফেসওয়াশ’ ব্যবহার করা জরুরি।
এক্সফলিয়েটার (সপ্তাহে দুয়েক দিন) দিয়ে মৃত কোষ তুলে ফেলতে হবে। মেইকআপের ক্ষুদ্র অংশ পরিষ্কার করতেও উপযোগী এটি।
হালকা সেরাম বা নাইট ক্রিম ব্যবহার করা।
ঘরোয়া যত্নে পহেলা বৈশাখ
রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমীর মতে পহেলা বৈশাখের পরের দিন ত্বকে ক্লান্তিভাব দেখা দিতে পারে। তাই ঘরে বসেই কিছু ঘরোয়া যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
দুধ ও মধু মিশিয়ে ফেইসপ্যাক – ত্বক করে কোমল ও উজ্জ্বল
টক দই ও বেসনের প্যাক – রোদে পোড়া দাগ কমায়
শসার রস – ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব কমায়
পানি পান ও খাদ্যাভ্যাস
ত্বকের জন্য পানি সবচেয়ে বড় বন্ধু। বাইরে বের হওয়ার আগে ও পরে প্রচুর পানি পান করা উচিত। রোদের ক্লান্তি দূর করতে সঙ্গে রাখা যেতে পারে ফলের রস বা ডাবের পানি।
তেল-মসলাদার খাবার এড়িয়ে সহজপাচ্য ও ভিটামিন-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যাতে ত্বক ভেতর থেকে ভালো থাকে।
আর পহেলা বৈশাখে সাজগোজের পাশাপাশি ত্বকের যত্ন যেন উপেক্ষিত না হয় সেদিকে রাখতে হবে বিশেষ খেয়াল।
আরও পড়ুন