ত্বকের ধরন ‍বুঝে ক্লেঞ্জার ব্যবহার

তৈলাক্ত, শুষ্ক কিংবা মিশ্র- ত্বকের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে পরিষ্কারক ব্যবহার করা কার্যকর।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2022, 12:12 PM
Updated : 29 Oct 2022, 12:12 PM

তেল কিংবা পানি ভিত্তিক আর জেল বা ফোম- পরিষ্কারক ব্যবহার করতে হয় ত্বকের ধরন বুঝে।

ত্বকের যত্ন নেওয়ারে বিষয়ে একজন যতই উদাসীন হোক, নিজের মুখটা অন্তত নিয়মিত পরিষ্কার করে। আর ত্বকের যত্নে যারা অত্যধিক মনযোগী, তাদের ব্যবহার করা বিশেষ প্রসাধনী ব্যবহার না করলেও একটি ভালোমানের ‘ক্লেঞ্জার’ বা ‘ফেইসওয়াশ’ ব্যবহার করা উচিত সবারই।

সেটা যদি খুব মৃদু হয় হয় তবে ব্যবহারের পরও ত্বকের ময়লা কিংবা মেইকআপ’য়ের অবশিষ্টাংশ থেকে যাবে। আবার যদি খুব কড়া হয় তাহলে ত্বকের জৈবিক তেলও তুলে ফেলবে।

দুই ক্ষেত্রেই পরিণতি একই। ত্বকের অস্বস্তি, ব্রণ ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দেবে।

তাই নিজের জন্য আদর্শ পরিষ্কারক প্রসাধনী বেছে নিতে ত্বকে ধরনের দিকে নজর দেওয়া উচিত প্রথমে।

ক্লে-ভিত্তিক: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য

নিউ ইয়র্কের ‘বোর্ড সার্টিফায়েড ডার্মাটোলজিস্ট’ হ্যাডলে কিং বলেন, “ক্লে’ ধরনের প্রসাধনী জনপ্রিয় হওয়া পেছনে কারণ হল এটি ‘সেবাম’ শুষে নেয়।”

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “এতে আছে ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ও প্রদাহ নাশক গুণাগুণ। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই ধরনের প্রসাধনী আদর্শ।”

একইভাবে শুষ্ক ত্বকের জন্য এই ধরনের ‘ক্লেঞ্জার’ আবার একেবারেই অযোগ্য। কারণ ‘ক্লে’ জাতের ফেইসওয়াশ কাজ করে ত্বক থেকে তেল শুষে নেওয়ার মাধ্যমে। আর ত্বক তৈলাক্ত হলেও এই ধরনের ক্লেঞ্জার লম্বা সময় ত্বকে মাখিয়ে রাখা উচিত হবে না।

তেল ভিত্তিক: শুষ্ক ত্বকের জন্য

ডা. কিং বলেন, “শুষ্ক ত্বকের জন্য আদর্শ পরিষ্কারক উপাদান হবে ‘অয়েল বেইজড ক্লেঞ্জার’। ত্বক থেকে সহজে উঠতে চায় না এমন যে কোনো প্রসাধনী পরিষ্কার করতে এগুলো অত্যন্ত কার্যকর।”

শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এগুলো কার্যকরী হওয়া কারণ হল, এই প্রসাধনীগুলোতে থাকে ‘ক্লেঞ্জিং অয়েল’ ও ‘মিল্ক’। আর এতে বাড়তি ‘সার্ফেকট্যান্টস’ না থাকায় ত্বকের জৈবিক তেলও ধুয়ে যায় না।”

জেল ভিত্তিক: মিশ্র ত্বকের জন্য

মায়ামি’র ত্বক বিশেষজ্ঞ লোরেটা সিরাল্ডো একই প্রতিবেদনে বলেন, “জেল-ধর্মী ফেইসওয়াশগুলোর প্রধান উপাদান হিসেবে থাকে পানি। এতে যে সার্ফেকট্যান্টস’ থাকে সেগুলো হয় মৃদুমাত্রার। ফলে যাদের ত্বক শুষ্ক আর তৈলাক্ত, মানে মিশ্র ধরনের, তাদের জন্য এগুলো আদর্শ।”

এই ফেইসওয়াশগুলো ব্যবহারে ফেনা হয় কম। ত্বক এতে সতেজ ও শীতল হয়ে যায়। তাই বলে এই নয় যে এগুলো ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে না।

“পাতলা হওয়ার কারণে লোমকুপ সহজেই খুলে ফেলতে পারে জেল-ধর্মী ফেইসওয়াশ। ফলে যাদের ত্বকে ব্রণ বেশি হয় তাদের জন্য এগুলো খুবই কার্যকর”, বলেন সিরাল্ডো।

ক্রিম ভিত্তিক: সাধারণ থেকে শুষ্ক ত্বকের জন্য

ডা. কিং বলেন, “সাধারণ থেকে শুষ্ক, সব ধরনের ত্বকের জন্যই এই ধরনের ফেইসওয়াশ উপযোগী। এগুলো আরও মৃদুমাত্রার পরিষ্কারক। এতে মেলে ‘হিউমেকট্যান্টস’ যা ত্বককে আর্দ্র করে, আর ‘ইমোলিয়েন্টস’ ত্বকের রক্ষাকবচকে সুরক্ষা দেয়।”

ফলে ত্বক খুব বেশি শুষ্ক হতে না পারে। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের জন্য এগুলো বিশেষ উপকারী।

ফোম ভিত্তিক: মিশ্র ত্বকের জন্য

“জেল ও ক্রিম ধরনের ফেইসওয়াশের মধ্যবর্তী স্থানে আছে ফোম। এগুলোতে পানির মাত্রা বেশি থাকে তবে ‘হিউমেকট্যান্ট’, ‘ইমোলিয়েন্টস’ ও ‘সার্ফেকট্যান্টস’য়ের মাত্রা হয় বিভিন্ন। শুরুতে এগুলো জেল কিংবা ফোমের মতো দেখায়। তবে ত্বকে মাখালে ক্রমেই ‘ফোম’য়ের পরিণত হয়। সব ধরনের ত্বকের জন্যই এগুলো উপযোগী”, বলেন ডা. কিং।

তবে যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তাদের উচিত ‘সোডিয়াম লরল সালফেট (এসএসএস)’ এড়িয়ে চলা। এটি এক ধরনের ‘সার্ফেকট্যান্ট’ যা সংবেদনশীল ত্বকের অস্বস্তি তৈরি করে।”

মাইসেলার: সংবেদনশীল ত্বক ও মেইকআপ তোলার প্রথম ধাপের জন্য

ডা. কিং বলেন, “মাইসেলার ওয়াটার’য়ে থাকে ‘মাইসেল’ নামক ছোট ‘ক্লেঞ্জিং অয়েল মলিকিউল’। এই উপাদান ত্বকে লেগে থাকা ময়লা ও মেইকআপ তুলে আনবে ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক না করে। এটাই হল ‘মাইসেলার ওয়াটার’য়ের বৈশিষ্ট্য।”

ফলে এটা একাধারে ফেইসওয়াশ, মেইকআপ রিমুভার এবং ময়েশ্চারাইজার’য়ের কাজ করে। সবার জন্যই এটি উপাকারী। তবে যাদের ত্বক অন্য কোনো ফেইসওয়াশ সহ্য করে না তাদের জন্য এগুলো হবে বেশ কার্যকর।

এতে অ্যালকোহল থাকে না, তাই জ্বলুনির সম্ভাবনা নেই। যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তাদের উচিত হবে সুগন্ধিহীন ‘মাইসেলার ওয়াটার’ বেছে নেওয়া।

ক্লেঞ্জিং বাম: শুষ্ক ত্বক অথবা মেইকআপ তোলার জন্য

উচ্চমাত্রায় কার্যকর আর্দ্রতা যোগান দেয় এমন উপাদান নিয়ে তৈরি হয় ‘ক্লেঞ্জিং বাম’। ফলে সহজেই তা মেইকআপ ও অন্যান্য ময়লা গলিয়ে ত্বক থেকে তুলে আনতে পারে।

ধুয়ে ফেলার পরও একটা তৈলাক্তভাব রেখে যায় ‘ক্লেঞ্জিং বাম’। অনেকেই তা হয়ত পছন্দ করেন না, তবে এটা আসলে ত্বকের জন্য উপকারী, বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য।

তবে ত্বকে যদি ব্রণের আশঙ্কা বেশি থাকে তবে ‘ক্লেঞ্জিং বাম’ ব্যবহারের পর অন্য ফেইসওয়াশ ব্যবহার করে দ্বিতীয়বার পরিষ্কার করার পরামর্শ দেন, ডা. কিং।

ছবির মডেল: জোজো। মেইকআপ: আরিফ। ফটোগ্রাফার: তানভির খান। ছবি সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফিস্টুডিও।

আরও পড়ুন:

Also Read: ‘ডাবল ক্লিঞ্জিং’য়ের গুরুত্ব

Also Read: ত্বক পরিষ্কারের জন্য ‘মাইসেলার ওয়াটার’

Also Read: ত্বকের ধরন বুঝে মেইকআপ রিমুভার