কানে কম শোনা শুরু করলে নিরাময় করার কোনো পন্থা নেই।
Published : 16 Oct 2023, 06:42 PM
রাস্তাঘাট, কনসার্ট, মানুষ ভর্তি কোনো রেস্তোরাঁ- এসব জায়গায় একটা বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয় যায়, সেটা হল আওয়াজ।
শব্দ দূষণের কারণে শ্রবণশক্তির যে ক্ষয় হয় সেটা প্রায় এখন সবারই জানা। আর এই আধুনিক যুগে কানে হেডফোন গুঁজে গান শোনা কিংবা জুম মিটিং করার মতো বিষয়গুলো কানে চাপ ফেলে চলেছে প্রতিনিয়ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সি প্রায় ১শ’ কোটি মানুষ উচ্চ আওয়াজের কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
তাই এই সময়ে কানে ঠিক মতো শোনার বিষয়ে গুরুত্ব দিতেই হয়।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হিয়ারিংলাইফ’স’য়ের প্রধান ‘অডিওলজিস্ট’ লেসলি সয়েল্স বলেন, “সাধারণভাবেই আমরা এখন উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকি। হতে পারে সেটা রাস্তায় যানজটে কিংবা কনসার্টে। পাশাপাশি শব্দ দূষণটা টেনে ঘরের ভিতরেও নিয়ে এসেছি হেডফোন ব্যবহারের মাধ্যমে।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি পরামর্শ দেন, “সময় করে আমাদের শ্রবণ-শক্তি পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ একবার এই সমস্যা শুরু হলে আর ঠিক হওয়া সম্ভব নয়।”
আর কানের ওপর চাপ কমাতে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
উচ্চশব্দ-যুক্ত স্থান এড়ানো
ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে কোথাও খেতে যাওয়া বা সিনেমা দেখার মতো বিনোদনগুলো আনন্দদায়ক হলেও এসব জায়গাতে যাওয়া মানেই উচ্চশব্দের সংস্পর্শ পাওয়া।
এই ধরনের স্থানের কম যাওয়ার পরামর্শ দেন, ডা. সায়েল্স।
তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সাধু সন্যাসী হওয়াতো সম্ভব না। তাই পরিবার নিয়ে খেতে অন্তত খোলা প্রান্তরে পিকনিক ধরনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে একবার হলেও। অথব বেছে নেওয়া যেতে পারে কোলাহল মুক্ত ছোট পরিসরের রেস্তোরাঁ।
আবার বাসায় সিনেমা দেখার ব্যবস্থা থাকলে শব্দ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়ও থাকে হাতের রিমোর্টে।
শ্রবণ সুরক্ষক ব্যবহার করা
দর্শকপূর্ণ মাঠে গিয়ে খেলা দেখা কিংবা কনসার্টে ‘ইয়ারপ্লাগ’ ব্যবহারে উচ্চশব্দ কানে ঢোকার মাত্রা কমানো যায়। আবার এই ধরনের ‘হিয়ারিং প্রোটেকশন’ ব্যবহারে শব্দ শোনার মানেরও খুব একটা পরিবর্তন হয় না।
হতে পারে দেখতে খুব একটা ভালো লাগবে না। তবে বধির হয়ে গেলে আশপাশের অনেক কিছু থেকেই তখন বঞ্চিত হতে হবে।
হেডফোন ব্যবহারে ৬০/৬০ পদ্ধতি মানা
ব্যায়াম করা, ভীড় রাস্তায় বিরক্তিকর আওয়াজ এড়ানো কিংবা গান শুনতে ‘হেডফোন’, ‘ইয়ারবাডস’ ব্যবহার এখন অতি সাধারণ ঘটনা। তবে প্রতিবার আওয়াজ বাড়ানো বা দীর্ঘক্ষণ এসব ব্যবহারে কানের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
এক্ষেত্রে ৬০/৬০ নীতি অনুসরণ করা উচিত।
অর্থাৎ হেডফোন ব্যবহার করতে হবে দিনে ৬০ মিনিট। আর ৬০ শতাংশের বেশি ভলিউমের মাত্রা বাড়ানো যাবে না।
চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করানো
সাধারণত অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে শ্রবণশক্তির যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। শোনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা বোঝার জন্য পরীক্ষা করানো জরুরি।
ডা. সয়েল্স বলেন, “শ্রবণশক্তি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা উচিত। যদি ডাক্তার দেখতে পান, শ্রবণশক্তি ক্ষয় হচ্ছে ধীরে তবে পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় সে ব্যবস্থা নিতে পারবেন তিনি। আর যদি দেখা যায় ক্ষতির মাত্রা তীব্র তবে এর কারণগুলো বের করে দ্রুত ব্যবস্থা করতে পারবেন একজন অভিজ্ঞা চিকিৎসক।”
অনুভব, যোগাযোগ, দিক নির্দেশনা নানানভাবে আমরা কানে শোনার ওপর নির্ভরশীল। শ্রবণশক্তির যত্ন নিলে ও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন
হেডফোন ব্যবহারে শ্রবণশক্তির ক্ষয় প্রতিরোধে করণীয়