লক্ষণ যখন হজমে গণ্ডগোল

যদি হয় বদহজম মাথাও হবে গরম, শরীর হবে ভুখা-শুখা নরম।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 09:34 AM
Updated : 11 August 2022, 09:41 AM

দুয়েকবার গ্যাসের সমস্যা হতেই পারে। তবে সবসময় এই সমস্যায় ভোগা ভালো লক্ষণ নয়।

হজমে সমস্যা হলে শরীর পুষ্টি পাবে না। খাবারেও রুচি থাকবে না।

সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর হজমক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ থাকতে হজম ক্রিয়ার দিকে মনোযোগী হতে হবে।

যে কারণে হজম জরুরি

যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া’য়ে অবস্থিত স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘মার্সিওয়ান’য়ের চিকিৎসক স্টিফেন রিগস বলেন, “পাচন তন্ত্র খাবার থেকে পুষ্টি ও শক্তি আহরণ করে, দুষিত পদার্থ দূর করে, অবাঞ্ছিত ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস ধবংস করে, বর্জ্য পদার্থ দূর করে পানি ও পুষ্টি শোষণ করে এবং ভিটামিন ও খনিজ দেহে সরবারহ করে।”

হজম সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য

ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডা. রিগস আরও বলেন, “পুষ্টি শোষণের চেয়েও অন্ত্র ও সেখানে বসবাসকারী কোটি কোটি ব্যাক্টেরিয়া আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব রাখছে সে বিষয়ে আমরা সচেতন হচ্ছি। যা ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার রোগ, স্মৃতি হ্রাস, ক্যান্সার, হৃদরোগ থেকে শুরু করে সবকিছুর ওপর প্রভাব রাখে।”

এছাড়াও সিজোফ্রেনিয়া এবং বাইপোলার ডিজঅর্ডার থেকে শুরু করে উদ্বেগ, হতাশা এমনকি মানসিক ব্যাধিগুলোর ওপরেও প্রভাব ফেলে।”

সাধারণ হজমের সমস্যা

মার্সিওয়ান’য়ের ‘বারিয়াট্রিক সার্জন’ ডা. ম্যাট ফাবিয়ান বলেন, “রোগীদের মধ্যে বুক জ্বালাপোড়া করা, অরুচি, বমি, পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ঢেকুর, অপর্যাপ্ত বা অতিরিক্ত মল ত্যাগ এবং অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।”

হজম সমস্যা গুরুতর বোঝার পন্থা

ডা. ফাবিয়ানের মতে, “বিভিন্ন সমস্যা যেমন- গিলতে ব্যথা হওয়া, মল ত্যাগে সমস্যা, অথবা হঠাৎ পেটে ব্যথা হওয়া এবং তা দুই ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হওয়া ইত্যাদি হজমজনিত গুরুতর সমস্যা।”

এছাড়াও রাতে কাশির মধ্য দিয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া, বমি হওয়া, নিয়মিত বদহজম বা হজম না হওয়া, কালো বা রক্ত মল হওয়া হজমে সমস্যার অন্যতম লক্ষণ।

হজম সমস্যা সার্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়

ডা. ফাবিয়ান বলেন, “হজমসমস্যা কর্ম উৎপাদনশীলতা হ্রাস করতে পারে, সামাজিক পরিস্থিতিতে বিব্রতিকর অবস্থা তৈরি করে তুলতে পারে এবং ঘুমে ব্যঘাত করতে পারে।”

ভয়ানক দিক হল তা মৃত্যু ঝুঁকি ঘটাতে পারে বা অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ এমনকি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

শরীর যেভাবে সাবধান করে

ডা. রিগস ব্যাখ্যা করেন, "পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, অত্যধিক গ্যাস, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া এবং হজমতন্ত্রে ব্যাঘাত ইত্যাদি এর অন্যতম লক্ষণ। যদিও এর চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয় জটিল হতে পারে এবং এই লক্ষণগুলোর জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হতে পারে।”

তবে চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দেওয়ার ফলে এক্ষেত্রে উন্নতি দেখা দেয়।

হজমে সমস্যার কারণ

ডা. ফাবিয়ান জানান, “হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান না করা বা গিলে ফেলার আগে সঠিকভাবে খাবার না চিবানো।”

এছাড়াও, অ্যাসিডযুক্ত পানীয় পান, ‘নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ’, সংক্রমণ, খাবারে অ্যালার্জি, পিত্তথলির পাথর, ‘হাইটাল হার্নিয়া’, অতিরিক্ত গাঁজানো খাবার যেমন- ল্যাকটোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্লুটেইন এবং মটরশুঁটি বা শাকসবজি ইত্যাদি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।

সমস্যা সমাধের উপায়

“পাচনজনিত সমস্যা রোধ করার সবচেয়ে ভালো উপায়গুলোর মধ্যে একটি হল প্রতিদিনের রুটিন অনুসরণ করা। যার মধ্যে থাকতে পারে রাত ১০টায় ঘুমানো এবং সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠা”, পরামর্শ দেন ডা. ফাবিয়া।

সকালে কাজ শুরুর আগে ৩২ আউন্স পানি পান করা, দিনে ৩০ মিনিট শরীর চর্চা করা, দিনে আরও ৩২ আউন্স পানি পান করার অভ্যাসও গড়তে হবে।

এছাড়া বেলা ছয়টার পরে বিশেষ কিছু খাবার না খাওয়া যেমন- গাঁজানো খাবার ল্যাক্টোজ, গ্লুটেন, মটর ও সবজি। এগুলো ব্যথা, ফোলাভাব, গ্যাস, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য অস্বস্তি সৃষ্টি করে থাকে।

আরও কিছু

ডা. ফ্যাবিয়ান কিছু বিষয় অনুসরণ করার পরামর্শ দেন।

- প্রতিদিন ৬০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া।

- দৈনিক একটা ফল খাওয়া।

- আঁশ ধরনের সবজি খাওয়া।

- ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণুতা বিবেচনা করে পনির বা দই খাওয়া। দুধে এদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ল্যাক্টোজ থাকে।

- দেহের ওজন সবসময় স্বাভাবিক রাখা।

- কার্বোনেইটেড পানীয় বাদ দেয়া।

- ফলের স্বাদের কৃত্রিম জুস বা পানীয় দিনভর না খাওয়া।

- অতিরিক্ত ক্যাফেইন এড়ানো।

আরও পড়ুন

Also Read: যেসব খাবার হজম করা কঠিন

Also Read: হজম সহায়ক খাবার

Also Read: হজম বদহজমের খাবারগুলো

Also Read: উদ্ভিজ্জ খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার পন্থা