কারও সঙ্গে ঝগড়া শুরু হতে চলেছে কিনা সেটা বোঝার রয়েছে উপায়।
Published : 28 Jan 2023, 03:03 PM
ঝগড়া এড়াতে চাইলে অপর পক্ষের কয়েকটা ভঙ্গি খেয়াল করুন।
কারণ রাগলে মানুষের আচরণ পরিবর্তণ হয়।
আর সেটা বোঝার দুটি উপায় আছে বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা, প্রথমত কলহের ধরন আর দ্বিতীয়ত অঙ্গভঙ্গি।
যুক্তরাষ্ট্রের থেরাপিস্ট মেলিসা দিভারিস থম্পসন বলেন, “আলোচনা আর ঝগড়ার মধ্যে পার্থক্যটা প্রথমে বোঝা উচিত। আলোচনায় দুজন মানুষ শান্ত গলায় একে অপরের মত প্রকাশ করে। কিন্তু ঝগড়ায় থাকে উত্তেজনা।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “যদি মনে হয় নিজেকে রক্ষা করতে হবে, আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তাহলে আপনি ঝগড়া করছেন।”
ঝগড়া শুরু হওয়ার ইঙ্গিত
কলহ কখন শুরু হচ্ছে সেটা যদি অঙ্গভঙ্গি থেকে বুঝে ফেলতে পারেন, তবে কীভাবে এগোবেন নাকি একেবারেই এড়িয়ে যাবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।
দিভারিস বলেন, “হুমকি কিংবা মানসিক চাপে প্রতিক্রিয়া কী হবে তা মানুষভেদে ভিন্ন। কিছু মানুষ রেগে যায়, উচ্চস্বরে কথা বলে, পেশি শক্ত হয়, ঘাম হয়, চোখ বড় হয়ে যায়, নাখের পাশা ফুলে ওঠে। আবার কিছু মানুষ কষ্ট পেয়ে দূরে সরে যায়, একা সময় কাটাতে চায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গভঙ্গি বিশেষজ্ঞ ব্লাঙ্কা কব বলেন, “মানুষভেদে প্রতিক্রিয়া যেহেতু ভিন্ন তাই কারও সঙ্গে ঝগড়া জড়িয়ে গেছেন কি-না তা বোঝার জন্য ওই ব্যক্তি সাধারণ আচরণ আর বর্তমান আচরণের মধ্যে তুলনা করতে হবে।”
যদি বর্তমান আচরণ ভিন্ন হয় তবেই বুঝতে হবে এখন ঝগড়া শুরু হবে। একজন শান্ত মানুষকে যদি উত্তেজিত হয়ে উঠতে দেখেন তবে বুঝে নিতে হবে বড় কোনো গোলমাল বেধেছে।
আবার প্রাসঙ্গিক বিষয়টার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আলোচনা বা ঝগড়ার বিষয়বস্তু কী সেটা বিবেচনা করেই তবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। পরিস্থিতি পুরোপুরি না বুঝেই আলোচনা থেকে সরে গেলে বা উত্তেজিত হয়ে পড়লে বিপদ আরও বাড়বে।
ঝগড়া থেকে সরে আসতে হবে এমন ইঙ্গিত
বক্র হাসি: দুই ঠোঁটের কোণার মধ্যে একটি যদি অপরটির তুলনায় ওপরে থাকে কথা বলার সময়, অনেকটা তীর্যক মুচকি হাসি তবে তা থেকে বোঝা যায় অপরজন প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আপনার চাইতে বেশি জ্ঞান রাখেন বা তর্কে তিনি আপনার চাইতে এগিয়ে থাকবেন।
এই অবস্থায় আপনার মতামতকে সে গুরুত্ব দেবে না, সম্মান করবেন না। এমন মানুষের সঙ্গে ঝগড়ায় না জড়ানেই ভালো।
রাগ চেপে রাখা: কেউ যদি নিজের রাগ লুকাতে চায় তবুও তার কিছু লক্ষণ চেহারায় ফুটে ওঠেই। যেমন- চোখের ভ্রু একটু নিচে নেমে সোজা হয়ে থাকে। চোখের পাতার নিচের অংশ ও ঠোঁট শক্ত হয়ে থাকে।
সুস্থ আলাপচারিতার বৈশিষ্ট্য হল- চেহারায় সকল আবেগ ফুটে উঠবে ইতিবাচকভাবে। তাই কেউ যদি রাগান্বিত অবস্থায় রাগ লুকিয়ে রাখতে চায় তবে সেই ঝগড়ায় জড়ানো যাবে না।
আঙ্গুল তুলে কথা বলা: কব বলেন, “কেউ যদি আঙ্গুল তুলে কোনো কথা বা অনুভূতিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়, তবে বুঝতে হবে তার রাগের মাত্রা বাড়ছে। আগ্রাসি মনোভাবের লক্ষণ হলো এই আঙ্গুল তুলে কথা বলা।
এই পরিস্থিতিতে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কোনো কথা বলাই বৃথা। কারণ তার সঙ্গে তখন কোনো আলোচনাই ইতিবাচক দিকে যাবে না।
চোখ ঘোরানো: কব বলেন, “চোখ ঘোরানোর কারণটা ধরতে হবে। বিরক্তি নিয়ে আর ক্লান্তি- দুটোরই বহিঃপ্রকাশ হতে পারে এই চোখ ঘোরানো। তবে এটাও ঠিক যে এই অঙ্গভঙ্গি সকল পরিস্থিতিতেই বেয়াদবি বা অপমানসূচক আচরণ।”
কাঁধ ছেড়ে দেওয়া: কব বলেন, “ক্লান্তির বহিঃপ্রকাশ এই অঙ্গভঙ্গি। ক্লান্ত অবস্থায় কারও সঙ্গে ঝগড়া করা কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। কারণ ওই ব্যক্তি আপনার সঙ্গে আলোচনা সমালোচনা, ঝগড়া কোনো কিছুতেই যোগ দেবে না। শারীরিকভাবে তিনি আছেন কিন্তু মানসিকভাবে তিনি অনুপস্থিত।”
শরীর ঘোরানো: কথা বলার সময় কেউ যদি আপনার দিক থেকে সামান্য ঘুরে যায় তাহলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তি সরে যেতে চাইছে।
সামান্য পা ঘোরানো, কোমর ঘোরানো, কাঁধ ঘোরানো সবকিছুই ইঙ্গিত করে যে, ওই ব্যক্তি পরিস্থিতি থেকে সরে যেতে চাচ্ছেন। মানে তার আর এই বিষয়ে কথা বলা আগ্রহ নেই।
আরও পড়ুন
ঝগড়া থেকেও ভালো কিছু হতে পারে, তবে…