প্রায় দশ রকমের সবজি রয়েছে যেগুলো দেহের বাড়তি ওজন কমাতে বেশি সহায়ক।
Published : 24 May 2023, 01:55 PM
সবজি পুষ্টিকর এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
`হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেল্থ’ অনুযায়ী, খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত সবজি থাকা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এমনকি হজম ক্রিয়াও উন্নত হয়।
এসব গুণাগুণ ছাড়াও সবজি খাওয়া ওজন কমাতে সহায়ক।
‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’য়ের প্রকাশিত গবেষণানুযায়ী, সবজি খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি ওজন কমার গতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সবজিতে আশেঁর পরিমাণ বেশি এবং ক্যালরির পরিমাণ কম। থাকে জলীয় উপাদান যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রেখে বাড়তি খাবারের চাহিদা কমায়। ফলে ওজন কমে।
সবজির আঁশ ওজন কমার পাশাপাশি হজমক্রিয়া উন্নত করে, অন্ত্র সুস্থ রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
গাজর
পুষ্টিমান: প্রতি এক কাপ গাজর কুচিতে থাকে ৫২.১ ক্যালরি, ০.৩ গ্রাম চর্বি, ৮৩.৩ মি.লি.গ্রাম সোডিয়াম, ১২.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (৩.৫৮ আঁশ, ৬ গ্রাম শর্করা), ১.১৯ গ্রাম প্রোটিন।
কেবল চোখের জন্য উপকারী নয় গাজরে থাকা ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান ওজন কমাতেও সহায়ক। প্রতি কাপ গাজরে ৩.৫ গ্রামের বেশি আঁশ থাকে।
‘ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, কম ক্যালরিযুক্ত খাবার হিসেবে গাজর পেট ভরা রাখে এবং কম ক্যালরি গ্রহণ করায় তা ওজন কমাতেও সহায়তা করে।
‘জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গাজর হজম ক্রিয়া উন্নত করে এবং নিয়মিত খাওয়ার ফলে ওজন কমে।
এছাড়াও, গাজরে আছে শর্করা যা খাবারে মিষ্টিভাব আনে।
প্রতি এক কাপ গাজরে ছয় গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা খাওয়ার মাধ্যমে মিষ্টি কিছু খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমে এবং বাড়তি শর্করা গ্রহণের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
মটর
পুষ্টিমান: প্রতি এক কাপ মটরে ১১৭ ক্যালরি, ০/৫৮ গ্রাম চর্বি, ৭.২৫ মি.লি.গ্রাম সোডিয়াম, ২০.৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (৮.২৬ গ্রাম আঁশ, ৮.২২ গ্রাম শর্করা), ৭.৮৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
মটর দেখতে ছোট হলেও পুষ্টিগুণে কম নয়। এক কাপ মটরে আট গ্রামের বেশি আঁশ থাকে যা সর্বোচ্চ আঁশবহুল সবজিগুলোর মধ্যে একটি।
শুধু তাই নয়, এতে প্রোটিনের পরিমাণও বেশি। প্রতি কাপ মটরে আট গ্রাম প্রোটিন থাকে। অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যে, মটর ওজন কমাতে সহায়ক। কারণ, এর প্রোটিন পেট ভরা রাখে, ক্ষুধার হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেটে মেদ জমতে বাধা দেয়।
মিষ্টি আলু
পুষ্টিমান: প্রতি এক কাপ মিষ্টি আলুতে ১৮০ ক্যালরি, ০.৩ গ্রাম চর্বি, ৭২ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম, ৪১.৪ গ্রাম কার্ব (৬.৬ গ্রাম আঁশ, ১৩ গ্রাম শর্করা), ৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
আঁশ ও প্রোটিন সমৃদ্ধ কোনো সবজি খেতে চাইলে মিষ্টি আলু সেরা। অন্যান্য সবজির তুলনায় এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও প্রাকৃতিক চিনি। বিশেষজ্ঞের নিষেধ ছাড়া এই খাবার এড়িয়ে চলা উচিত নয়।
মিষ্টি আলু উচ্চ আঁশযুক্ত। তাই ক্যালরি ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। এতে থাকা ‘ভিসকাস’ নামক আঁশ পরিপাক তন্ত্রে জিলেটিনাস পদার্থ তৈরি করে যা হজমক্রিয়া ধীর করে। ফলে পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ।
গাজরের মতো এতেও আছে প্রাকৃতিক চিনি যা মিষ্টি খাবারের চাহিদা মেটায়। মিষ্টি আলু বাড়তি শর্করা যোগ করা ছাড়াই মিষ্টি খাবারের চাহিদা পূরণ করে।
ফুল কপি
পুষ্টিমান: প্রতি এক কাপ ফুলকপিতে ৩৯.৬ ক্যালরি, ০.৩৮ গ্রাম চর্বি, ৩২.১ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম, ৭.৭৮ গ্রাম কার্ব (৪.১ গ্রাম আঁশ) ৩.৭৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
ফুলকপিতে ক্যালরির পরিমাণ কম এবং কিছু পরিমাণে আঁশ থাকে । ‘ফাইনালি ফুল, ফাইনালি স্লিম’ বইয়ের মার্কিন লেখক ও পুষ্টিবিদ লিসা ইয়াং’য়ের মতে, “ওজন কমানোর জন্য এটা একটা চমৎকার সমন্বয়। ”
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “ফুলকপি বিভিন্ন রকম খাবারে যোগ করা যায় যেমন- সুপে অথবা যে কোনো খাবারের সাইড ডিশ হিসেবে ফুলকপি অনন্য।“
ব্রকলি
পুষ্টিমান: প্রতি কাপ ব্রকলিতে ১৯.৪ ক্যালরি, ০.৬৩ গ্রাম চর্বি, ৬.৬ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম, ৩.৩৫ গ্রাম কার্ব (২.২ গ্রাম আঁশ, ০.৭৪ গ্রাম শর্করা), ১ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
ব্রকলি কাঁচা, ভাপানো বা রান্না নানানভাবেই খাওয়া যায়। ওজন কমানোর চেষ্টা করলে ব্রকলি খাওয়া উপকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যালেন্স ওয়ান সাপ্লিমেন্ট’য়ের একজন পরামর্শদাতা পুষ্টিবিদ ট্রিস্টা বেস্ট বলেন, “ব্রকলিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রদাহ কমায়। এতে থাকা পূষ্টি উপাদান দেহে চমৎকার কাজ করে।”
গবেষণায় দেখা যায়, দীর্ঘসস্থায়ী প্রদাহ ওজন বাড়ার কারণ। তাই প্রদাহ কমাতে ওজন কমাতে হবে।
“ব্রকলি দেহে সালফোরাফেন সরবারহ করে, এটা একটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উদ্ভিজ্জ যৌগ যা প্রদাহ বিরোধি হিসেবে কাজ করে”, জানান ট্রিস্টা বেস্ট।
ক্যাপ্সিকাম
পুষ্টিমান: প্রতি এক কাপ ক্যাপ্সিকামে থাকে ২৩.৯ ক্যালরি, ০.২৭ গ্রাম চর্বি, ৩.৬৮ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম, ৫.৫ গ্রাম কার্ব (১.৯৩ গ্রাম আঁশ, ৩.৮৬ গ্রাম শর্করা), ০.৯১ গ্রাম প্রোটিন।
বেস্ট বলেন, “ওজন কমাতে ক্যাপ্সিকাম উপকারী। এতে ক্যালরির মাত্রা কম ও পুষ্টির মাত্রা বেশি। এগুলো খাওয়া অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা রাখে এবং সারাদিন অতি ভোজনের ঝুঁকি কমায়।”
বেস্ট লক্ষ করে দেখেছেন যে, ওজন কমানোর পাশাপাশি পুষ্টিকর হওয়াতে ক্যাপ্সিকাম নানান রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
হলুদ ক্যাপ্সিকামে কমলার চেয়ে বেশি ভিটামিন সি থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও লৌহ শোষণে সহায়তা করে।
অ্যালিয়ামস
প্রতি এক কাপ পেঁয়াজ কুচিতে ৬৪ ক্যালরি, ০.১৬ গ্রাম চর্বি, ৬.৪ মি,লি, গ্রাম সোডিয়াম, ১৪.৯ গ্রাম কার্ব (২.৭ গ্রাম আঁশ, ৬.৭৮ গ্রাম চিনি), ১.৭৮ গ্রাম প্রোটিন আছে।
পেঁয়াজ, পেঁয়াজ কলি, রসুনের মতো সবজিতে অ্যালিয়ামস থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এবং ‘হোলিস্টিক হেল্থ কোচ’ জোনাথন আইসবিল একই প্রতিবেদনে বলেন, “এগুলো কম ক্যালরি, উচ্চ গন্ধ যুক্ত যা সস, সিজনিং ও সালাদে ব্যবহার করা যায়। মোট ক্যালরি কমানোর অন্যতম সহজ উপায় হল প্রক্রিয়াজাত খাবার, সস, সুপ ও মোড়কজাত খাবার বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ খাবার খাওয়া। এই ধরনের খাবার খেতে মজাদার হলেও পুষ্টিগুণ সামান্য থাকে এবং ক্যালরির মাত্রা বেশি থাকে।”
আইসবিল বলেন, “পেঁয়াজ প্রোবায়োটিক খাবারের ভালো উৎস যা স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য বজায় রেখে হজমে সহায়তা করে।”
লাল মরিচ
পুষ্টিমান: প্রতি এক কাপ লাল মরিচে আছে ১৮ ক্যালরি, ০.১৯ গ্রাম চর্বি, ৪.০৫ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম, ৩.৯৬ গ্রাম কার্ব (০.৬৭ গ্রাম আঁশ, ২.৩৮ গ্রাম শর্করা), ০.৮৪ গ্রাম প্রোটিন।
আইসবিল বলেন, “মসলাদার গরম রান্নায় আমি ঝাল লাল মরিচ পছন্দ করি। মজার বিষয় হল ক্যাপ্সাইসিন সমৃদ্ধ সবজি মন ভালো রাখার পাশপাশি বিপাক বাড়ায় এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এটা এন্ডোর্ফিন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে ক্যালরি পোড়াতে সহায়তা করে। ক্যাপ্সাইসিন দেহের তাপমাত্রা বাড়ায়, ফলে কিছু ক্যালরি খরচ হয়, এটা ‘থার্মিক এফেক্ট’ নামে পরিচিত।”
বিট
পুষ্টিমান: প্রতি এক কাপ টুকরা করা বিটে ৫২.৭ ক্যালরি, ০.২৩ গ্রাম ফ্যাট, ৩৩০ মি.লি. গ্রাম সোডিয়াম, ১২.৩ গ্রাম কার্ব (৩.০৬ গ্রাম আঁশ, ৯.৩৭ গ্রাম শর্করা), ১.৫৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
আইসবিল বলেন, “বিট নাইট্রেটস সমৃদ্ধ যা দেহে নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ায়। ফলে খেলোয়াড়দের বাড়তি শরীরচর্চা করার শক্তি যোগায়, পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ বজায় রাখে এবং দেহের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।”
তাই, দেহের চর্বি ও ওজন কমাতে খাবার তালিকায় বিট রাখা উপকারী।
তিনি আরও বলেন, “অনেকেই বিটের জুস পছন্দ করেন। তাছাড়া সবজির সাথে বা সালাদে, এমনকি স্মুদি তৈরিতে বিট যোগ করা যায়।”
আরও পড়ুন