রক্তে শর্করার মাত্রা কম রাখার প্রাকৃতিক পন্থা

খাদ্যাভ্যাস আর শরীরচর্চার মাধ্যমে রক্তের শর্করার লাগাম টানা যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2022, 06:18 AM
Updated : 24 August 2022, 06:18 AM

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে বলা হয় ‘হাইপারগ্লাইসেমিয়া’। এই সমস্যার পরিণতিতে দেখা দেয় ডায়াবেটিস। আর তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে অজস্র রোগ শরীরে বাসা বাঁধবে।

ফ্লোরিডার ‘দ্য মেসোথেলিওমা সেন্টার’য়ের ‘রেজিস্টার্ড নার্স’ শন মার্শেজ। তার বিশেষত্ব হল ‘ওনকোলজি ক্লিনিকাল ট্রায়াল’। আর সরাসরি রোগীকে সেবা দিচ্ছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে।

প্রাকৃতিকভাবে কীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই সম্পর্কে জানিয়েছেন তিনি।

যা জানতে হবে

ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্শেজ বলেন, “ব্লাড সুগার’, ‘ব্লাড গ্লুকোজ’ দুটোই রক্তে শর্করার মাত্রাকে বোঝায়। শরীর শর্করাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে কর্মশক্তি তৈরি করতে পারছে কি-না সেটা জানা যায় রক্তের শর্করার মাত্রা দেখে। খুব কম হলে খাদ্যাভ্যাস আরও শর্করা বাড়াতে হবে আর বেশি হলে শর্করার খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।”

মোটকথা, শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এভাবে যদি শর্করা নিয়ন্ত্রণ না হয় তাহলে বুঝতে হবে কোনো সমস্যা হয়েছে। যেমন ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। এই সমস্যা হলে শরীর শর্করা ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করতে পারেনা।

রক্তে উচ্চমাত্রায় শর্করা থাকার ঝুঁকি

মার্শেজ বলেন, “রক্তে অতিরিক্ত শর্করা শরীরের সংবেদনশীল টিস্যু যেমন- রক্তনালী, স্নায়ুকোষ ইত্যাদির ক্ষতি করে। হৃদরোগ, বৃক্ক নষ্ট হওয়া, দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া, ‘নিউরোপ্যাথি’, দাঁত ও মাড়ির সমস্যা, হাড় ও হাড়ের জোড়ের সমস্যা এসব কিছুর পেছনেই নীরবে কলকাঠি নাড়ে রক্তে থাকা অতিরিক্ত শর্করা।”

তাই রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে এসব দূরারোগ্য ব্যধি থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। আর ভারসাম্য নষ্ট হলে শরীর পৌঁছে যায় ‘ডায়াবেটিস কিটোঅ্যাসিডোসিস’ নামক এক পর্যায়ে।

এই পরিস্থিতিতে শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য চর্বি ভাঙতে শুরু করে এবং সেই প্রক্রিয়ার উপজাত হিসেবে শরীরে তৈরি হয় ‘কিটোনেস’ নামক বিষাক্ত উপাদান।

এই উপাদান রক্তে জমতে থাকে এবং ডেকে আনে ‘ডায়াবেটিক কোমা’ এবং মৃত্যু।

রক্তে শর্করার মাত্রা জানার পরীক্ষা

“দুটি পরীক্ষা করা হয় রক্তে শর্করার মাত্রা জানতে। একটি হলো খালি পেটে বা খাওয়ার আগে রক্তে শর্করা মাত্রা নির্ণয়, একে বলা হয় ‘ফাস্টিং ব্লাড সুগার’। আর ভরা পেটে বা খাওয়া পরে রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ণয়, বলা হয় ‘নন-ফাস্টিং ব্লাগ সুগার”, বলেন মার্শেজ।

আট ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর ‘ফাস্টিং ব্লাগ সুগার’ মাপতে হয়, আদর্শ মাত্রা হলো ১০০ এমজি/ডিএল’য়ের নিচে। আর খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ‘নন ফাস্টিং ব্লাগ সুগার নির্ণয় করা হয়, আদর্শ মাত্রা ১৪০ এমজি/ডিএল’য়ে নিচে।

দিনের যে কোনো সময় রক্তে শর্করার মাত্রা যদি ২০০ এমজি/ডিএল’য়ের বেশি হয় তাহলে তা অস্বাভাবিক। আর রক্তে শর্করার মাত্রা যদি ৬০ এমজি/ডিএল’য়ের নিচে নেমে যায় তাহলে তা মারাত্মক বিপজ্জনক।

করণীয়

নিয়মিত শরীরচর্চা: মার্শেজের পরামর্শ হল, “শরীর রক্ত থেকে শর্করা নিয়ে কর্মশক্তি উৎপাদন করে। তাই রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখার দারুণ একটি উপায় হল নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম। হাঁটা, দৌড়, ভারোত্তলন, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা এই কাজগুলোতে রক্তের শর্করা খরচ হয়। এতে শরীরের ‘ইনসুলিন’য়ের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।”

ভোজ্য আঁশ: তিনি আরও বলেন, “ভোজ্য আঁশ শর্করা শোষণ আর কার্বোহাইড্রেইট হজম, দুটোরই গতি কমায়। ফলে খাওয়ার পর হঠাৎ করেই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।”

রক্তে শর্করা যদি ধীরে বাড়ে তবে শরীর ‘ইনসুলিন’য়ের প্রতি সাড়া দেওয়ার সুযোগ পায়। এই পুরো প্রক্রিয়ার সহায়ক প্রভাব রাখতে পারে শুধুই ‘সল্যুবল ফাইবার’ বা পানিতে দ্রবণীয় ভোজ্য আঁশ।

ফল, সবজি, লতা ও শষ্যজাতীয় খাবার থেকে মিলবে এই ধরনের আঁশ। প্রতিদিন প্রতি ১০০০ গ্রাম ক্যালরির জন্য ১৪ গ্রাম ভোজ্য আঁশ শরীরের প্রয়োজন।

একবারে বেশি খাওয়া যাবে না: “হঠাৎ কোনো বেলায় অতিরিক্ত খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা চট করে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে”, বলেন মার্শেজ।

“সেখান থেকে শর্করার মাত্রাকে ‘ফাস্টিং ব্লাড সুগার’য়ের মাত্রায় নামিয়ে আনতে শরীরের ওপর প্রচুর চাপ পড়ে। তাই একবারে অনেক খাবার খাওয়া যাবে না, বিরতি দিয়ে খেতে হবে।”

কম করে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ হয়, কমে ‘টাইপ টু ডায়াবেটিস’য়ের আশঙ্কা। প্রতিবেলার খাবারের মাঝে হালকা স্ন্যাকস খাওয়া, ছোট বাসনে খাওয়া, ধীরে খাওয়া এই অভ্যাসগুলো খাবার খাওয়া পরিমাণ কমায়।

কার্বোহাইড্রেট রয়ে সয়ে: মার্শেজ বলেন, “সব ধরনের খাবারের মধ্যে কার্বোহাইড্রেইট রক্তের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে দ্রুত এবং ‘ইনসুলিন’য়ের কার্যকারিতাকেও দমিয়ে দিতে পারে। আর অতিরিক্ত শর্করা ওপর বাড়তি কার্বোহাইড্রেইট পেটে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা ক্রমেই নষ্ট হতে থাকে।”

এজন্য প্রক্রিয়াজাত ও পরিশোধিত রুটি, স্নেহজাতীয় খাবার, নুডুলস ইত্যাদি কম খেতে হবে। আর পরিপূর্ণ শষ্য বেশি খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, কার্বোহাইড্রেইট কম খেতে বলা হয়েছে, একেবারে বাদ দিতে বলা হয়নি।

প্রোবায়োটিক: মার্শেজ জানান, “হজমতন্ত্রে স্বাস্থ্যকর বা উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রা বাড়ায় প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার। ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ ও ‘প্রি-ডায়াবেটিস’য়ের একটি সূচক হল ‘এইচবিএওয়ানসি’। আর সেটার মাত্রাই কমায় এই ধরনের খাবার। ফলে রক্তে শর্করা মাত্রা স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে ধরে রাখাকে সহজ করে তোলে।

টকদই, পনির, কিমচি, সাওয়ারক্রাউট, মিসো, তেম্পে ইত্যাদি হল ‘প্রোবায়োটিক’ ধরনের খাবার।

আরও পড়ুন:

Also Read: ওজন কমাতে বেশি কার্যকর ওটমিল

Also Read: রক্তে শর্করার মাত্রা ভুল আসার কারণ

Also Read: ডায়াবেটিকরা যেসব ফল খেতে পারেন

Also Read: ডায়াবেটিস হওয়ার পূর্বাভাস