ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা নির্ণয়ের প্রয়োজন হয়। আর এর জন্য বেশিরভাগ রোগী ঘরেই ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র ব্যবহার করেন।
যদিও এই যন্ত্রের ফলাফলকে শতভাগ সঠিক ধরা যায় না; সঠিক মাত্রার অনেকটা কাছাকাছি তা যেতে পারে।
তবে বিভিন্ন কারণে এই যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় ভুল আসতে পারে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এমনটা হওয়া সম্ভাব্য কিছু কারণ।
মেয়াদ শেষ হওয়া স্ট্রিপ: প্রতিটি স্ট্রিপের বাক্সেই মেয়াদ লেখা থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পর তা ব্যবহার ভুল ফলাফল দেয় ডায়াবেটিস মাপার এই যন্ত্রগুলো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মেয়াদ হয় প্যাকেট খোলার পর একমাস। তবে আপনার স্ট্রিপের মেয়াদ প্যাকেট থেকে দেখে নিতে হবে সবসময়। আর স্ট্রিপ রাখতে হয় কক্ষ তাপমাত্রায় শুষ্ক স্থানে। সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসলে স্ট্রিপ দ্রুত নষ্ট হয়।
অত্যধিক গরম কিংবা ঠাণ্ডা: শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হলে কিংবা খুব কম হলে ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্রের ‘রিডিং’ ভুল আসতে পারে। প্রচণ্ড গরম ডায়াবেটিস ‘রিডিং’ আসে বেশি আর শীতে কাতর থাকলে ‘রিডিং’ আসবে কম।
তাই শীতের দিন হোক আর প্রচণ্ড গরমের দিন শরীরকে আরামদায়ক তাপমাত্রায় এনে তবেই ডায়াবেটিস মাপতে হবে।
আঙুলে পরিষ্কার না হওয়া: ডায়াবেটিস মাপার জন্য সচরাচর হাতের আঙুল থেকেই এক ফোঁটা রক্ত নেওয়া হয়। যেখান থেকে এই রক্ত নেওয়া হল সেই স্থানটি পুরোপুরি পরিষ্কার করা না হলে রক্তে যেকোনো কিছু মিশে গেলেই ‘রিডিং’ ভুল আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
আবার শুধু পরিষ্কার করলেই হবে না, হাত ভালোভাবে শুকাতেও হবে। কারণ ওই এক ফোঁটা রক্তে পানি মিশে গিয়ে রক্ত পাতলা হয়ে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ভুল আসবে।
যন্ত্রে থাকা ধুলা: যদিও বর্তমান যুগে অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ডায়াবেটিস পরিমাপক যন্ত্র পাওয়া যায়। তবে সাশ্রয়ী যন্ত্রগুলোর অধিকাংশই ধুলাবালির কারণে ভুল ‘রিডিং’ দেয়। তাই মাপার আগে পরে যন্ত্রটিকে পরিষ্কার করে প্যাকেট করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
শরীরে পানির অভাব: পানিশূন্যতার কারণে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যায়। আর একারণেও রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ ভুল দেখাতে পারে। তাই ডায়াবেটিস মাপার কিছুক্ষণ আগে এক গ্লাস পানি পান করে নেওয়া উচিত।
স্ট্রিপে পর্যাপ্ত রক্ত না থাকা: স্ট্রিপের খুব সামান্য পরিমাণ রক্ত প্রয়োজন হয়। আর তাতে ব্যথাও প্রায় লাগে না বললেই চলে। তাই আঙুলের মাথায় ছিদ্র করার পর আলতো চাপ একটি বড় ফোঁটা পরিমাণ রক্ত বের করে সেখানে স্ট্রিপটা স্পর্শ করাতে হবে। এই পুরো কাজটা একবারে করতে হবে। প্রথমবার ভালোভাবে না হলে একই স্ট্রিপে দ্বিতীয়বার রক্ত লাগালেও ভুল ‘রিডিং’ আসতে পারে।
পরিমাপের সময়: অনেকেই খাওয়ার পাঁচ মিনিট পরেই ডায়াবেটিস মাপতে বসে পড়েন। এমনটা করলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি দেখাবে, যা আপনাকে ভড়কে দিতে পারে। তাই খাওয়া ঠিক কতক্ষণ পর ডায়াবেটিস মাপতে সেটা জেনে নিতে হবে চিকিৎসকের কাছ থেকে।
তবে গড় হিসেবে খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর মাপলে মোটামুটি নির্ভুল ‘রিডিং’ পাওয়া যায় বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন