হাত ধুলে তালু চুলকায়। শুষ্কতায় ত্বকে হয় অস্বস্তি। একজিমা হিসেবে চিহ্নিত ত্বকের এই ধরনের সমস্যা কমানো যায় বিভিন্ন উপাদান সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহারে।
Published : 21 Oct 2022, 07:33 PM
ত্বকে ছোট ছোট লালচে স্ফোট আর চুলকানি দেখা দিতে পারে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে।
শীত আসার আগ থেকেই পরিবেশ শুষ্ক হওয়া শুরু করে। এই সময়ে অনেকেরই ত্বকে শুষ্কভাব দেখা দেয়। কারও আবার হাত ধুলেও চুলকানি শুরু হয়ে যায়।
চামড়ার এই সমস্যাকে ‘একজিমা’ হিসেবে চিহ্নিত করে দোষারোপ করা হলেও প্রধান কারণ হল ত্বকের আর্দ্রতার অভাব।
এই বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভার্চুয়াল ডার্মাটোলজি প্র্যাকটিস স্কিন রিফাইনারি’র প্রতিষ্ঠাতা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জয়েস পার্ক বলেন, “একজিমা ত্বকে লাল চুলকানিযুক্ত স্ফীত ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়। এর বিস্তার প্রতিরোধ করতে ও চিকিত্সার জন্য ত্বকের সুরক্ষার স্তর মজবুত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।”
ত্বকে নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা, আর্দ্র রাখা এবং সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞান-সমর্থিত উপাদান ব্যবহার করা ত্বককে চুলকানির আক্রমণ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে।
একজিমা সারাতে উপকারী কয়েকটা উপাদান ব্যবহার ছাড়াও ডা. পার্ক পরামর্শ দেন যে, চুলকালেও না চুলকাতে।
তার কথায়, “আপনি যখন চুলকানির তাগিদ অনুভব করেন, তখন তা করবেন না। যত বেশি চুলকাবেন, দুর্ভাগ্যবশত ত্বকে আঘাতের ঝুঁকি তত বেশি হবে। যা পরে সংক্রমিত হতে পারে।”
চুলকানির অস্বস্তি কমাতে নিচের উপাদাগুলো উপকারী।
সেরামাইডস: সুরক্ষার স্তর ত্বককে বাইরের পরিবেশ, অ্যালার্জেন ও ব্যাক্টেরিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখে। সুরক্ষার স্তর দুর্বল হয়ে গেলে ত্বকে একজিমা অ্যালার্জির আক্রমণ সহজ হয়। ফলে ত্বকে জ্বলুনি ও প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
নিউ ইয়র্ক’য়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ টিফানি জো লিবি বলেন, “ত্বকের সুরক্ষার স্তর দৃঢ় করতে সেরামাইড ব্যবহার করা উপকারী। এই উপাদান ত্বকে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হওয়া ‘লিপিড’ যা ত্বকের ওপরের স্তর ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে কোষকে সহায়তা করে।”
তাই ত্বকের পরিচর্যায় সেরামাইডস সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার করা উপকারী।
হিউমেকট্যান্টস: এই উপাদান পানি ধরে রেখে একজিমা বিস্তারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার স্তর গড়ে তোলে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের আরেক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কারান লাল বলেন, “হায়ালুরনিক অ্যাসিড এক ধরনের হিউমেকটেন্টস যা পানি শুষে নিয়ে ত্বককে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।”
এই ধরনের অ্যাসিড নিজ ওজনের চেয়েও এক হাজার গুণ বেশি পানি ধরে রাখতে পারে। তাই এটা বেশি আর্দ্রতা রক্ষাকারী এবং ত্বক সতেজ রাখতে কার্যকর।
একজিমা থেকে মুক্তি পেতে ত্বকের পরিচর্যায় হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং সেরামাইড সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডা. লাল। এতে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা পায় এবং সুস্থ থাকে।
এমোলিয়েন্টস: ত্বক মসৃণ ও কোমল রাখতে এই উপাদান উপকারী। একজিমা সারাতে সূর্যমুখির তেল দিয়ে তৈরি এমোলিইয়েন্টস ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডা. লিবি।
তিনি বলেন, “সূর্যমুখীর তেল হল একটি প্রদাহ-বিরোধী ইমোলিয়েন্টস যা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। এটা ময়েশ্চারাইজার তৈরির সাধারণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।”
আর ‘নন-কমেডোজেনিক’ হওয়ার কারণে লোমকূপে জমাট বাঁধে না।
অন্যান্য ভেষজ তেল যেমন- জোজোবা, আর্গন ইত্যাদি তেলও এমোলিয়েন্টস হিসেবে কাজ করে।
আরেকটি এমোলিয়েন্টস হল পেট্রোলিয়াম।
“পেট্রোলিয়াম ঘন এমোলিয়েন্টস, যা ত্বকের পানি হ্রাস কমায়,” বলেন, ডা. লিবি।
ত্বক থেকে খুব বেশি পানি চলে গেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তখন চুলকানি, একজিমা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
যে বিষয় মাথায় রাখা জরুরি
যদিও এই উপাদানগুলোর প্রত্যেকটি একজিমার বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভাবে কাজ করে। তবে ডা. লালের মতে সর্বোত্তম পদ্ধতি হল বহুমুখী ব্যবহার।
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “একজিমা মানে হল ত্বকে স্বাভাবিক পরিমাণে সেরামাইডস, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ‘লিপিড’ নেই আবার প্রদাহও থাকে। এক্ষেত্রে সেরামাইডস, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাট/ লিপিড আছে এমন পণ্য ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশি উপকারী।”
আরও পড়ুন