উদ্বেগ ও হতাশা কমানোর খাবার

কিছু খাবার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2023, 01:48 PM
Updated : 12 Nov 2023, 01:48 PM

মানসিক স্বাস্থ্য শুধু যে কাজ বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তা নয়। খাবারও মন-মেজাজের ওপর প্রভাব ফেলে।

আর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শুরু বা শেষে খুব বড় পদক্ষেপ নিতে হবে এমনটা নয়। ছোটখাটো কাজ, দৈনিক আচরণ যেমন- প্রতিবেলার খাবার বা নাস্তা খাওয়া ইত্যাদিতে পরিবর্তন এনেও মনের ওপর পরিবর্তন আনা যায়।

মেজাজ নিয়ন্ত্রণে খাবার যেভাবে প্রভাব রাখে

যা খাওয়া হয় তা সরাসরি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও চাপ নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রভাব রাখে। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়, কিছু খাবার উদ্বেগ ও হতাশা কমায় বিশেষত যা ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ ও প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।

এই ধরনের খাবার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অন্যদিকে এমন কিছু খাবার আছে যা উদ্বিগ্নতা ও প্রদাহ সহজেই বাড়িয়ে তোলে।

অন্ত্রের জন্য উপকারী এমন পুষ্টিকর খাবার যেমন- প্রোবায়োটিক ও আঁশ ধরনের খাবার মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং এগুলো অন্ত্রের অণুজীব ও মস্তিষ্ক উন্নতির সাথেও সম্পর্কিত।

তবে কোনো একটি খাবার উদ্বেগ বা হতাশা কমাতে জাদুর মতো কাজ করে এমনটা নয়। আবার চিকিৎসার পরিবর্তে কেবল খাবার দিয়েও উদ্বেগ আর হতাশার সমস্যার সমাধান করা যায় না। এটা কেবল সহায়ক হিসেবে কাজ করে

হতাশা ও উদ্বেগ কমায় এমন কিছু খাবারের মধ্যে আছে-

চর্বি সমৃদ্ধ মাছ

মার্কিন মনোবিজ্ঞানি ও রন্ধনশিল্পী ‘দিস ইজ ইওর ব্রেইন অন ফুড’ বইয়ের লেখক উমা নাইডু- নিয়মিত চর্বি বহুল মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন।

এই ধরনের মাছ মস্তিষ্কের কোষ সুস্থ রাখতে ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে পারে।

রিয়েল সিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “এগুলো ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কে জন্য উপকারী।”

এই ধরনের চর্বি মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ চাপ ও প্রদাহ থেকে সুরক্ষিত রাখে, যা মন মেজাজের অসামঞ্জস্যতা যেমন- উদ্বেগ, হতাশা এমনকি নিউরোডিজেনারেশন যা মূলত স্নায়ু কোষের মৃত্যু বা স্মৃতিভ্রংশ দূর করতে, ‘ব্রেইন ফগ’ বা মাথা ফাঁকা লাগা অনুভূতি ও জ্ঞানীয় দক্ষতা হ্রাসে প্রভাব রাখে।”

ডা. নাইডুর মতে, যারা মাছ পছন্দ করেন না তারা উদ্ভিজ্জ উপাদান যেমন- আখরোট ও চিয়াবীজের মাধ্যমে ওমেগা থ্রি চর্বি গ্রহণ করতে পারেন।

এরা যদিও সামুদ্রিক খাবারের মতো দ্রুত শোষিত হয় না। কিন্তু এগুলো বিকল্প হিসেবে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে উপকার করে।

গাঁজানো খাবার

গাঁজানো খাবার অন্ত্রের জন্য উপকারী। তবে এটা যে মন ভালো রাখতে সহায়তা করে তা অনেকেরই অজানা। অন্ত্র ও মানুষের মস্তিষ্ক এই দুইয়ের মাঝে যোগসূত্র রয়েছে।

নাইডু বলেন, “গাঁজানো খাবার যেমন- সাধারণ দই, কিমচি ও টেম্পে আছে জীবিত ব্যাক্টেরিয়া যা প্রোবায়োটিক নামে পরিচিত।”

ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এগুলো অন্ত্রের জন্য ভালো ব্যাক্টেরিয়া হিসেবে কাজ করে যা অনুজীবের ভারসাম্য রক্ষা করে। এর ফলে প্রদাহ হ্রাস পায় এবং স্নায়ুর পরিবহন অথবা রাসায়নিক যোগোযোগ উৎপন্ন হয়। যা মেজাজ ও জ্ঞানীয় দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

সবুজ শাক

পালংশাক, পাতাকপি এমন সবজি মস্তিষ্ক বান্ধব খাবার। এগুলো মস্তিষ্কে পুষ্টি যোগায় যা মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

এসবে থাকে পলিফেনল, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি যা খুব ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে মস্তিষ্ককে সতেজ ও সুস্থ রাখতে পারে।

ভিটামিন সি দেহে বাড়তি কর্টিসল বা চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন দূর করতে সাহায্য করে। ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস পায় বলে জানান, ডাক্তার নাইডু।

বেরি

সুস্থ অন্ত্র মানে সুস্থ মস্তিষ্ক! তাই অন্ত্র ভালো রাখতে অন্ত্রবান্ধব খাবার অর্থাৎ উচ্চ আঁশ আছে এবং খাবার যেমন- বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাসবেরি ইত্যাদি) খাওয়া উপকারী। এই সকল রঙিন ফল আঁশ ও পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ যা মাইক্রোবিয়াল যা অন্ত্রের অণুজীবের ভারসাম্য রক্ষা করে।

ফলে মানসিক চাপ হ্রাস পায়, স্নায়ু সংবেদন উন্নত হয় এবং প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ চাপ কমে।

এছাড়াও ডা. নাইডুর মতে, “বেরি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ। এসব যৌগ প্রাকৃতিক পিগমেন্ট সমৃদ্ধ ফলে বেরির রং ভিন্ন হয়ে থাকে।

এগুলো মন ভালো রাখতে, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিউরন ও অন্ত্রের যোগাযোগের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।

ওয়েস্টার বা ঝিনুক

ঝিনুক উদ্বেগ ও হতাশা কমাতে অন্যতম উপকারী খাবার। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে জিংক যা অত্যাবশ্যকীয় খনিজ।

জিংক ‘নিউরোট্রান্সমিটার গামা-অ্যামিনোবিউটিরিক অ্যাসিড’ এবং ‘সেরোটোনিন’ নিঃসরণের সহায়তা করে। এই দুই উপাদানই মন ভালো রাখতে পার।

প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ১১ মি.লি. গ্রাম জিংক প্রয়োজন এবং স্বাভাবিক আকারের ঝিনুকে পাঁচ মি.লি. গ্রাম জিংক পাওয়া যায়।

মানে হল, দিনে দুতিনটা ঝিনুক খাওয়া যথেষ্ট।

“তবে কেউ ঝিনুক খেতে না চাইলে অন্যান্য সেলফিশ, কাঁকড়া, চিংড়ি, এমনকি সবজি, বাদাম ও গরুর মাংস ইত্যাদি খেতে পারেন”- পরামর্শ দেন ডা. নাইডু।

ডার্ক চকলেট

মন ভালো রাখতে পারে এমন আরেকটি খাবার হল ডার্ক চকলেট। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনোল থাকে যা মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়ায় এবং স্নায়ু প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে ফলে নতুন নিউরন উৎপাদন হয়।

ডার্ক চকলেটে আছে প্রিবায়োটিক যা অন্ত্রের ওপর প্রভাব রাখে। অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়া, এর মাধ্যমে খাবার পায় ফলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

ডার্ক চকলেট ম্যাগনেসিয়ামের খুব ভালো উৎস।

ডাক্তার নাইডু বলেন, “এই পুষ্টি উপাদান কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে পারে।”

আরও পড়ুন

Also Read: খিদা পেটে যে কারণে মেজাজ খারাপ লাগে

Also Read: ক্যাফেইন ছাড়াও মন মেজাজ ভালো রাখার উপায়

Also Read: বিষণ্নতা কাটাতে করণীয়