উদ্বেগ কমানোর সহায়ক খাবার

স্বাস্থ্যকর খাবার শুধু দৈহিক নয়, মানসিক অবস্থারও উন্নতি ঘটায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 10:50 AM
Updated : 22 May 2023, 10:50 AM

চিকিৎসা, মানসিক যত্ন ও কিছু পুষ্টিকর খাবার আরাম অনুভব করায়।

মানসিক চাপ কমাতে এই ধরনের খাবারকে ‘সুপার ফুড’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

খাবার যেভাবে উদ্বেগ কমায়

ভারতীয় পুষ্টিবিদ রহিত শিলাৎকার উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে খাবারের ভূমিকা সম্পর্কে হেল্থ শটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “মানবদেহে কর্টিসোলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে অনেক বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, মজাদার ও নোনতা খাবার খেয়ে থাকেন। উচ্চ চর্বি বহুল এসব খাবার ক্ষণিকের জন্য মন ভালো করলেও মস্তিষ্কের কেন্দ্রে চাপ তৈরির মাধ্যমে ক্ষণিকের আনন্দকে ছাপিয়ে অনেক বেশি উদ্বেগ ও হতাশা সৃষ্টি করে।”

শিলাৎকার বলেন, “ক্যাফেইন, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও উচ্চ শর্করা ধরনের খাবার কর্টিসোলের মাত্রা বাড়ায় এবং উদ্বেগের লক্ষণকে তীব্র করে তোলে।”

প্রোটিন ও ভিটামিন ছাড়াও কিছু ‘সুপার ফুড’ উদ্বেগ কমায়। শারীরিক নানাবিধ সমস্যা যেমন- চাপ, হতাশা ও দুর্বলভাব কমাতে সহায়তা করে।

ব্লুবেরি: কেবল খেতেই মজাদার নয় এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষত ‘অ্যান্থসায়ানিন’ যা মানসিক চাপ কমায় বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও প্রদাহ কমায়। এই দুই লক্ষণই উদ্বেগের সঙ্গে জড়িত।

‘নিউট্রিশনাল সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্লুবেরি মন ভালো রাখতে বিকল্প খাবার হিসেবে কাজ করে এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের হতাশা ও উদ্বেগের লক্ষণ হ্রাস করে।

প্রতিদিন খাবার তালিকায় এক মুঠ ব্লুবেরি রাখা প্রাকৃতিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

চর্বি বহুল মাছ: ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস, সুনির্দষ্টভাবে ‘ইপিএ’ (আইকোসাপেন্টিনোইক অ্যাসিড) এবং ডিএইচএ (ডুকোসাহেক্সায়োনিক অ্যাসিড) সমৃদ্ধ।

শিলাৎকার বলেন, “ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস অক্সিডেটিভ চাপ বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কিত।”

নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া প্রাকৃতিক ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস সরবারহ করে। আর মন শান্ত করতে সহায়তা করে।

আখরোট ও তিসির বীজেও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের ভালো উৎস। খাবার তালিকায় এগুলো যোগ করা উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।

কলা: ম্যাগ্নেসিয়ামের ভালো উৎস। ২০০৪ সালের ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে ম্যাগ্নেসিয়ামের যোগান মন ভালো রাখতে সহায়ক।

একটা বড় মাপের কলায় ৩৭ মি.লি. গ্রাম ম্যাগ্নেসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ কমায়।

শিলাৎকার বলেন, “কলা হৃদগতি ধীর করে এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করে। অস্থিরতা কমায় এবং মেজাজের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে।”

জটিল কার্ব: পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা শস্য খাওয়ার পরামর্শ দেন যা জটিল কার্বোহাইড্রেইট, এগুলো মন-মরাভাব কমায় এবং রক্তে ধীরে শক্তি যোগায়। কার্বোহাইড্রেইট মস্তিষ্কে ‘সুখী হরমোন’ নামে পরিচিত ‘সেরোটনিন’য়ের মাত্রা বাড়ায়।

শক্তি, সুখীভাব ধরে রাখতে প্রতিবেলার খাবারে শস্য ধরনের খাবার যেমন- ওটস, গম, বার্লি বা অন্য যে কোনো শস্য যোগ করা উপকারী।

টক ফল: সিট্রাস ফলে উচ্চ ঘনত্বের ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা মানসিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

শিলাৎকার বলেন, “ভিটামিন সি কর্টিসোলের মাত্রা কমিয়ে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব রাখে।”

কর্টিসল হরমোন ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ হরমোন নামে পরিচিত যা চাপের সময় নিঃসৃত হয় এবং নানান রকম রোগের সঙ্গে যুক্ত।

মটর ও বীজ-ধরনের খাবার: ২০১৭ সালের ‘নিউট্রিয়েন্টস’ সাময়িকীকে প্রকাশিত মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সবজি খাওয়ার প্রভাবের একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে।

এতে থাকে পুষ্টি যৌগ উদ্বেগ কমায় এবং মন ভালো রাখে।

মটর, ডাল, শুঁটি ও অন্যান্য বীজ ধরনের সবজিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি সিক্স এবং ম্যাগ্নেসিয়াম। অল্প ভেজে বা লাল মাংসের বিকল্প হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা যায় কারণ এগুলো উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ।

কেবল খাবারের মাধ্যমে উদ্বেগ কমানো সম্ভব নয় তাই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শের পাশাপাশি খাবার তালিকায় এসব খাবার রাখা ভালো ফলাফল দেয়।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ এবং সুস্থ জীবনযাত্রা মানসিক চাপ কমিয়ে উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন

Also Read: বিষণ্ন নাকি দুঃখী? বুঝবেন যেভাবে

Also Read: ক্যাফেইন ছাড়াও মন মেজাজ ভালো রাখার উপায়