কার্বোহাইড্রেইটস বা কার্ব’য়ের কথা শুনলেই মনে হয় বাজে খাবার।
তবে ‘কার্ব’ মানেই যে খারাপ তা নয়। দৈনন্দিন খাবার থেকে যে পরিমাণ উপাদান শরীরে যায় এর মধ্যে ‘কার্বোহাইড্রেইট’য়ের পরিমাণ সব থেকে বেশি।
পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে ‘কার্ব’য়ের তিনটি ধরন রয়েছে- স্টার্চ বা শ্বেতসার। সুগার বা চিনি কিংবা শর্করা। এবং আঁশ।
শ্বেতসার হল জটিল কার্বোহাইড্রেইট। চিনি প্রাকৃতিক ভাবেই খাবারে থাকে কিংবা আলাদা করে দেওয়া হয়। আর আঁশ হল হজমসাধ্য নয়।
আর এই তিন ধরনের খাবারে সামঞ্জস্য থাকলেই শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই বিষয়ে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন পুষ্টিবিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’র ‘ডায়াবেটিস প্র্রিভেনশন প্রোগ্রাম’য়ের নিবন্ধিত প্রশিক্ষক মলি হেমব্রি’র দেওয়া তথ্যানুসারে জানানো হল বিস্তারিত।
কার্ব’য়ের কারণে ডায়াবেটিস হয় না
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হয় ‘প্যানক্রিয়াস’ গ্রন্থি বা অগ্নাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হলে। আর টাইপ টু ডায়াবেটিসের কারণ হল দেহে ইন্সুলিন প্রতিরোধ-ব্যবস্থা গড়ে উঠলে।
তবে বিষয় হল অতিরিক্ত কার্ব খাওয়ার জন্য উপরের কারণগুলোকে দায়ী করা যাবে না। কারণ জীবনযাপনের ধারা, অতিরিক্ত ওজন কিংবা বংশগতির কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কার্ব থেকে শক্তি মেলে
শরীরের শক্তি যোগানোর একমাত্র তেল হচ্ছে কার্ব। মস্তিষ্কের একমাত্র খাবার কার্ব। নিঃশ্বাস গ্রহণ থেকে শুরু করে শরীরের যাবতীয় কাজ, নাচ, গান, দৌঁড়ানো, বসে থাকা- সব কিছু করতে যে শক্তি প্রয়োজন তা কার্ব থেকেই পায় শরীর। সারাদিনে পর্যাপ্ত কার্ব গ্রহণ করলে দুর্বল অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুটি থেকে আসা সব কার্ব ভালো নয়
কেক, মাফিন, ওয়াফেল, টরটিলা- এই ধরনের রুটিজাতীয় খাবার বা রুটি খাওয়ার ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে পূর্ণ শষ্য থেকে তৈরি খাবার। যেমন- বাদামি চাল, কিয়োনা, পূর্ণ শষ্যের তৈরি রুটি ও পাস্তা।
প্রক্রিয়াজাত সাদা আটা ময়দা চালে থাকে ক্ষতিকর কার্ব।
ফল ও সবজিতেও কার্ব রয়েছে
স্বাস্থ্যকর কার্ব’য়ের উৎস হিসেবে ফল ও সবজি খেতে বলেন পুষ্টিবিদরা। যেমন- একটি বড় আপেলে সাধারণত ৩৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট থাকে; যা কিনা ২৫ গ্রাম চিনি থেকে মিলবে। আবার একটি বড় টমেটোতে কার্বোহাইড্রেইট থাকে গড়ে ৭ গ্রাম; যা কিনা ৫ গ্রাম চিনির সমান।
একই সঙ্গে পুষ্টিকর ও খাবার হতে পারে চিনি
চিনিও হতে পারে পুষ্টিকর যদি সেটা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। যেমন- ফল থেকে চিনি মিলবে ফ্রুক্টোজ রূপে, দুধে চিনি থাকে ল্যাক্টোজ আকারে।
এছাড়া আলাদা করেও চিনিযুক্ত করে খাবার তৈরি হয় যেমন- বিভিন্ন ধরনের পানীয়, সিরাপ, মধু, কিংবা মিষ্টিজাতীয় যে কোনো খাবার।
আঁশ মানেই কার্ব
কার্ব মানেই যে খারাপ তা কিন্তু নয়। কারণ আঁশও এক ধরনের কার্ব। আর এই উপাদান দেহে নানান উপকার করে। যেমন- খাওয়ার পর পরিতৃপ্তি আনে, রক্তে শর্করার মাত্রা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
বয়স ও লিঙ্গ ভেদে সাধারণত দেহে প্রতিদিন ২৮ থেকে ৩৪ গ্রাম কার্ব প্রয়োজন হয়।
উচ্চ মাত্রায় আঁশযুক্ত কার্ব নির্ভর খাবারের মধ্যে রয়েছে- ডাল, নাশপাতি ও ছোলা।
আমাদের ক্যালরির প্রায় অর্ধেকটাই কার্ব
প্রতিদিনই আমরা সব খাবার থেকে কার্ব গ্রহণ করছি। ২০০০ ক্যালরির খাদ্যাভ্যাস থেকে ৯০০ থেকে ১৩শ’ ক্যালোরি বা ২২৫ থেকে ৩২৫ গ্রাম পরিমাণ কার্ব গ্রহণ করা হয়।
এর পরিমাণ বেশি মনে হলেও মনে রাখতে হবে, সব ধরনের খাবারের গ্রুপ থেকে কার্বোহাড্রেইট পাওয়া যায়। যেমন- ফল (কলা), সবজি (আলু), শষ্য (ভাত), প্রোটিন (বীজ), দুগ্ধজাত খাবার (দই)।
আরও পড়ুন-