ওষুধের মাঝে লুকিয়ে থাকা হুমকি

নিজে ডাক্তার বনে যাওয়া যেমন বোকামি তেমনি সব ওষুধ সবার জন্য নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2022, 12:02 PM
Updated : 24 Sept 2022, 12:02 PM

নিজের বুদ্ধিমতো ব্যথা কিংবা গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার পরিণাম ভালো নাও হতে পারে।

অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি ওষুধ দেবেন। খেয়ে সুস্থ হবেন। এটাই হল স্বাভাবিক ঘটনাচক্র। তবে এই ওষুধের মাঝেও নানান হুমকি লুকিয়ে থাকে।

হার্ভার্ড সংশ্লিষ্ট বস্টনের ‘ব্রিগহাল অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’য়ের ‘চিফ অফ ফার্মেসি সার্ভিসেস’ উইলিয়াম চার্চিল ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “রোগ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই একজন মানুষ যে ওষুধ সেবন করে উপকার পাচ্ছেন, আরেকজন এই রোগে আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে সেই ওষুধ অকেজো, এমনকি ক্ষতিকরও হতে পারে।”

মাউথওয়াশ

যুক্তরাষ্টের দাঁতের চিকিৎসক মার্ক বার্হেন বলেন, “অ্যালকোহল যুক্ত মাউথওয়াশ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এই উপাদান মুখের ভেতরের সকল ক্ষতিকর ও উপকারী ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে ফেলে। এতে আপনার নিঃশ্বাস সতেজ হয় ঠিক, কিন্তু সেই সঙ্গে ক্ষতিও হয়।”

ব্যাপারটা অনেকটাই বিনা প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার মতো। ওই ওষুধও অন্ত্রের সকল ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে দেয় নির্বিচারে, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, নানান রোগ আক্রমণের সুযোগ পায়।

একইভাবে মাউথওয়াশের অতিরিক্ত ব্যবহার মুখের ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে ডেকে আনে ‘ক্যাভিটিস’, ‘জিনজিভাইটিস’ ও মুখের দুর্গন্ধ।

ব্যথা কমানো বা ‘ওপিওয়েডস’ ধরনের ওষুধ

যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের ‘ডক্টর অফ ফার্মেসি’ ক্যারি ক্রিগার বলেন, “ব্যথা দূর করতে যে বিষয়টি এই ধরনের ওষুধকে বেশি কার্যকর করে সেটাই আবার এই ওষুধকে করে তোলে বিপজ্জনক। পরিমিত মাত্রায় এই ওষুধগুলো শরীরের ইন্দ্রিয়গুলোকে ভোঁতা করে দিয়ে ব্যথার অনুভুতি কমায়, ঘুম আনে। কিন্তু অতিমাত্রায় গ্রহণ করলে এই একই কারণে শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনের গতি কমে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে।”

ওষুধগুলো খাওয়ার পর যে সুখকর ও আরামের অনুভূতি তৈরি হয় সেটার জন্যই মানুষ তা বারবার খেতে চায়। আর একসময় আসক্তিতে পরিণত হয়।

তাই চিকিৎসক যতটুকু খেতে বলেন ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। আর ডাক্তারকেও জানাতে হবে অন্য কী কী ওষুধ সেবন করছেন।

আঙুর ও এই ধরনের ফল

যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ক্যাথরিন জেরাতস্কি বলেন, “আঙুর ধরনের সকল ফল ও কিছু ‘সিট্রাস’ বা টক ফল অনেক ধরনের ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই প্রতিক্রিয়াকে সামান্য বলে সবসময় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সমস্যা তখনই তৈরি হয় যখন এই ফলগুলোতে থাকা জৈব রাসায়নিক উপাদান সেই এনজাইমগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে যেগুলো ওষুধের বিপাকক্রিয়ার জন্য জরুরি।”

এর প্রেক্ষিতে একটি ওষুধ রোগীর শরীরে থেকে যাবে প্রয়োজনের চাইতে খুব বেশি কিংবা খুব কম সময়। দুটোই বিপদের কারণ হওয়া সম্ভব।

নতুন উপাদান সম্পর্কে সাবধান

ক্যামব্রিজ হেল্থ অ্যালায়েন্স’য়ের ‘ইন্টার্নিস্ট’ এবং হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুল’য়ের সহকারী অধ্যাপক পিটার কোহেন বলেন, “বাজারে প্রতিদিন নিত্য নতুন সাপ্লিমেন্ট আসছে, যাতে থাকে অপরিক্ষিত বিভিন্ন উপাদান। আমরা জানি না সেগুলো কতটুকু বিপজ্জনক বা কতটুকু নিরাপদ।”

তিনি আরও বলেনম “সাম্প্রতিক সময়ে এই নতুন উপাদানের মাত্রা বেড়েছে। এই উপাদানগুলো কতটুকু বৈধ, তা নিয়ে চিন্তা না করে আগে আমাদের চিন্তা করতে হয় এগুলো মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ কি-না।”

আর এগুলো ওষুধের দোকানে কিংবা ইন্টারনেটে সহজলভ্য হওয়া আগেই ‘ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ এগুলো পরীক্ষা করতে পারছে না বলে এদের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটাও ধারণা করা যায় না।

ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নেওয়া

সাধারণ রোগের জন্য চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলার অভ্যাস প্রায় সবারই আছে। যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ বেশি থাকে।

“তবে মনে রাখা উচিত এই ওষুধগুলো খেলনা ওষুধ নয়। অতিমাত্রায় সেবন করলে বা ভুলভালভাবে খেলে এই ওষুধগুলো থেকেও বড় ধরনের বিপদ হয়ে যাওয়া মুহুর্তের ব্যাপার। এর কারণে দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের ‍ঝুঁকি, হাঁপানি সমস্যা বাড়ানো ও নানান জটিল সংক্রমণ”, বলেন নিউ ইয়র্ক’য়ের ফার্মাসিস্ট ডিন মার্কার।

আরও পড়ুন

Also Read: ওষুধ সেবনের আগে যা জানা জরুরি

Also Read: ভেষজ ওষুধ থেকে হৃদযন্ত্রে গোলমালের সম্ভাবনা

Also Read: ওষুধের ওপর কফির প্রভাব

Also Read: ওষুধ খাওয়ার ভুলে অসুস্থতা

Also Read: ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব বিলম্বিত করার কুফল

Also Read: পানি ছাড়া ওষুধ খাওয়াতে ক্ষতি