২৫ বৈশাখ। দিনটিতে কলকতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশের কবির স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্থান আর স্থাপনা রয়েছে। জমিদারি পরিচালনা করতে এসে এসব জায়গায় থেকেছেন কবি, রচনা করেছেন তার মহামূল্য সাহিত্যকর্ম।
Published : 01 May 2014, 04:07 PM
কবির স্মৃতিধন্য এসব জায়গা থেকে বৈশাখে বেড়িয়ে আসতে পারেন।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে রয়েছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি। জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এই এলাকার জমিদারির মালিকানা পান। সেই সূত্রে জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালে।
কৈশোর এবং যৌবনে প্রায়শই তিনি জমিদারি দেখভাল করতে শিলাইদহ আসতেন। থাকতেন এই কুঠিবাড়িতেই। ১৮৯১-১৯০১ সালে অল্প বিরতিতে কবি নিয়মিত কুঠিবাড়িতে অবস্থান করেছেন। জানা যায় এ বাড়িতে বসেই কবি রচনা করেছেন তাঁর অমর সৃষ্টি সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবদ্য ও খেয়া কব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাসহ অনেক উল্লেখযোগ্য রচনা।
কবিগুরুর নোবেল জয়ের হাতিয়ার ‘গীতাঞ্জলী’র ইংরেজি অনুবাদও শুরু করেন এখানেই।
প্রায় ১১ একর জায়গাজুড়ে গাছের ছায়ায় সবুজ চত্ত্বরের ভেতরে দোতলা এ কুঠিবাড়ি। নীচতলা ও দোতলায় কেন্দ্রীয় হলঘরসহ মোট পনেরটি কক্ষ আছে। পিরামিড আকৃতির ছাদ ভবনটিকে দৃষ্টিনন্দন করেছে।
শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকার গড়ে তুলেছে জাদুঘর। কবিগুরুর ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্র, কবির নিজ হাতে আঁকা ছবি, আলোকচিত্র, পাণ্ডুলিপিসহ অনেক কিছুর দেখা মিলবে এ জাদুঘরে।
সপ্তাহের রবি ও সোমবার ছাড়া প্রতিদিন বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর। রবি ও সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। কবির জন্ম ও মৃত্যু দিনে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শিলাইদহে।
টেগর লজ
কুষ্টিয়া শহরে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত একটি বাড়ি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১৮৯০ সালের শেষের দিকে কুষ্টিয়া রেল স্টেশনের কাছে এই বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
ভুসিমাল ও পাটের ব্যবসার জন্য কবি নিজে এ বাড়িতে ‘টেগর অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে, কলকাতা থেকে ট্রেনে কুষ্টিয়া এসে টেগর লজে বিশ্রাম নিয়ে শিলাইদহে যেতেন কবি।
যাত্রাপথে কখনো কখনো এ বাড়িতে রাতও কাটিয়েছেন কবি। দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকার পর ২০০৪ সালে বাড়িটি কিনে নিয়ে সংস্কার করে কুষ্টিয়া পৌরসভা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ঢাকা থেকে সড়কপথে সরাসরি কুষ্টিয়া যাওয়া যায়। রেলপথে খুলনাগামী ট্রেনে ভেড়ামারা নেমে কুষ্টিয়া আসতে হবে।
ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এসবি পরিবহন, কেয়া পরিবহন, রোজিনা পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনের বাসগুলো ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩৫০-৪৫০ টাকা।
কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহ যাওয়া যাবে বাস কিংবা অটো-রিকশায়।
কুষ্টিয়া শহরে থাকার জন্য সাধারণ মানের হোটেল হল: হোটেল রিভারভিউ, ফেয়ার রেস্ট হাউস, হোটেল গোল্ড স্টার, ইত্যাদি। এসব হোটেলের ভাড়া ২৫০-১২০০ টাকা।
শাহজাদপুর কাছারিবাড়ি
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরুর স্মৃতিধন্য কাছারিবাড়ি আছে। এখানেও কবির পৈতৃক জমিদারি ছিল। রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকরদের একটি কুঠিবাড়ি নিলামে কিনে এখানে কাছারিবাড়ি গড়ে তোলেন।
১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম কবি এ বাড়িতে আসেন। তখন তার বয়স ২৯ বছর। এখানে বসেও কবি তাঁর জীবনের অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন।
ঠাকুর পরিবারের জমিদারি ভাগাভাগি হলে শাহজাদপুরের জমিদারি চলে যায় ঠাকুর পরিবারের অন্য শরীকদের হাতে। ১৮৯৬ সালে তাই কবি কাছারিবাড়ি ছেড়ে চলে যান।
শাহজাদপুরে আছে জমিদারি খাজনা আদায়ের একটি পুরানো দ্বিতল ভবন, যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সিরাজগঞ্জ যাওয়া যায়। ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন, এস আই এন্টারপ্রাইজ, গাবতলী থেকে ইউনিক সার্ভিস সরাসরি যায় সিরাজগঞ্জ।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন, সিল্কসিটি, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেসে চড়ে সদানন্দপুর স্টেশনে নামতে হবে। জেলা শহর থেকে শাহজাদপুরে যেতে হবে বাসে, সেখান থেকে রিকশায় এক কিলোমিটার দূরে কাছারিবাড়ি।
পতিসর কুঠিবাড়ি
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসরে নাগর নদীর তীরে কবিগুরুর আরেকটি কুঠিবাড়ি আছে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাছারি ছিল এখানে। কবির পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ জমিদারি কিনেছিলেন।
জমিদারি দেখাশোনার জন্য কবি সর্বপ্রথম এখানে এসেছিলেন ১৮৯১ সালে।
পতিসরের কুঠিবাড়িটি অনেকটাই শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের আদলে তৈরি। বাড়ির সামনে খোলা মাঠ নাগর নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে কবি অনেক জনহিতকর কাজও করেন।
১৯০৫ সালে তিনি পতিসরে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক। পরে নোবেল পুরস্কারের এক লক্ষ টাকা তিনি এ ব্যাংকে দান করেন। ১৯১৩ সালে কবি এখানে প্রতিষ্ঠা করেন কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট।
এখানে থাকতেও কবি অনেক উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। ১৯২১ সালে জমিদারি ভাগাভাগি হলে পরিতসরের ভাগ পড়ে রবীন্দ্রনাথের হাতে। তবে নানান ব্যস্ততায় কবি আর পতিসরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেননি।
শেষবারের মতো কবি পতিসরে এসেছিলেন ১৯৩৭ সালে। এ বাড়িতেও কবির অনেক স্মৃতিময় নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে নওগাঁ সদরে। কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে এ পথে চলাচল করে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর পরিবহন, কেয়া পরিবহন ইত্যাদি। ভাড়া ৩৫০-৪৫০ টাকা।
নওগাঁ সদর থেকে পতিসরের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। বাসভাড়া ৩০-৩৫ টাকা। নওগাঁ শহরে সাধারণ মানের হোটেল পাওয়া যাবে ১৫০-৮০০ টাকায়।