ক্যালিফোর্নিয়া’র স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র আচরণগত বিজ্ঞানী এবং ‘টাইনি হ্যাবিটস: দ্যা স্মল চেইঞ্জেস দ্যাট চেইঞ্জ এভ্রিথিং’ বইয়ের লেখক বিজে ফগ ওজন নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রার সাধারণ পরিবর্তনের গুরুত্বের কথা বলেন।
ইট দিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “ওজন কমাতে অভ্যাসের পরিবর্তন মানুষের চিন্তার চেয়েও বেশি সহজ ও দ্রুত। এর জন্য খুব বেশি ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন নেই। তাই ব্যস্ততা বা অন্য যে কোনো অজুহাত দিয়ে এই রুটিন ভাঙারও কোনো সুযোগ নেই।”
ঠাণ্ডা থাকা
ডায়াবেটিস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, এয়ার কন্ডিশনারের তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়ে ঠাণ্ডা পরিবেশ তৈরি ঘুমের মধ্যে দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে।
ঠাণ্ডা আবহাওয়া দেহের বাদামি চর্বির কার্যকারিতা বাড়ায় যা পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা কয়েক সপ্তাহ ঘুমের সময় ঘরের তাপমাত্রার পার্থক্য মেনে চলেন- সাধারণ মাত্রা ৭৫ ডিগ্রি, ঠাণ্ডা ৬৬ ডিগ্রি এবং আরামদায়ক ৮১ ডিগ্রি।
চার সপ্তাহ পরে দেখা গেছে, যারা ৬৬ ডিগ্রিতে ঘুমিয়েছিলেন তাদের দেহে বাদামি চর্বি দ্বিগুন কাজ করেছিল।
‘ব্ল্যাক কফি’ খাওয়া
কফি পান ওজন কমাতে ও চর্বি কাটাতে সহায়ক। দিনে চার কাপ কফি গ্রহণ দেহের চর্বি চার শতাংশ কমাতে সহায়তা করে। তবে মাথায় রাখতে হবে, এক কাপ কফিতে শূন্য ক্যালরি থাকে। এক কাপ চিনিসহ ক্রিম কফিতে ৮০ ক্যালরি থাকে। তাই দিনে দুই কাপ কালো কফি খাওয়া বছরে ১৪ পাউন্ড ওজন বাঁচাতে সহায়ক।
সঠিক চর্বি গ্রহণ
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চর্বি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। বিভিন্ন গবেষণায় এমনকি ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ অনুযায়ী সুস্থ থাকতে চর্বি থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়। আর তা হল ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’।
স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া দেহ, ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
লাল ফল খাওয়া
ওজন কমাতে লাল রংয়ের খাবার খাওয়া উপকারী। লাল আপেল, তরমুজ, লাল আঙুর, রাসবেরি ইত্যাদি উচ্চ ফ্লাভানয়েড– অ্যান্থোসায়ানিন্স নামক রঞ্জক সমৃদ্ধ তা দ্রুত চর্বি কমাতে সহায়ক।
‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া’র করা গবেষণায় দেখা গেছে, ‘পিংক লেডি অ্যাপল’ উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্লাভানয়েড সমৃদ্ধ যা দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
পোশাক
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন’য়ের গবেষকরা দেখেছেন যে, যারা কাজের সময় ডেনিম পোশকা পরিধান করেন তারা প্রায় ৫০০ ধাপ বেশি হাঁটেন যা ‘ফরমাল’ পোশাক পরলে হয়ে ওঠে না।
জিন্স পরলে দেহের পার্থক্য সহজেই বোঝা যায়। তাছাড়া ওজনের সঠিক মাত্রা বুঝতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যে কোনো পোশাকের সঙ্গে জিন্স পরা যেতে পারে।
ঘ্রাণ
খাওয়ার আগে খাবারের ঘ্রাণ যেমন- আপেল বা কলার সুগন্ধ খাবারের চাহিদা অনেকাংশ হ্রাস করে। বৈজ্ঞানিকভাবে বলা হয়, ঘ্রাণ গ্রহণ স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচনে সহায়তা করে।
শস্য খাওয়া
গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাস্তায় ওটস খাওয়া অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। শস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক তৈরি করা যায় এমন খাবারের তুলনায় বরং ধীরে রান্না করে খেতে হয় এমনটা বেশি উপকারী।
শরীর চর্চার আনুষ্ঠানিকতা
বন্ধু বান্ধব, কাজের চাপ এমনকি সঙ্গীকে সময় দিতে গিয়ে অনেকেই শরীরচর্চার সময় বের করতে পারেন না। তাই দেখা সাক্ষাতের মতো যদি শরীরচর্চাও আনুষ্ঠানিক উপায়ে করা যায় তবে উপকার পাওয়া যাবে।
‘জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিন’ সামায়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় অনুযায়ী প্রায় ৪ হাজার জন দম্পত্তি বলেছেন যে, তারা দলবদ্ধ হয়ে শরীরচর্চায় বেশি আগ্রহ পান।
তাই সঙ্গীর সঙ্গে জিমে ভর্তি হওয়া বা বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে ব্যায়াম করলে তা বেশ কার্যকর।
খাওয়ার আগের প্রস্তুতি
বেশি ক্ষুধা পেয়ে খেলে অধিক খাওয়ার ঝুঁকি থাকে তাই এখানে কিছুটা কৌশলী হওয়া প্রয়োজন।
‘অ্যাপেটাইট’ জার্নালে ‘পেন স্টেট’য়ের করা ধারাবাহিক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, খাওয়ার আগে একটা আপেল খাওয়া বা ব্রোথ ভিত্তিক সুপ খাওয়া ক্যালরি গ্রহণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করে।
প্রতিবার রেস্তোরাঁতে ২০ শতাংশ কমে ১,১২৮ ক্যালরি গ্রহণ বছরে ২৩ পাউন্ড ওজন কমাতে সহায়তা করে।
ফিশ অয়েল
ওজন কমানোর প্রক্রিয়াতে বাড়তি গতি দিতে চাইলে বেছে নিতে পারেন সামুদ্রিক খাবার। আর এরমধ্যে অবশ্যই প্রাধান্য পাবে তৈলাক্ত মাছ।
টুনা, স্যামন, ম্যাকারেল কিংবা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্যাপ্সুল খাওয়া (অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে) যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়েল তথ্যানুসারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ট্রাইগ্লিসারাইড’য়ের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ।
এছাড়াও ‘অ্যাপেটাইট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, মাছের তেল পেটভরা অনুভূতি দেয় অনেকক্ষণ যা কিনা খাওয়ার পরিমাণ কমায়। পক্ষান্তরে ওজন কমে।
স্যান্ডুইচে রুটি বাদ
‘ব্রেড লেস স্যান্ডুইচ’ কথাটা শুনতে অবাক লাগলেও সাদা পাউরুটি ওজন বাড়ায় সেটাও মনে রাখতে হবে। তাই রুটির পরিবর্তে দুই স্তর মুরগির মাংসের মাঝে পনির ও লেটুস পাতা বা টমেটো দিয়ে স্যান্ডুইচ বানিয়ে খাওয়া অনেক উপকারী।
আরও পড়ুন