করোনাভাইরাসের নতুন ধরন: শিশুর ওপর প্রভাব ও করণীয়

শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে সচেতন হতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2021, 01:20 PM
Updated : 15 April 2021, 01:20 PM

করোনাভাইরাস মহামারীর তাণ্ডবে আজও সারাবিশ্বের মানুষ আতঙ্কিত দিন পার করলেও সামান্য স্বস্তির ব্যাপার ছিল শিশুদের ওপর এই ভাইরাসের প্রভাব ছিল খুবই কম।

তবে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা আর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের বিরূদ্ধে লড়তে শিশুদের উপযোগী ভ্যাকসিন না থাকায় সন্তানের বাবা-মা হিসেবে উদ্বেগ জাগতেই পারে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিপুল মালহোত্রা জানিয়েছেন এই বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।

শিশুদের জন্য নতুন ভাইরাসের নতুন ধরন বিপদজনক ধরা হচ্ছে কেনো?

করোনাভাইরাসের প্রথম ‘স্ট্রেইন’ শিশুদের জন্য তেমন ভয়ানক ছিল না। বিশ্বব্যাপি শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার যতগুলো খবর পাওয়া গিয়েছিল তার সিংহভাগই ছিল ‘অ্যাসিম্পটোম্যাটিক’ বা উপসর্গ-হীন। তবে নতুন ‘স্ট্রেইন’য়ে ভাইরাসের জীনগত বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন এসেছে। পাশাপাশি শরীরের অ্যান্টিবডি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরাস্ত করার ক্ষমতাতেও পরিবর্তন দেখা গেছে। ফলে করোনাভাইরাসের বাহ্যিক অংশে থাকা ‘প্রোটিন স্পাইক’, যার সাহায্যে ভাইরাসটি শরীরের কোষের সঙ্গে আটকে যায় এবং বংশবিস্তার করে, সেটি আরও আক্রমণাত্মক হয়েছে, বেড়েছে সংক্রমণের ক্ষমতা।

যেহেতু এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা ও কৌশল দুটোই আরও উন্নত হয়েছে, তাই প্রাপ্তবয়ষ্কদের পাশাপাশি শিশুরাও এখন হুমকি মুখে। তারই প্রেক্ষিতে ১৬ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে ‘সিম্পটোম্যাটিক’ সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।  

সব বয়সের শিশুর সংক্রমণের ঝুঁকি কি বেশি?

করোনাভাইরাস বয়স মানে না। তাই এক থেকে ১৬ বছর বয়সি সকল শিশুই আক্রান্ত হতে পারে এই ভাইরাসে। এমনও দেখা গেছে যে সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক ‘করোনা পজিটিভ’। প্রসবের সময় মায়ের কাছ থেকেই সে ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছে। মুখ্য বিষয় হল সংক্রমণ কিংবা রোগের তীব্রতা।

যেসকল শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল কিংবা কোনো দূরারোগ্য রোগ আছে, তাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শারীরিক সমস্যার তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।

শিশুদের মাধ্যমে তার পরিবার সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কতটুকু?

শিশুদের মাঝে সংক্রমণের উপসর্গ দেখা না দেওয়ার কারণে নীরবে তারা ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন ইঙ্গিত বহুবার পাওয়া গেছে। বর্তমান সময়েও এই ঝুঁকি বাড়বে বরং কমবে না। আর ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।

সেক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে পড়বেন পরিবারের বয়োবৃদ্ধরা। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের ঝুঁকি কিছুটা কমলেও যারা টিকা নিতে পারেননি তারা মারাত্মক ঝুঁকি আছেন।

কোন উপসর্গগুলোর প্রতি সর্তক থাকা উচিত

কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত কিংবা করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হওয়া সকল রোগীর মাঝেই উপসর্গের কোনো না কোনো ভিন্নতা দেখা গেছে।

অপরদিকে শিশুদের উপসর্গ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন হবে। আবার সংক্রমণের উপসর্গগুলো আরও অনেক রোগের উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়, যা পরিস্থিতিকে আরও বেশি ঘোলাটে করে তোলে। তাই বাবা-মায়ের উচিত যেকোনো অসুস্থতাকেই গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবেলা করা।

শিশুর মৃদু জ্বর হওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের পুরানো লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও থাকতে পারে ত্বকের ‘র‌্যাশ’ বা ফুসকুড়ি, ফোলাভাব, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে, শিশুদের মাঝে যে লক্ষণগুলো দেখা যাবে তার সিংহভাগই হবে মৃদুমাত্রার এবং বেশি সময় স্থায়ী হবে না। তবে লক্ষণ চলে গেলেই যে ভাইরাস নেই এমনটা ভেবে নিলে ভুল হবে।   

শিশুর কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে করণীয়

যেকোনো সংক্রমণকে দমানোর জন্য তা প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে পারা অত্যন্ত উপকারী। এমনকি পরীক্ষা যদি সময় মতো করাতে নাও পারেন, যদি সন্দেহ হয় সন্তান করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছে তবে তাকে যতটা সম্ভব আলাদা রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করানো।

বাবা-মায়ের জন্য সন্তানকে নিজেদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা মোটেই সম্ভব নয়। এজন্য সন্তানের পরিচর্যার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে।

দুটি মাস্ক পরতে হবে, হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। স্যানিটাইজারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে করণীয়

শিশুদের বাইরের মানুষের সংস্পর্শে আসা বন্ধ করতে হবে। তাদের মাস্ক পরাতে হবে এবং হাত সাবান দিয়ে ধোয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করার অভ্যাস গড়তে হবে। সারাদিন ঘরে বদ্ধ থাকলে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে উঠবে। এজন্য বাসার ছাদে, বারান্দায় ঘুরিয়ে আনা যেতে পারে। বাইরে যদি যেতেই হয় তবে মানুষের ভীড় একদমই নেই এমন স্থানে নিয়ে যেতে হবে।

শিশুর মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য করণীয়

ঘরবন্দি জীবন মেনে নেওয়া শিশুদের জন্য কঠিন হয়। এজন্য ঘরের কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজকে তাদের কাছে খেলা হিসেবে তুলে ধরতে হবে। এসব কাজের মধ্যে থাকলে তাদের মন কিছুটা হলেও উৎফুল্ল হবে।

মোবাইল, কম্পিউটার, ট্যাব ইত্যাদি নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকায় হস্তক্ষেপ করতে হবে। তবে এই বিনোদন মাধ্যমগুলো থেকে দূরে সরানোর পাশাপাশি ভিন্ন বিনোদন মাধ্যমও খুঁজে বের করতে হবে তাদের জন্য।

আরও পড়ুন