শিশুদের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করতে নাও পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2020, 06:25 AM
Updated : 30 July 2020, 06:25 AM

আর এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণও নেই।

বর্ষাকালে ‘ফ্লু’ বা মৌসুমি সর্দিজ্বরের প্রকোপ বাড়ে। আর এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুরা এই সাধারণ রোগে কষ্ট পায় বেশি।

তাই বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। আর এই ‘ফ্লু’য়ের উপসর্গ ‘কোভিড-১৯’য়ের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়, যা বাবা-মায়ের আতঙ্কের মাত্রা আর বাড়িয়ে দেয়।

এই বিষয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইভিলিনা লন্ডন হাসপাতালের ‘পেডিয়াট্রিক অ্যালার্জি অ্যান্ড ইমিউনোলজি’ বিভাগের পরামর্শদাতা ডা. হেলেন এ. ব্রোহ বিভিন্ন বিষয়ে জানান।

বর্তমানে এই চিকিৎসক ‘ইউরোপিয়ান অ্যাকাডেমি অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিকাল ইমিউনোলজি (ইএসিসিআই)’র শিশুরোগ বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। কাজ করছেন মৌসুমি সর্দিজ্বর, করোনাভাইরাসের বিস্তার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

সাধারণ সর্দিজ্বর আর করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে তফাৎ

এবিষয়ে ডা. হেলেন বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান উপসর্গগুলোর মধ্যে আছে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, অনবরত কাশি, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো। যারা হাঁপানিতে আক্রান্ত তাদের থাকে ‘ড্রাই কফ’ আবার নাক দিয়ে পানি আসার কারণে ‘ওয়েট কফ’। ‘ক্রনিক রাইনোসাইনাসাইটিস’ অর্থাৎ সাইনাসের দীর্ঘমেয়াদি সংবেদনশীলতা থেকেও স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি লোপ পেতে পারে।”

“তবে হাঁপানি ও বেশি জ্বরের ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা অনবরত বেশি থাকে না। নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি হওয়া ইত্যাদিও ‘কোভিড-১৯’ উপসর্গ নয়, বরং তা অ্যালার্জি কিংবা সর্দি-জ্বরেরই লক্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

“খাবার থেকে অ্যালার্জি ও ‘একজিমা’ শিশুদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায়। অপরদিকে হাঁপানি ও ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’ প্রাপ্তবয়ষ্কদের মধ্যে বেশি চোখে পড়ে।”

“অ্যালার্জি রাইনাইটিস’য়ের চিকিৎসা করা না হলে তা বয়ে আনতে পারে ঘুমের সমস্যা, ‘কনজেশচন’য়ের কারণে দৈনন্দিন কাজে বাধা সৃষ্টি হতে পারে ‘স্নিজিং রাইনোরিয়া’, চুলকানিসহ বিভিন্ন সমস্যা। আবার তা ‘ক্রনিক রাইনোসাইনাসাইটিস’য়ের দিকেও মোড় নিতে পারে।”

হাঁপানি, শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জি, ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’ শিশুদের সাধারণ সমস্যা। ভৌগলিক অবস্থান ও বয়সভেদে শিশুদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রায় ভিন্নতা আছে। একেক দেশে দূষণের মাত্রা একেক রকম, অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানের মাত্রাও ভিন্ন।

২০১৩ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি অফ অ্যাজমা অ্যান্ড অ্যালার্জি ইন চাইল্ডহুড (আইএসএএসি)’তে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, সেসময় ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের মাঝে হাঁপানি, ‘রাইনোকনজাংটিভাইটিস’ ও ‘অ্যাকজিমা’র ঝুঁকি যথাক্রমে ১৪.১, ১৪.৬ ও ৭.৩ শতাংশ।

একই রোগের ঝুঁকি ছয় থেকে সাত বছর বয়সিদের মধ্যে যথাক্রমে ১১.৭, ৮.৫ এবং ৭.৯ শতাংশ।

২০১৮ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি অফ অ্যাজমা অ্যান্ড অ্যালার্জি ইন চাইল্ডহুড (আইএসএএসি)’তে প্রকাশিত আরেক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ছয় থেকে সাত বছর বয়সিদের মাঝে ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’য়ের ঝুঁকি ১১.৩ শতাংশ। আর ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের মাঝে তা ২৪.৪ শতাংশ।

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ‘সাপ্লিমেন্ট’ কতটুকু কার্যকর?

কোনো ‘সাপ্লিমেন্ট’ বা ওষুধ ‘কোভিড-১৯’ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে এমন কোনো প্রমাণ এখনও নেই।

যুক্তরাজ্যে এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি ‘সাপ্লিমেন্ট’ দেওয়া হয়। তবে পাশাপাশি শিশুর খাদ্যাভ্যাসে সুষম পুষ্টি থাকাও অত্যন্ত জরুরি।

শিশুদের করোনাভাইরাস ঝুঁকি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে

‘কোভিড-১৯’য়ের কারণে শিশুদের মাঝে মারাত্বক ‘হাইপার ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম’ দেখা গিয়েছিল, তবে একে বলা যায় একটি দূর্লভ ঘটনা। শিশুরা যে একেবারেই আক্রান্ত হচ্ছে না বা কষ্ট পাচ্ছে না তা বলা সম্ভব নয়, হচ্ছে। তাদেরকে হাসপাতালে নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে সেবাও দিতে হচ্ছে। তবে সবই কালেভদ্রে, এটা দৈনন্দিন ঘটনা হয়।

এখনও আমরা দাবি করতে পারি যে শিশুরাই করোনাভাইরাসে সবচাইতে কম ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

আরও পড়ুন