কোভিড-১৯: মৃদুমাত্রায় রোগটির ধরন

অস্ট্রিয়ার মেডিকল ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনা’র বিজ্ঞানী ও গবেষকরা সাত ধরনের মৃদুমাত্রার কোভিড-১৯’ শনাক্ত করেছেন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2020, 11:21 AM
Updated : 5 Nov 2020, 11:21 AM

এছাড়াও তাদের দাবি, করেনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ১০ সপ্তাহ পর ওই আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটায়।

‘অ্যালার্জি’ নামক সাময়িকীতে গবেষণাটির বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বিশ্বব্যাপি গবেষক আর বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের কার্যকর টিকা ও তার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নতুন এই গবেষণালব্ধ তথ্য সেই কাজে সফল হওয়ার পথে সহায়ক হবে বলে মনে করেন সংশ্লিস্ট গবেষকরা।

গবেষণার নেতৃত্ব দেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষজ্ঞ উইনফ্রেড এফ পিকল এবং ‘অ্যালার্জিওলজিস্ট’ রুডল্ফ ভ্যালেন্টা। দুজনেই কাজ করছেন অস্ট্রিয়ার মেডিকল ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনা’র ‘সেন্টার ফর প্যাথোফিজিওলজি, ইনফেকসিওলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি’ বিভাগে।

গবেষণায় ১০৯ জন ‘কোভিড-১৯’ থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন এমন রোগী ও ৯৮ জন পুরোপুরি সুস্থ মানুষের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।

‘কোভিড-১৯’ রোগের আক্রান্তের মাত্রা যাদের তীব্র নয়, তাদের মাঝে রোগটির সাতটি ধরণ আবিষ্কার হয় এই গবেষণায়।

ধরনগুলো হল

- ‘ফ্লু’য়ের মতো উপসর্গের সঙ্গে জ্বর, কাঁপুনি, অবসাদ এবং কাশি।

- সাধারণ সর্দি, সঙ্গে নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, খুশখুশে গলা, নাক বন্ধ থাকা এবং হাড়ের জোড় ও পেশিতে ব্যথা।

- শুধুই হাড়ের জোড় আর পেশিতে ব্যথা।

- চোখ জ্বালাপোড়া এবং ‘মিউকোসাল ইনফ্লামেইশন’।

- ফুসফুসের সমস্যার সঙ্গে নিউমোনিয়া এবং দম আটকে আসার অনুভূতি।

- ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল’ সমস্যার সঙ্গে ডায়রিয়া, বমিভাব ও মাথাব্যথা।

- ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া, জিহ্বায় স্বাদ বুঝতে না পারা।

উইনফ্রেড এফ পিকল বলেন, “ঘ্রাণ ও স্বাদের অনুভূতি হারানোর উপসর্গ তাদের মধ্যেই বেশি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বয়স কম। এই বয়সের হিসেবের ভিত্তি হলো সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী কোষ ‘টি লিম্ফোসাইট’য়ের সংখ্যা যা সম্প্রতি ‘থাইমাস’ গ্রন্থি থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

এর অর্থ হল, এখন আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি ‘কোভিড-১৯’ রোগের প্রাথমিক পর্যায়গুলো কেমন।”

সেরে ওঠার পথে থাকা রোগীদের রক্তে কোভিড-১৯’য়ের প্রভাব

যারা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পথে, তাদের রক্তে সহজেই শনাক্ত করা যায় এমন পরিবর্তন রেখে যায় ‘কোভিড-১৯’।

পিকল বলেন, “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাতে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ‘সিডিফোর’ ও ‘সিডিএইট’ নামক ‘টি সেলস’।

দুই কোষই করোনাভাইরাসে বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশল রপ্ত করে, যার মধ্যে ‘সিডিএইট টি সেল’য়ের দেখা যায় শক্তিশালী সক্রিয়তা।

এ থেকে বোঝা যায়, প্রাথমিক ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে দেখা যায় ‘রেগুলেটরি’ কোষগুলোর অনেকাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে, যা ভয়ানক লক্ষণ। কারণ, সেখান থেকে দেখা দিতে পারে ‘অটোইমিউনিটি’ যেখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই রোগ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

তিনি আরও বলেন, “সুস্থ হওয়া রোগীদের রক্তে প্রচুর পরিমাণে ‘অ্যান্টিবডি’ প্রস্তুতকারী কোষ লক্ষ্য করা যায়। জ্বর যত বেশি হবে, ‘অ্যান্টিবডি’র মাত্রাও তত বেশি হবে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রোগের সঙ্গে লড়াই করা অবস্থাতেই নিজেকে আরও শক্তিশালী করে। এই কাজে থাকে ‘ইমিউন সেল’ আর ‘অ্যান্টিবডি’র সম্মিলিত প্রচেষ্টা।”

আরও পড়ুন