করোনাভাইরাস: রোগীদের সাধারণ লক্ষণ

চীনের উহানে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম দিকে মৃত্যুবরণ করা ৮৫ জনের ‘মেডিকাল রিপোর্ট’ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন গবেষকরা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2020, 04:32 PM
Updated : 12 April 2020, 08:54 PM

এই গবেষক দলে ছিলেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আটটি ‘মেডিকাল ইন্সটিটিউট’য়ের গবেষকরা। এরমধ্যে আছে ‘চাইনিজ পিপলস’স লিবারেশন আর্মি জেনারেল হসপিটাল’ এবং ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’।

গবেষণার আওতাভুক্ত ৮৫ জন মৃত রোগীর উপসর্গের মধ্যে কয়েকটি মিল পাওয়া যায়।

এদের সিংহভাগই পুরুষ, বয়স ৫০ বা তার বেশি এবং সবারই দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ ছিল। গুরুতর মাত্রার ‘কোভিড-১৯’য়ের চিকিৎসা নেওয়ার পরও এদের প্রত্যেকেই মারা যান ‘মাল্টিপল অর্গান ফেইলিউর’য়ের কারণে।

যাদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয় তারা ৯ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এই সময়ের মধ্যে চীনের ‘হানান হসপিটাল’ কিংবা ‘উহান ইউনিয়ন হসপিটাল’য়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

‘আমেরিকান জার্নাল অফ রেস্পিরাটরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন’য়ে এই গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

আগেই বলা হয়েছে অধিকাংশ মৃত্যুবরণকারী ছিলেন প্রবীণ পুরুষ। গবেষকরা তাদের ‘মেডিকাল হিস্টোরি’ থেকে জানার চেষ্টা করেন কী ধরনের রোগ তাদের শরীরে আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল।

এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হওয়ার পর তাদের কী উপসর্গ দেখা দিয়েছিল সেগুলো জানতে পারেন গবেষকরা। জানা যায় তাদের বিভিন্ন ‘ল্যাবরেটরি টেস্ট’, ‘সিটি স্ক্যান’ ইত্যাদির রিপোর্ট এবং তাদেরকে কী চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল সে সম্পর্কেও।

জানা যায়, মৃতদের মধ্যে ৭২.৯ শতাংশ ছিলেন পুরুষ এবং তাদের গড় বয়স ৬৫.৮ বছর। সবারই ছিলো হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ।

গবেষকরা বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, এই গবেষণা মানুষের সামনে ‘কোভিড-১৯’য়ের ভয়াবহতা তুলে ধরতে পারবে। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ পুরুষ, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ‘করোনারি হার্ট ডিজিজ’ এবং ডায়বেটিস আছে তাদের ঝুঁকি যে কতটা বেশি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবে।”

গবেষণার আওতাভুক্ত ৮৫ জনেরই ছিল জ্বর, প্রচণ্ড অবসাদ এবং শ্বাসকষ্ট। এদের মধ্যে ৮১.২ শতাংশেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ই ‘ইয়োসিনোফিল’য়ের মাত্রা ছিল অত্যন্ত কম। ‘ইয়োসিনোফিল’ হল এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা এবং বিশেষ ধরনের রোগ প্রতিরোধকারী কোষ যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

হাসপাতালে থাকাকালীন তারা যেসব শারীরিক সমস্যা সহ্য করেছেন তার মধ্যে ছিল শ্বাসতন্ত্রের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া, আতঙ্ক, ‘অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম’, ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’ বা বিশৃঙ্খল হৃদস্পন্দন ইত্যাদি।

চিকিৎসা হিসেবে অধিকাংশকেই দেওয়া হয় ‘অ্যান্টিবায়োটিক’, ‘অ্যান্টিভাইরাল’ ও ‘গ্লুকোকর্টিকয়েড’ ওষুধ। কয়েকজনকে দেওয়া হয় ‘ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন্স’ যা ‘অ্যান্টিবডি’ নামেও পরিচিত অথবা ‘ইন্টারফেরন আলফা-টুবি’, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে।

“তবে ভাইরাসরোধী এবং ‘ইমিউনোসাপ্রেসিভ এজেন্ট’ এই ওষুধগুলো ‘কোভিড-১৯’য়ের বিরুদ্ধে কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি”, বলেন গবেষকরা।

নিজেদের গবেষণার আলোকে তারা বলেন, “মৃত ব্যক্তিদের দেওয়া চিকিৎসা, এমনকি ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল’ ওষুধের মিশ্রণ তাদের ওপর কোনো উপকারী প্রভাব ফেলতে পারেনি। এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল, রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেওয়া শুরু করে এবং একবার তা শুরু হলে দ্রুত অবস্থা প্রাণঘাতি মোড় নেয়। যা বোঝা যায় এই রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আর মৃত্যুবরণ করার মধ্যকার সময়ের বিবেচনায়, যা গড়ে প্রায় ৬.৩৫ দিন।”

গবেষকদের ধারণা, শরীরে ‘ইয়োসিনোফিল’য়ের অস্বাভাবিক নিম্নমাত্রার সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারাত্বক পরিণতির শিকার হওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। ‘ইয়োসিনোফিল’য়ের অস্বাভাবিক নিম্নমাত্রাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ইয়োসিনোফিলোপেনিয়া’।

এই গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিশ্বব্যাপি চিকিৎসকদের ‘কোভিড-১৯’য়ের মোকাবেলা করতে দিক নির্দেশনা দেবে বলে আশা করেন গবেষকরা।

পাশাপাশি বিশ্বের সকল চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের ‘কোভিড-১৯’ মোকাবেলায় সবধরণের চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তারা।

গবেষকরা বলেন, “গবেষণায় চীনের উহানে ‘কোভিড-১৯’য়ে প্রাথমিক পর্যায়ে মৃত্যুবরণকারীদের নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় এবং সেখান থেকে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আমরা জানতে পেরেছি। তবে বর্তমানে তা অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। নতুন পরিস্থিতিতে এই ভাইরাস এবং তা থেকে সৃষ্ট রোগের বৈশিষ্ট্য ভিন্নও হতেই পারে, আবার একই থাকতে পারে।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন-