রূপচর্চায় ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন সি’র কথা প্রায়শই বলা হয়। তবে এই উপাদান চুলের যত্নেও বেশ কার্যকর।
সম্প্রতি ‘স্কিনিফিকেশন’ শব্দটি বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত উপকরণগুলো চুলের যত্নেও প্রয়োজন। কারণ মাথার ত্বক মুখের ত্বকের একটি বাড়তি অংশ।
ভিটামিন সি ব্যবহারের উপকারিতা
পোল্যান্ড’য়ের বায়োকেমিস্ট, প্রত্যয়িত সৌন্দর্যবিদ এবং ত্বকের প্রসাধনীতে ব্যবহৃত উপকরণ পর্যালক প্রতিষ্ঠান ‘অনস্কিন’য়ের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান ভ্যালরি অ্যাপ্রোভিচ’য়ের মতে, “ত্বকের মতো চুলের যত্নে ভিটামিন সি সমান কাজ করে।”
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশতি প্রতিবেদনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “ভিটামিন সি একটি বিশুদ্ধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ফ্রি রেডিকেল সমৃদ্ধ কোষের ক্ষয় কমায়। পারিপার্শিক চাপের কারণে হওয়া অক্সিডেটিভ ক্ষয় যেমন- বায়ু দূষণ ও অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ ত্বক ও চুল দুইয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
ভার্জিনিয়া নিবাসী মার্কিন ত্বক বিশেষজ্ঞ এবং ‘ইনার গ্লো’য়ের প্রতিষ্ঠাতা নোরিন গ্যালারিয়া বলেন, “ভিটামিন সি মাথার ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। ঠিক যেভাবে ত্বকে কোলাজন উৎপাদন করে। এতে মাথার ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।”
তিনি আরও বলেন, “এতে মাথার চুল মসৃণ ও চকচকে হয়। ভিটামিন সি চুলে সমতল ও চকচকেভাব আনে এবং গোড়া থেকে শক্তিশালী করে তোলে। এতে চুল আর্দ্র ও উজ্জ্বল থাকে।”
“চুল সজ্জায় যে কোনো তাপীয় যন্ত্র ব্যবহারের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখতেও ভিটামিন সি সহায়ক”- এই চিকিৎসক।
কতটা ঘন ঘন ব্যবহার করা প্রয়োজন?
নির্ভর করছে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কী ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা হচ্ছে সেটার ওপর।
যেমন- যদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয় তাহলে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে নিয়মিত চুলে তা ব্যবহার করা যায়।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে সপ্তাহে দুয়েকবার ব্যবহার করা উপকারী। একইভাবে কেউ যদি ভিটামিন সি সেরাম ব্যবহার করতে চান তাহলে চুলের প্রয়োজন বুঝে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
যেমন- গোসল করার পরে, কেউবা গোসলের এক ঘণ্টা আগে, কেউ আবার সারা রাতে জন্য এসব ব্যবহার করে থাকেন। পণ্যের গায়ের লেবেল পড়ে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ডা. ভ্যালরি।
তার মতে, “নিয়মিত ভিটামিন সি ব্যবহারে তেমন কোনো দৃশ্যমান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কারণ এটি একটি নিরাপদ উপকরণ।”
তবে অনেকেরই অ্যালার্জির সমস্যা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যবহারের আগে ‘প্যাচ টেস্ট’ করে নেওয়া প্রয়োজন। যাতে নতুন কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানো যায়।
কোন ধরনের চুলে ভিটামিন সি ব্যবহার করা উচিত?
চুলসজ্জা-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইভ ভালসি বলেন, “সাধারণত পাতলা অথবা খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে এমন চুলের জন্য ভিটামিন সি বেশি কার্যকর।”
তিনি বলেন, “এছাড়াও চুলে যদি ভঙ্গুরভাব বা আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ চুল পরিচর্যার প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। এতে চুলের আদ্রর্তা সুরক্ষিত থাকবে এবং পুষ্টি উপাদান চুলের ভেতরে প্রবেশ করে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।”
অ্যাপ্রোভিচ সমর্থন করে বলেন, “অতিরিক্ত রং করা, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আগা-ফাটা চুলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে ভিটামিন সি।
“ভিটামিন সি কৌশিকনালীগুলোর অখণ্ডতা বজায় রাখতে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনে ভূমিকা রাখে। যা চুলের ফলিকল উন্নত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। চুলকে সুরক্ষিত রেখে চকচকে দেখাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।”
তবে যাদের মাথার ত্বক সংবেদনশীল তাদেরকে সচেতন করে ডাক্তার গ্যালারিয়া বলেন, “মনে রাখা প্রয়োজন যে ভিটামিন সি এক ধরনের অ্যাসিড। তাই চুলের যত্নে এর ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে।”
“যদি মাথার চুল উজ্জ্বল ও চকচকে দেখাতে চান আবার মাথার ত্বক সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার না করে বরং চুলের মাঝ বরাবর অংশ থেকে শেষ পর্যন্ত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার করা যেতে পারে”- পরামর্শ দেন তিনি।
ফলাফল কখন আশা করা যায়
ভালসি বলেন, “সাধারণত দুতিন মাসের মধ্যেই এর ব্যবহারের ফল পাওয়া যায়। ভালো ফলাফলের জন্য এর সাথে অন্যান্য খুব বেশি উপাদান বা ট্রিটমেন্ট ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এতে ভিটামিন সি’র কার্যকারিতা কমে যায়।”
ভালো ফলাফল পেতে সম্পূর্ণ ভিটামিন সি ভিত্তিক প্রসাধনীর ওপরে ভরসা রাখা উচিত। এতে দ্রুতই চুলের উন্নতি চোখে পড়বে।
অ্যাপ্রোভিচের মতে, “চুলের যত্নে ভিটামিন সি’র পাশাপাশি কেবল ভিটামিন ই ব্যবহার করা যায়। এই দুই যৌগ একসাথে ভালো কাজ করে। ভিটামিন ই মাথার ত্বকের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং এটা ভিটামিন সি’র সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করে। প্যান্থেনল ও বিটাইন একইভাবে চুলের আর্দ্রতা রক্ষায় এবং মজবুত রাখতে ভূমিকা রাখে।”
আরও পড়ুন