চুপ! সত্যি অনেকগুলো পায়ের শব্দ পাচ্ছি। ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখলের মুখের কথা শেষ হতে পারে না, দরজা খোলার শব্দ শোনা যায়। বিচিত্র ধরনের ক্যাচ ক্যাচ ক্যাট ক্যাট শব্দের পর বোঝা গেলো দরজা খুলে ভেতরে একদল লোক ঢুকেছে।
Published : 12 Nov 2022, 09:24 AM
ফাঁকিস্তান আর্মির চারজন অফিসার কাচুমাচু মুখে শুয়ে আছে একটা বন্ধ ঘরে। ঘরটা কোথায়, ইট নাকি কাঠ দিয়ে বানানো কিছুই বোঝা যায় না। হালকা আলোয় একে অপরের মুখও দেখতে পাচ্ছে না।
প্রত্যেকের হাত-পা শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা। কেবল গড়াতে পারে মেঝের উপর, উঠে বসতেও পারছে না। চারজন অফিসার ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখল, ক্যাপ্টেন মাহবুবা দুররানী, ক্যাপ্টেন রশীদ গজনবী আর লেফটেন্যান্ট ইকবাল মোজাইক লম্বা হয়ে শুয়ে হাঁপাচ্ছে।
স্যার কারা যেনো আসছে, ক্যাপ্টেন মাহবুবা দুররানী বলে। পাশে চিত শুয়ে থাকা টিম-লিডার ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখল ঘাড় বাঁকা করে তাকায়, তুমি কীভাবে বুঝলে? কারো তো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। গতকাল রাতে ঢাকার আকাশে জালে আটকে যাওয়ার পর নিচে নামিয়ে এনে এই বন্ধ ঘরে রেখে গেলো, কিন্তু কারা আমাদের এমনভাবে ধরে আনলো স্যার? প্রশ্ন করছে লেফটেন্যান্ট ইকবাল মোজাইক, এভাবে কতোদিন পরে থাকতে হবে কে জানে? বাড়িতে আমার নয় মাসের বাচ্চা!
চুপ! সত্যি অনেকগুলো পায়ের শব্দ পাচ্ছি। ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখলের মুখের কথা শেষ হতে পারে না, দরজা খোলার শব্দ শোনা যায়। বিচিত্র ধরনের ক্যাচ ক্যাচ ক্যাট ক্যাট শব্দের পর বোঝা গেলো দরজা খুলে ভেতরে একদল লোক ঢুকেছে। ফাঁকিস্তানের বন্দিরা ঘাড় বাঁকা করে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে, কারা ঢুকলো?
বাইরের লোকজন ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল লাইট জ্বলে ওঠে। আলোয় ফাঁকিস্তানের বন্দিদের চোখের দৃষ্টিতে ধাঁধা লাগে। ওরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ঘাড় সোজা করে সামনে তাকালে দেখতে পায়, বাংলাদেশ পুলিশের বেশ কয়েকজন অফিসার এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে ওদের সামনে।
জগলুল? ডাক দেন ডিআইজি শফিকুল কবীর।
স্যার?
ওদের পায়ের বাঁধন খুলে দাও, কিন্তু হাতেরটা খুলবে না। রফিক, তুমিও হেল্প করো জগলুলকে।
জি স্যার।
বাকিদের দিকে চোখ বুলিয়ে ডিআইজি আবার তাকান ক্যাপ্টেন ইকবার জবরদখলের দিকে, এই কষ্ট করার কোনো প্রয়োজন ছিল তোমাদের? আমাদের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমরা তোমাদের একটা সোনার ঘোড়া উপহার দিতাম।
জগলুল আর রফিক মিলে ফাঁকিস্তানের বন্দি অফিসারদের পায়ের বাঁধন খুলে দিলে ওরা পা নাড়িয়ে বসে। প্রত্যেকের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকায় ডিআইজি শফিকুল কবীর। মাথায় চমৎকার ক্যাপ। চওড়া কপাল। চোখ দুটো ভাসা ভাসা কিন্তু দৃষ্টি তীক্ষ্ণ।
তোমরা দাঁড়াও! আদেশ করেন শফিকুল কবীর।
সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকিস্তানের চারজন আর্মি অফিসার দাঁড়ায়, যদিও অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আটকা পড়েছে বাংলাদেশের পুলিশের জালে। না দাঁড়িয়ে যাবে কোথায়?
ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখল কে?
আমি! ক্যাপ্টেন নিজেকে সনাক্ত করে।
মৃদু হাসি ফোটে ডিআইজি শফিকুল কবীরের। ক্যাপ্টেনের সামনে এসে দাঁড়ান তিনি, ধন্যবাদ শুরুতে স্বীকার করবার জন্য। স্বীকার না করলে বাধ্য করতাম।
বাকিদের দিকে চোখ বুলিয়ে ডিআইজি আবার তাকান ক্যাপ্টেন ইকবার জবরদখলের দিকে, এই কষ্ট করার কোনো প্রয়োজন ছিল তোমাদের? আমাদের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমরা তোমাদের একটা সোনার ঘোড়া উপহার দিতাম।
আমরাতো উপহার চাই না, উত্তর দেয় মাহবুবা দুররানী।
জানি, আমাদের পাতলাদা উড়ে চলা, সাঁতার কাটা আর দৌড়ে পাল্লা দেওয়া সোনার ঘোড়া বানালেন, সেই প্রযুক্তি চুরি করতে চাইলে? তাই না?
মাথা নিচু করে রাখে ফাঁকিস্তানের চার অফিসার।
কী করে ভাবলে আমাদের পাতলাদাকে আমরা বিশেষ পাহারা দিয়ে রাখি না? যদিও তিনি কিছুই জানেন না, কিন্তু সরকার সব সময় পাতলাদাকে পাহারা দিয়ে রাখার জন্য একটা বিশেষ পুলিশ দল গঠন করেছে। যেমন ধরো, তোমারা যখন ঢাকার আকাশে ছিলে, দেখো নাই ক্রিকেট বলের মতো কিছু একটা তোমাদের ঘিরে ঘুরছে? দেখেছো?
জি দেখেছি, জবাব দেয় রশীদ গজনবী।
আসলে কী ছিল ওই ক্রিকেট বলের সাদৃশ্যের মধ্যে, বলতে পারবে?
শফিকুল কবীরের প্রশ্নে ফাঁকিস্তানের আর্মি অফিসাররা একে অপরের দিকে তাকায়। বিব্রত দৃষ্টিতে আবার নিচের দিকে তাকায়।
শোনো মিস্টার ইকবাল জবরদখল, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যখন ষড়যন্ত্র শুরু করেছো, বিশেষ করে আমাদের গর্ব পাতলাদার তৈরি সোনার ঘোড়া চুরি করে নিয়ে যাবার ব্যাপারটা- সবটাই আমরা আগে থেকে জানতাম, গর্বিত গলায় বলেন ডিআইজি শফিকুল কবীর।
কীভাবে? বিস্মিত ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখল। আমাদের দেশে কি আপনাদের স্পাই ছিল?
ছিল, কেনো? এখনও আছে। তবে মানুষ স্পাই না।
মানুষ স্পাই না? আরও অবাক লেফটেন্যান্ট ইকবাল মোজাইক। মানুষ ছাড়া স্পাই কীভাবে হয়?
আমার মনে হয়, আপনি ড্রোন বিমানের কথা বলছেন? প্রশ্ন করে রশীদ গজনবী।
উল্লাসের হাসি ডিআইজি শফিকুল কবীরের, ড্রোন! ড্রোন তো আমাদের কাছে নস্যি। আমরা তোমাদের দেশে স্পাইগিরি করবার জন্য পাঠিয়েছি ক্রিকেট বল।
হোয়াট? চমকে ওঠে ফাঁকিস্তান আর্মির ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখল! ক্রিকেট বল দিয়ে কি স্পাইগিরি করা সম্ভব?
শুধু সম্ভব নয়, আমরা করে দেখাচ্ছি না? আর ক্রিকেট বল দিয়ে ফাঁকিস্তানে স্পাইগিরি করা যাবে, এই আইডিয়াটাও দিয়েছেন বাংলাদেশের গর্ব বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জুরাইনের মিস্টার পাতলা মিয়া। আমি জানি, এই অসাধারণ আইডিয়া তোমাদের মাথায় ঢুকবে না। কারণ, তোমাদের মাথায় ঘিলু মানে মগজ কম।
কিন্তু স্যার, ফাঁকিস্তান দলের লিডার ইকবাল জবরদখল মেনে নিতে পারছে না ক্রিকেট বলের স্পাইগিরি। মনে করছে, ওদের বিভ্রান্ত করার জন্য গল্পের ফাঁদ পেতেছে ডিআইজি শফিকুল কবীর।
কোনো কিন্তু নয়, একেবারে সত্যি ঘটনা। পাতলাদা দুটো পাউডার আবিষ্কার করেছেন, একটা পাউডারের রঙ সবুজ আর একটা পাউডার লাল। লাল আর সবুজ। আমাদের পতাকার রঙ। সঙ্গে আবিষ্কার করেছেন ক্রিকেট বলের মতো একটা ছোট, কিন্তু খুবই কার্যকর একটা বল। বলের মধ্যে বিচিত্র ধরনের মেশিন সাটানো থাকে। সেই ক্রিকেট বলটাতে সবুজ পাউডার মাখলে নিমিষে হাওয়ায় হয়ে যায়।
কিন্তু হাওয়া হলে গেলেও সেন্ট্রাল অফিসের সঙ্গে বিনা তারে যুক্ত থাকে। আমরা ক্রিকেট বলটাকে সাদা পাউডার মেখে পাঠিয়ে দেই তোমাদের দেশে। ও ঘুরে ঘুরে তোমাদের দেশের সব তথ্য পেটে ধরে বাংলাদেশের সীমানায় এলেই সেন্ট্রাল অফিসের স্ক্রিনে বলটা লালবিন্দুর মতো ভেসে ওঠে। লাল বিন্দুটার ওপর লাল পাউডার মেখে দিই। সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেট বলটা সত্যিকারের আকার ফিরে পায় এবং অফিসে নিজেই উড়ে উড়ে চলে আসে। ব্যাপাটা বুঝলে তো তোমরা? কত্তো সহজে আমরা তোমাদের সব ষড়যন্ত্র ধরে ফেলি?
কয়েক কদম হেঁটে ডানে মোড় ঘুরতেই বিরাট একটা সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে। সেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে একটা বিরাট বন্ধ ঘরের সামনে দাঁড়ায় দলটা। বন্ধ ঘরের কর্নারের দেয়ালে একটা ছোট্ট বোতাম জেগে আছে। জেগে থাকা বোতামে চাপ দেন ডিআইজি শফিকুল কবীর।
কিন্তু বলটা কিছু বলে? জানতে চায় রশীদ গজনবী।
নিশ্চয়ই বলে। না বললে আমরা তথ্য পাই কোথা থেকে? হাসেন ডিআইজি শফিকুল কবীর। বল ফিরে আসার পর আমরা বসে যাই একটা গোপন কক্ষে। সেই কক্ষে একটা মেশিনের উপর বলটাকে বসিয়ে দিলে ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে, আর ফাঁকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র করছে, বলতে থাকে। আমরা আবার সুপার কম্পিউটারের সঙ্গে একটা তার যুক্ত করে দিই। ক্রিকেট বলের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সব রেকর্ড হয়ে অন্য প্রান্ত থেকে প্রিন্ট হয়ে কাগজও চলে আসে হাতে, বুঝেছো ব্যাপরাটা?
জি বুঝেছি! অবাকের উপর অবাক ফাঁকিস্তানের ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখল। বাংলাদেশ বিজ্ঞানে কতো এগিয়ে গেছে? কীভাবে সম্ভব?
তোমাদের যুদ্ধজাহাজ আরব সাগর হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে আসে, তখন থেকেই আমরা তোমাদের দেখছি।
দেখছেন? আরও বিস্ময় ওদের কণ্ঠে।
হাঁটতে হাঁটতে ফিরে তাকান মিস্টার শফিকুল কবীর ওদের দিকে, হ্যাঁ দেখেছি। প্রতিটি মুহূর্তের গতি চলাচল সবই আমরা দেখেছি।
কীভাবে সম্ভব? বিশ হাজার ফুট পানির নিচ দিয়ে আমাদের যুদ্ধজাহাজ এসেছে। সেই যুদ্ধজাহাজ দেখা কীভাবে সম্ভব?
কীভাবে সম্ভব? চলো তোমাদের দেখাই হাতে-কলমে, ডিআইজি ইশারা করেন জগলুলকে, এ্যাই ওদের নিয়ে আমাদের সেন্ট্রাল রুমে চলো।
ওকে স্যার! সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় জগলুল।
ডিআইজি শফিকুল কবীর সামনে সামনে হাঁটেন। পেছনে বাংলাদেশের পুলিশের স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা, মাঝখানে ফাঁকিস্তানের বন্দি আর্মি অফিসাররা। কয়েক কদম হেঁটে ডানে মোড় ঘুরতেই বিরাট একটা সিঁড়ি নিচের দিকে নেমে গেছে। সেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে একটা বিরাট বন্ধ ঘরের সামনে দাঁড়ায় দলটা। বন্ধ ঘরের কর্নারের দেয়ালে একটা ছোট্ট বোতাম জেগে আছে। জেগে থাকা বোতামে চাপ দেন ডিআইজি শফিকুল কবীর। সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় সামনের বিরাট দেয়াল, ঘুমঘুম চুমচুম শব্দে।
দেয়াল সরে গেলে ডিআইজি পিছু পিছু প্রবেশ করে রুমের মধ্যে। রুমের ঠিক মাঝ বরাবর একটা রশি ঝুলে আছে উপর থেকে। সেই রশি ধরে টান দেন ডিআইজি। টান দেওয়ার পরপরই সামনের মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে আসতে থাকে বিরাট একটা লিফট। ধীরে ধীরে লিফটটা এসে স্থির হলে দরজা খুলে যায়।
এতোসব তেলেসমাতি কাণ্ডকারখানা দেখে ফাঁকিস্তানের আর্মিদের তো চক্ষু ছানাবড়া। যদিও হাত ওদের বাঁধা, কিন্তু চক্ষু তো খোলা। পা খোলা। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে, বাংলাদেশের পক্ষে এতো প্রযুক্তির উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব?
লিফটে ওঠে সবাই। নিজের ইচ্ছেয় লিফট চলতে শুরু করে নিচের দিকে। এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়.....দশ এগারো বারো... পনেরো বিশ... লিফট নামছে তো নামছেই। থামার কোনো লক্ষণ নেই। কতোদূর যাবে লিফট?
মনে মনে আঁতকে ওঠে ফাঁকিস্তানের কমান্ডো দলের লিডার ক্যাপ্টেন ইকবাল জবরদখল। শেষমেষ কৌতুহলে টিকতে না পেরে প্রশ্ন করে, কতো তলা নিচে নামবে লিফট?
ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসেন ডিআইজি শফিকুল কবীর। হালকা করে গোঁফে তা দিয়ে বলেন, একশো তলা নামবে এই লিফট!
মাটির নিচে একশো তলা পর্যন্ত নামবে এই লিফট? ফাঁকিস্তানের ক্যাপ্টেন মাহবুবা দুররানীর মুখ হা, অক্সিজেন পাওয়া যাবে এতো নিচে? অক্সিজেন না পেলে বাঁচবো কী করে? ডুকরে কাঁদতে শুরু করে সে।
চলবে...
কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!