হাতে আঁকা বা ক্যামেরায় তোলা গতানুগতিক ছবি নয়, এই এক্সিবিশনের ছবিগুলো ভিন্ন ধরনের।
Published : 18 May 2024, 03:52 PM
এক্সিবিশন, শব্দটার সঙ্গে সবাই মনে হয় পরিচিত। শুনলেই মনে হয় হাতে আঁকা বা ক্যামেরায় তোলা বেশকিছু ছবি একটার পর একটা সাজানো।
এই তো ১০ মে আমিও একটা এক্সিবিশনে গিয়েছিলাম। তবে কোনো হাতে আঁকা বা ক্যামেরায় তোলা গতানুগতিক ছবির এক্সিবিশন নয়। এই এক্সিবিশনের ছবিগুলো ভিন্ন ধরনের।
ভাষাশিক্ষার প্রথম ধাপের বইগুলোকে বলা হয় ‘প্রাইমার’। বাংলা প্রাইমার অধ্যায়ের সূচনা হয় ১৮১৬ সালে। শিল্পী সব্যসাচী হাজরার উদ্যোগে এই এক্সিবিশনের নাম ’প্রাইমার টু প্রেস’। রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে এ প্রদর্শনী চলে ৩ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত।
এই এক্সিবিশনে ছিল ১৮৪৯-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত ৮টি প্রাইমারের প্রচ্ছদ, ভেতরের পাতার লেখা ও ছবি এবং লেখকদের বিষয়ে তথ্য। এছাড়া ছিল মুদ্রণে অতীতকালে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্র যেমন- কাঠ বা লোহার উপর খোদাই করা ছোট-বড় বিভিন্ন অক্ষর, ব্লকে খোদাই করা বিভিন্ন অক্ষর, লেখা, ছবি যা কালিতে মাখিয়ে ছাপাতে হতো এবং সবচেয়ে বড় চমক সে সময় ব্যবহৃত মুদ্রণযন্ত্র।
এই এক্সিবিশনে একইসঙ্গে অতীতকালের প্রাইমার এবং তাদের মুদ্রণ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। যে প্রাইমারগুলো ছিলো সেগুলো হলো- মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশুশিক্ষা’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’, রামসুন্দর বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’, সীতানাথ বসাকের ‘আদর্শ লিপি’, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘হাসিখুশি’, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাক্ষর’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সহজ পাঠ’ এবং বিমলচন্দ্র ঘোষের ‘হাতেখড়ি’।
একেকটি প্রাইমারে ভিন্ন ভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে বর্ণপরিচয় এবং ভাষাগত পরিবর্তন। কিছু বইতে শুধু বর্ণ লেখা। কিছু বইতে বর্ণের পাশাপাশি বিভিন্ন ছড়া, কবিতা ও অনুচ্ছেদ রয়েছে। আবার কিছু বইতে ছবির মধ্য দিয়ে বর্ণপরিচয় রয়েছে। সব বইতেই ছোটদের বোঝার সুবিধার জন্য বর্ণপরিচয় দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক ও চিত্রশিল্পীরা।
এবার আসি মুদ্রণে একেক কালে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের কথায়। কিছু ব্লকে ছোট ও সূক্ষ্ম বর্ণ লেখা রয়েছে। কিছু ব্লক বড়। কিছু ব্লক কাঠের, কিছু আবার ধাতব।
এছাড়া ছিলো মুদ্রণে ব্যবহৃত বিভিন্ন আকারের যন্ত্র। তবে অতীতে ব্যবহৃত মুদ্রণযন্ত্র ছিলো সবচেয়ে চমকপ্রদ। দুইপাশে দুটি বড় চাকা রয়েছে যন্ত্রটিতে। রয়েছে সমান একটি গোলাকার তল, যেখানে কালি থাকে। আবার কিছু লিভারও রয়েছে যন্ত্রটিতে।
শিল্পী সব্যসাচী হাজরার এ প্রদর্শনীতে তার সম্পাদনায় উল্লিখিত প্রাইমারগুলোকে এক মলাটে এনে সুদৃশ্য একটি বইয়ের সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে, ‘বর্ণমালা’ শিরোনামে।
এক্সিবিশনটি আমাকে বাংলা প্রাইমার ও মুদ্রণের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। আর চোখের সামনে প্রথমবারের মতো এরকম মুদ্রণযন্ত্রের কাজ দেখা একটি নতুন ও অনন্য অভিজ্ঞতা আমার জন্য।
সব মিলিয়ে আমি দারুণ উপভোগ করেছি এক্সিবিশন। শিল্পীর কাছ থেকে এরকম আরও কাজ দেখার অপেক্ষায় রইলাম।