নূরুস সাফা অনিকের আঁকায় সাদিকা রুমনের গল্প।
Published : 19 Feb 2025, 12:28 AM
মেয়েটির নদীটির সঙ্গে দেখা হলো। অথবা নদীটির মেয়েটির সঙ্গে দেখা হলো। মেয়েটির নাম সোমেশ্বরী, নদীটির নাম মৌনী।
সোমেশ্বরীর কোনো বন্ধু ছিল না। তার ছিল পিঠ ছাপানো, পা অবধি গড়ানো চুল। লোকে বলত, নদীর মতো বয়ে চলা চুল। কেউ বলত মেঘের মতো। সোমেশ্বরীর কথা বলতে ভালো লাগত না, চুপ করে থাকতে ভালোবাসত। তাই ও ছিল একা। লোকে বলত, নদীর মতো মৌন।
মৌনী নদী ছিল ছোট মেয়ের মতো চপল। সারাবেলা একরাশ ঢেউ নিয়ে কলকল খলবল করে বয়ে চলত। লোকে বলত, গল্প বলা নদী। তবে সে অনেক কাল আগের কথা। মৌনী আর আগের মতো চপলতা করে না। সে-ও হয়ে গিয়েছে সোমেশ্বরীর মতো শান্ত, ধীর। তবে তার বুকে অনেক গল্প জমেছিল। প্রতিদিন তার ঢেউয়ে ঢেউয়ে গল্প জমা হতো। সেগুলো বলবার মতো বন্ধু ছিল না তার।
এমন একটা সময়ে সোমেশ্বরীর সঙ্গে দেখা হয় মৌনী নদীর। মৌনী সোমেশ্বরীর কাছে ঢেলে দেয় তার সমস্ত গল্প। ঢেউ খুলে খুলে সোমেশ্বরীকে তার জমানো গল্প বলে যায় গল্প বলা নদী মৌনী।
কী সেই গল্প? সে কথাই জানা যাবে সাদিকা রুমনের ‘গল্প বলা নদী’ নামে গল্পে। দ্বিতীয় গল্পটি প্রান্তধেনু নামে একটি গ্রাম নিয়ে। সে গ্রাম পাহাড় আর বনঘেঁষা। একদিকে পাহাড়। একদিকে বন। পাহাড়ের গায়ে শান্ত মনে বয়ে চলা ঝরনা গিরিধেনু। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে গিরিধেনু পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে। তারপর বয়ে যায়।
বয়ে যাওয়ার কালে সে হয়ে যায় নদী। শান্ত এক নদী। গিরিধেনু বেয়ে নেমে আসে পাথর। ছোট-বড় হরেক রকমের পাথর। পাথরগুলো জমে আছে পাহাড়ের গা ঘেঁষে। কিছু আবার এগিয়ে গিয়েছে একটু দূরে। আর দুধারে জড়াজড়ি করে আছে অজস্র ছোট বড় গাছগাছালি। সামান্য এগোলেই বন।
গাঁয়ের মানুষজন খুব একটা আসে না এদিকে। একদিন রোদের এক দুপুরবেলা-একেবারে ঝিমধরা দুপুরবেলায় একটা ছোট্ট মেয়ে এসে দাঁড়াল গিরিধেনুর পাশে। তার হাতটা বুকের কাছে চেপে ধরা। সেই হাতে একটা পাখি। মেয়েটি ঝরনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তারপর ভেজা হাত দিয়ে মুছে দিলো পাখিটার মাথা-শরীর। তখন হঠাৎ শুনতে পেল পেছন থেকে কে যেন বলছে, ‘তুমি কে গো?’ মেয়েটি পেছন ঘুরে দেখল...। কী দেখলো? মায়াবী এই গল্পটির নাম ‘রূপকথার জোনাকিরা’।
তৃতীয় গল্পটি হলো ‘পৃথিবীর শেষ বৃক্ষটি নিধন হওয়ার পর’। সবাই উদগ্রীব। সবাই যেতে চায়। সবাই উঠতে চায় ট্রেনে। গল্পটা একটা গ্রামের অথবা একটা দেশের অথবা একটা গ্রহের- হতে পারে পৃথিবী তার নাম। ধরে নেওয়া যাক এটা একটা দেশেরই গল্প। সেই দেশটার কথা বলি, তারপর বলব সেই দেশটার মানুষদের কথা। যারা ট্রেনে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিল।
সেই দেশটা একটা বৃক্ষশূন্য দেশ। আগেই বলেছি এটা একটা পৃথিবীরও গল্প হতে পারে। যদি গোটা পৃথিবীটাই হয়ে ওঠে একটা বৃক্ষশূন্য পৃথিবী। দেশের গল্পটা এ রকম- সেই দেশের শেষ বৃক্ষটিও একদিন নিঃশেষ হয়ে গেল। কেন নিঃশেষ হয়ে গেলো? তাহলে মানুষগুলো কীভাবে বেঁচে রইলো?
এসব রহস্যের উত্তর পাওয়া যাবে তিনটি গল্প নিয়ে ‘রূপকথার জোনাকিরা’ বইয়ে। এবার অমর একুশে বইমেলায় এটি প্রকাশ করেছে ‘শৈশবপ্রকাশ’। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ করেছেন নূরুস সাফা অনিক। মূল্য ২০০ টাকা।