কিছু গাছ আছে মোটেও শান্তশিষ্ট নয়। বেঁচে থাকার জন্য ওরা শিকার করে।
Published : 11 Oct 2024, 01:28 AM
গাছেরা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। একেবারে শান্তশিষ্ট ও নিরীহ। সূর্যের আলো, কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর পানির সাহায্যে বেঁচে থাকে ওরা। তবে কিছু গাছ আছে মোটেও শান্তশিষ্ট নয়। বেঁচে থাকার জন্য ওরা শিকার করে।
কাণ্ড বা পাতায় থাকা বিশেষ ফাঁদের মাধ্যমে গুবরে পোকা, মাছি, পিঁপড়া, প্রজাপতি বা বিভিন্ন পোকামাকড়ের মাংস খেয়ে থাকে এরা। এদের মাংসখেকো গাছও বলা হয়। তাহলে চলো জেনে নিই এমন ৫টি শিকারি গাছের কথা।
পিচার প্লান্ট (Pitcher Plant)
পিচার প্লান্ট দেখতে কলসির মতো। কলসির মতো বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে এরা শিকার করে থাকে। দেখতে বেশ উজ্জ্বল এরা। এজন্য পোকামাকড় সহজেই আকৃষ্ট হয়ে কাছে ঘেঁষে।
কলসির মতো অঙ্গের ভেতরটা ফাঁকা। ছোট ছোট প্রাণী ভেতরে প্রবেশ করলে ঢাকনা বন্ধ হয়ে যায়। কলসির ভেতরটায় আঠা থাকে। এটাই মূলত আসল ফাঁদ। আঠায় পতঙ্গগুলো আটকা পড়ে যায়।
পিচ্ছিল আঠায় আটকে শত চেষ্টা করেও বের হতে পারে না পতঙ্গ। তারপর অ্যাসিড নির্গত হয়। অ্যাসিডে ক্ষুদ্র প্রাণীটি মারা যায়। মৃতদেহ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে পিচার প্লান্ট। অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, সিসিলিস, মাদাগাস্কার ও দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গলে এই গাছের দেখা মেলে।
ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ (Venus Flytrap)
মাংসাশী গাছগুলোর মধ্যে ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। এই গাছের পাতাগুলো দেখতে অনেকটা মানুষের মুখগহ্বরের মতো। পাতাগুলো মাঝ বরাবর ভাঁজ হয়ে একটা ফাঁপা পৃষ্ঠ তৈরি করে।
পৃষ্ঠের ভেতরে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রয়েছে। পুরোটা ছোট ছোট লোমের মতো অঙ্গে আবৃত। এসব লোমের সংস্পর্শে কোনো শিকার আসা মাত্রই পাতার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে শিকার মারা পড়ে। শিকারের বিগলিত দেহ হজম করে নেয় গাছ। হজম হওয়া শেষ হলে আবার নতুন শিকারের জন্য পাতার মুখ উন্মুক্ত হয়।
ড্রসেরা (Drosera)
ড্রসেরার ফাঁদ-ব্যবস্থা খুবই চমৎকার। ড্রসেরা দেখতে এতই সুন্দর যে, মনেই হবে না পতঙ্গদের জন্য একটা ফাঁদ।
এর পাতায় রয়েছে কাঠির মতো দেখতে এক ধরনের অঙ্গ। কাঠির মাথায় এনজাইম জমে থাকে, যা হজম করতে সহায়তা করে। এনজাইম দেখে মনে হবে শিশির বিন্দু লেগে আছে। শিশির বিন্দুর মতো রোদে চকচক করে। পোকামাকড় আকৃষ্ট হয়ে নির্ভয়ে এগিয়ে আসে। আর আটকে যায় পাতায় থাকা আঠালো গ্রন্থিতে। তখন শিশির বিন্দুর মতো দেখতে এনজাইম পোকামাকড়ের দেহ হজম করে নেয়।
পিঙ্গুইকুলা (Pinguicula)
এরা বাটারওয়ার্ট নামেও পরিচিত। পাতাগুলো বেশ বড় হয়। এদের পাতা থেকে আঠালো মিউসিলেজ নিঃসরিত হয়, যা শিকার আটকাতে সাহায্য করে।
বেশিরভাগ পিঙ্গিকুলাতে এক ধরনের দুর্গন্ধ রয়েছে। এই দুর্গন্ধই শিকারকে আকর্ষণ করে থাকে। যখনই কোনো পোকামাকড় পাতায় বসে, সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি করে মিউসিলেজ ক্ষরণ করে পোকাটিকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। এরপর একগাদা হজমকারী এনজাইম ক্ষরণ করে। ধীরে ধীরে পোকাটির দেহকে ভেঙে শোষণ করতে সাহায্য করে এনজাইম।
সারাসিনিয়া (Sarracenia)
সারাসিনিয়ার আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো- এদের নলাকৃতি পাতা ও পাতার মাথায় ছাতার মতো গঠন। এসব গাছ ঘ্রাণ, রস ও বর্ণ দ্বারা কীটপতঙ্গকে মুগ্ধ করে। পোকামাকড় পাতায় এসে বসার পরে পিচ্ছিল দেহ আর সূক্ষ্ম লোমের কারণে আর উড়ে যেতে পারে না।
নলাকার পাতার ভেতরে হজমকারী এনজাইম-সমৃদ্ধ তরল থাকে। এই তরলে দ্রবীভূত হয়ে শিকার ধীরে ধীরে হজম হয়ে যায়। তাছাড়া কীটপতঙ্গের ওপর এই তরলের নেশা সৃষ্টিকারী ও অবশ করার ক্ষমতা রয়েছে। সারাসিনিয়া উত্তর ও পূর্ব আমেরিকায় পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস।