বই আলোচনা
মিলারের উক্তি, “একটি শিশুর আত্মা ঠিক একটি শিশুর মতো, দৌড়ে তা ধরা যায় না।”
Published : 17 Nov 2024, 03:01 PM
গল্পটি ছোট্ট এক মেয়েকে কেন্দ্র করে, যার নাম জেইন। জেইনের আছে নরম, উষ্ণ আর আরামদায়ক এক গোলাপি কম্বল। এর সঙ্গেই যেন তার অটুট সম্পর্ক। জেইন এটাকে বলে ‘বাটা’, কারণ সে ‘ব্ল্যাংকেট’ উচ্চারণ করতে পারে না।
জেইন ও তার বাটা সবসময় একসঙ্গে থাকে। প্রতি রাতে সে এটি জড়িয়ে শান্তি ও উম পায়। ছোট্ট জেইনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এই কম্বলের উপস্থিত। মেঝেতে টেনে নিয়ে যাওয়া, ঘুমানোর আগে শক্ত করে জড়িয়ে ধরা এবং গালে ঘষে আরাম পায় সে।
আর এভাবেই জেইন বড় হতে থাকে। হঠাৎ একদিন রাতে সে আবিষ্কার করে, তার প্রিয় বাটা নেই। সে তার মায়ের কাছে যায় এবং জানতে চায় এটি কোথায়।
মা কম্বল খুঁজে বের করে দেন এবং বলেন যে, জেইন বড় হয়ে উঠছে আর তার কম্বলটি ছোট হয়ে গেছে। মা দেখান যে, প্রিয় বাটা ছেঁড়া, জীর্ণ এবং ছিদ্রে ভরা। চারপাশে সুতোগুলোও বেরিয়ে গেছে। মা তাকে বলেন যে, সে এখন বড় হয়েছে এবং এটি ফেলে দেওয়া উচিত।
কিন্তু জেইন এতে রাজি হয় না। সে তার ঘরে ফিরে আসে এবং আবারও তার কম্বলটি দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে। সে বুঝতে পারে যে, এটি ধরে রাখার ইচ্ছা থাকলেও সময় এসেছে এটি ছেড়ে দেওয়ার। জেইন ও বাটার সম্পর্ক যেন বদলে যেতে থাকে, কারণ জেইন শিশু থেকে কিশোরীতে পরিণত হয়েছে।
একদিন ভালোবেসে জেইন কম্বলটিকে তার জানালার ধারে রেখে দেয়, ভাবতে থাকে যে পরের দিন সে কী করবে।
সকালে জেগে উঠে জেইন দেখে, একটি নীল পাখি তার কম্বল থেকে সুতোগুলো তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পাখিটি এই সুতোগুলি দিয়ে কী করছে? তার বাবা-মা তাকে জানায়, কম্বলটি এখন পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই মা পাখিটি তার বাচ্চাদের জন্য উষ্ণ ও নিরাপদ বাসা বানাতে ব্যবহার করছে।
এটা শুনে জেইন খুব খুশি হয়। সে বুঝতে পারে, তার বাটা সবসময় তারই থাকবে। বাটার উমে থাকা পাখির ছানাগুলোর কথা ভেবে আনন্দ পায় সে।
শিশুদের জন্য মার্কিন নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক আর্থার মিলারের (১৯১৫ – ২০০৫) লেখা একমাত্র বই “জেইন’স ব্ল্যাংকেট”। বইটির অলঙ্করণ করেছে বিখ্যাত শিল্পী আল পার্কার। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে, সে বছরই জন্ম নেয় মিলারের দ্বিতীয় মেয়ে রেবেকা। তবে মিলার বইটি উৎসর্গ করেছিলেন তার প্রথম মেয়ে জেইনকে, তখন তার বয়স প্রায় ২০ বছর।
মনে করা হয়, এই গল্পে থাকা কম্বলটি আসলে জেইনের জীবনে তার বাবার ভূমিকার প্রতীক এবং কীভাবে সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বাবার গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে, সেটি বোঝানো হয়েছে। শিশুদের নিয়ে মিলারের একটি উক্তি, “একটি শিশুর আত্মা ঠিক একটি শিশুর মতো, দৌড়ে তা ধরা যায় না; ভালোবাসার জন্য স্থির থাকতে হবে, তখন এটি নিজে থেকেই ফিরে আসবে।”
আর্থার মিলার ছিলেন বিশ শতকের আমেরিকান নাট্যজগতের অন্যতম ব্যক্তি, একজন প্রভাবশালী নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তার বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘অল মাই সন্স’, ‘ডেথ অফ অ্যা সেলসম্যান’, ‘দ্য ক্রুসিবল’ এবং ‘অ্যা ভিউ ফ্রম দ্য ব্রিজ’ ইত্যাদি।