দুই ভাইয়ের ভাগ্য জয়ের কাহিনি।
Published : 15 Jan 2025, 03:29 PM
হঠাৎ আকাশ থেকে নেমে এলো ভাগ্যের দেবতা। ধবধবে সাদা তার চুল-দাড়ি। মুখের চামড়া ভাঁজ খাওয়া। কারমার পরিশ্রম আর চেষ্টা দেখে তিনি মুচকি হাসেন।
দেবতাকে দেখে কারমাও বুঝে যায় সব। বিনীতভাবে নিজের ভুলের কথা অকপটে স্বীকার করে ক্ষমা চায়। ভাগ্য দেবতা তখন খুশি হয়। কারমাকে হাত তুলে আশীর্বাদ করে। তারপর আকাশের শূন্যতায় মিলিয়ে যায়।
কী ভুল করেছিল কারমা? তার ভাগ্যে কী ঘটলো, সেটা জানতে তো অবশ্যই এই বইটি পড়তে হবে। ‘মুন্ডা’ ও ‘কড়া’ আদিবাসীদের লোককথা অবলম্বনে লেখা ‘ভাগ্য জয় করল তারা’ বইয়ের নামটা দেখেই একটু কৌতূহল কাজ করলো।
ভাগ্যকে তাহলে কীভাবে জয় করলো তারা? জানতে হলে ৪০ পৃষ্ঠার এ বইটি ছোট-বড় সবারই পড়া উচিত। বইটি মূলত ৮ এবং তার ওপরের বয়সের শিশুদের উদ্দেশ্যে লেখা।
কিন্তু একজন অভিভাবক হিসেবে পড়ে মনে হয়েছে এতো সহজ-সাবলীল ভাষায় লেখা বইটি যেকোন বয়সী শিশুর মনকে উদীপ্ত করতে সক্ষম।
শিশুরা কল্পনাপ্রবণ। তাদের মনের ভেতর একটি কল্পিত রূপকথার রাজ্য থাকে। সেই রাজ্য থেকেই মূলত স্বপ্ন দেখার সূচনা হয়। শৈশবের শুরুটায় শিশুদের মন যেভাবে তৈরি হয়, বাকি দিনগুলোও ওই শিক্ষা, রুচিবোধ ও মানবিকতায় তার জীবন কেটে যায়।
এক্ষেত্রে শিক্ষাক্রমের বইয়ের চেয়ে গল্পের বই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ বইটিতে লেখক সেইসব বিষয়কে মাথায় রেখে আদিবাসী লোককথাকে গল্পে রূপ দিয়েছেন।
বড়দের জন্য গল্পের বই লেখার চেয়ে শিশুদের জন্য লেখাটা কষ্টকর বলে মনে করি। কারণ তাতে করে বড় লেখককে ছোট্ট শিশুর মনের ভেতর প্রবেশ করতে হয়।
লেখক ও গবেষক সালেক খোকন সেটা ভালোভাবে করতে পেরেছেন। বড় মানুষেরা যারা শিশুদের জন্য বই লিখে শিশুমনকে বোঝাতে চান, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা না থাকলে লেখাটা পাঠককে জয় করতে পারে না। লেখক এদিক থেকে সফল।
বইটি হাতে পেয়েই সর্বপ্রথম আমার দুই মেয়ে প্রিয়ন্তী ও প্রমিতীকে পড়তে দিই। কারণ আসল পাঠক তো তারাই। তাদের ভাষ্য ছিল, “বইটির সুন্দর চিত্রগুলো দেখে পড়তে পড়তেই আমরা বুঝে ফেলেছি গল্পটা।” তারা এটাও বুঝেছে, ভাগ্য আমাদের নিজেদের পরিশ্রম আর চেষ্টা দিয়েই জয় করা সম্ভব। আর এখানেই লেখকের এই সৃষ্টির সার্থকতা।
সুন্দর প্রচ্ছদ ও চমৎকার চিত্রের মাধ্যমে শিশুদের কল্পনার জগতকে আরও কল্পনাপ্রবণ করে তুলতে বইটার জুড়ি নেই।
ভাগ্য কখনো অলসদের সাহায্য করে না, বরং পরিশ্রমী এবং নিজের লক্ষ্যের দিকে উৎসাহী মানুষের প্রতিই ভাগ্য সদয় থাকে। আমাদের অনেকের জীবনেই এমন অনেক সময় আসে যখন দুর্ভাগ্য আমাদের পিছু ছাড়ে না। একের পর এক ব্যর্থতায় যখন আমরা ক্লান্ত, তখন যদি হতাশ না হয়ে বরং স্বপ্নের পথে অবিচল থেকে পরিশ্রম ও ধৈর্য দিয়ে কর্মভাগ্যকে পুনরায় সচল করি, তবেই জীবনটা বদলে যাবে। তখনই ভাগ্যটাকে জয় করে নিতে পারবো। এই গল্পটিও তেমন, দুই ভাইয়ের ভাগ্য জয়ের কাহিনি।
লেখকের কাছে প্রত্যাশা, এমন আরও বই আমরা চাই শিশুদের জন্য, যেখানে তাদের জন্য শিক্ষণীয় কোন বার্তা থাকে। ‘শৈশবপ্রকাশ’ থেকে প্রকাশিত ‘ভাগ্য জয় করল তারা’ বইটির অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ করেছেন মিল্টন সরকার।
বইটির মুদ্রিত মূল্য ২০০ টাকা। বইটি পেতে ‘কথাপ্রকাশ’-এর অনলাইনে অর্ডার করা যাবে। আসছে বইমেলায়ও বইটি থাকবে শৈশবপ্রকাশের স্টলে।
সালেক খোকন যেমন আদিবাসী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গল্প লিখেছেন, বড়োদের জন্যও এ বিষয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। তার গবেষণাগ্রন্থগুলো বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছে। ছোটোদের জন্য লেখা তার আরও কিছু বই হলো- ‘পাখির গল্প ও বাঘিনীর বিয়ে’, ‘অপারেশন কিলোফ্লাইট’, ‘চন্দ্র কেন কম আলো দেয় সূর্য কেন বেশি’ এবং ‘নদী মা আর চন্দন পাহাড়ে’।