একটু আগে এপ্রিলের হালকা বৃষ্টি হয়েছে। কার্নিসে বসা টোনাদের পালকে শিশিরের মতো লেগে আছে জলরেণু।
Published : 05 Dec 2023, 02:12 PM
এক ছিল টোনা আর এক ছিল টুনি।
ওরা ছিল ইংল্যান্ডের প্রাচীন শহর লিভারপুলে। আর থাকত সে শহরের সবচেয়ে পুরনো গ্রানাইট পাথরে তৈরি চার্চের পেছনে এক গহনা-চেরিগাছের উপর।
সে বছর বিলেতে তখন ইস্টার হলিডে। সুপার মার্কেটগুলো সাদা ক্রস দেওয়া বনরুটিতে ভরে গেছে। বাইরে শীত। সেদিন চার্চের ভেতর ইস্টারের বিশেষ প্রার্থনার দিন। ভারি ও লম্বা লম্বা কোট পরে সবাই সেইসব নরম খয়েরি বনরুটি হালকা গরম করে তার পেট ফালি করে মাখন ভরে খাচ্ছে। সঙ্গে চা বা কফি।
একটু আগে এপ্রিলের হালকা বৃষ্টি হয়েছে। কার্নিসে বসে কখন থেকে এসব দেখছে ওরা। টোনাদের পালকে শিশিরের মতো লেগে আছে জলরেণু। পাতা সবুজ আর স্ট্রবেরি লালরঙ স্টেইনড গ্লাস দিয়ে ভেতরটা ভালভাবে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সেখান থেকেই অসাধারণ এক সুগন্ধ সুড়সুড় করে বেরিয়ে তাদের নাকে এসে লাগলো।
আর অমনি পিঠাপাগল টোনা তার ছোট্ট বাদামি ডানাজোড়া কাত করে মিনমিন করে বললো, ‘যাই বল টুনি, এসব ব্রেডের সঙ্গে বাংলাদেশের পিঠার তুলনাই হয় না।’ টুনি বুঝে গেল এক্ষুণি সে বলে ওঠবে, ‘টুনি পিঠা তৈরি করো।’
কিন্তু এ পিঠাপাগলকে কে বোঝাবে যে তাহলে লন্ডন বা বার্মিংহাম যেতে হবে! টুনির দিকে তাকিয়েই তার মনের কথা টের পেয়ে গেল টোনা। হেসে বললো, ‘বাংলাদেশি এলাকা ছাড়া কী করে কাঠ, বিরুন চালের গুঁড়ো, গুড় ও নারকেল এসব পাওয়া যাবে?’
‘তাইতো!’ বললো দ্বিধাগ্রস্ত টুনি।
‘আরে পাগলি-পাখি, এই বিলেতে দেড় হাজার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট আর তার সদাই পাতি সবজায়গায় পাওয়া যায়। কদিন আগে ঠোঁটে করে যে কমলারঙের ডালবীজ নিয়ে এলাম সেতো এখানের সৈকত গ্রোসারি থেকেই!’
‘আগুন পাবো কোথায়?’ বলে টুনি পা খুটল।
টোনাটুনি দুই উড়ালেই শপিং শেষ করে এসে দ্রুত পিঠা তৈরি করে ফেললো। তারপর ডানা ঝেড়ে বললো, ‘ফাদার ফ্রেড, ইটস ইয়োর টার্ন নাউ।’
এদিকে চার্চ-কিচেনে বনরুটিগুলো মাইক্রোওভেনে গরম দিচ্ছিলেন ফাদার ফ্রেড। এসব শুনে তার জিভে জল এসে গেল। তিনি হুট করে জানালা খুলে গলা বাড়িয়ে বলেন, ‘ওভার হিয়ার মাই ডিয়ার!’
টোনাটুনি তো হতভম্ব। তা দেখে তিনি আমতা আমতা করে বললেন, ‘ইন ফ্যাক্ট বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টস চেইঞ্জড আওয়ার টেইস্ট।’
তারপর আর কি কিছু বলার থাকে? টোনাটুনি দুই উড়ালেই শপিং শেষ করে এসে দ্রুত পিঠা তৈরি করে ফেললো। তারপর ডানা ঝেড়ে বললো, ‘ফাদার ফ্রেড, ইটস ইয়োর টার্ন নাউ।’
টোনারা তো কাঠের চুলো ছাড়া জীবনে রাঁধেইনি। কিন্তু ফাদারও জানেন না কত তাপে এ পিঠা হবে।
কিই-ই-ই-ই... পিঠা পোড়া গন্ধে চিৎকার করে ওঠলো টুনি, ‘স্টপ ইট... স্টপ মেশিন নাউ।’
গায়ের গাউন সামলে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ফাদার বন্ধ করলেন মাইক্রোওয়েভ। ওভেনের দরোজা খোলা মাত্র তার সুগন্ধ ছুটে চললো সামনের প্রার্থনাহলের দিকে। মিষ্টি গন্ধে তর সইলো না টোনার। ডানা দিয়ে বাতাস করে করে বেছে বেছে কম পোড়াগুলো টপাটপ গিলতে লাগলো, ‘ফাদার ট্রাই দিস, ট্রাই দ্যাট...’’।
ফাদারও হু হা করে পোড়া কাঁচা সব খেতে থাকলেন। ততক্ষণে প্রার্থনাহল ভেঙে তাদের পেছনে বিরাট কিউ লেগে গেছে।
খাওয়া শেষে ওরা চেরিগাছে ফিরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই শোনে দূর থেকেই ফাদার চেঁচিয়ে ওঠেছেন, ‘ইউ মাস্ট মেইক পিঠা ইন দ্য ক্রিসমাস এগেইন।’
‘শিউর’, বলে টোনা। তারপর টুনিকে বলে, ‘কী বোঝলা?’
‘বুঝলাম টিক্কা মাসালার কারির পর বাংলাদেশি পিঠা এসে গেল।’
আনন্দে আরেক ডালে উড়ে গিয়ে বসে টোনা বলে, ‘হাউ নাইস!’