Published : 29 Apr 2025, 09:36 PM
ছোটবেলায় আমার নৃত্য শিক্ষক সুস্মিতা চাকমার একটা কথা আমি কখনও ভুলতে পারি না। তিনি বলেছিলেন, ‘নাচ হল আত্মার মুক্তি’।
ম্যাম আমাকে এতই স্নেহ করতেন যে, তিনি কখনো আমার নাম ধরে ডাকেননি। সবসময় ডেকেছেন ‘মা’ বলে। আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে ম্যামের নৃত্য জীবনের কথা সবাইকে জানাতে চাই।
আমার নাচের হাতেখড়ি তার কাছেই। তিনি হাতের মুদ্রা থেকে পায়ের তাল সবকিছুই খুব ধৈর্য নিয়ে আমাকে শিখিয়েছেন।
ম্যাম ১৯৯৩ সালে নাচ শেখা শুরু করেন। তার প্রথম নাচের শিক্ষক ছিলেন রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক হুমায়ুন কবির। তার কাছ থেকে তিনি শাস্ত্রীয়, লোক ও সাধারণ নৃত্য শেখেন।
সুস্মিতা ম্যাম আদিবাসী নৃত্য শিখেছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট থেকে। তিনি এই ইনস্টিটিউটের শাস্ত্রীয় নৃত্যের ডিপ্লোমা কোর্সের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে কত্থক নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেন।
নৃত্য শিল্পে ম্যামের পথচলা খুব মসৃণ ছিল না। পরিবার থেকে তিনি খুব একটা সহযোগিতা পাননি। তবে তার বড় বোন সবসময় পাশে ছিলেন।
ম্যামের পেশাজীবন শুরু হয় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট লাইব্রেরিতে (সিডিএল) নৃত্য প্রশিক্ষক হিসেবে। তিনি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেও সাংস্কৃতিক শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন।
ম্যাম ২০০৭ সালে ঢাকায় আমেরিকার দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে কোরিওগ্রাফির দায়িত্ব পান। যা তাকে আরও দূরে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এছাড়াও দেশের প্রথম আদিবাসী মেলাতে তিনি চাকমা নৃত্যের কোরিওগ্রাফি করেন।
বিয়ের পর তিনি রাঙ্গামাটি ছেড়ে খাগড়াছড়িতে চলে যান। সেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে নাচ শেখানো শুরু করেন। রাঙামাটির মত পরিবেশ খাগড়াছড়িতে না থাকায় তাকে অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। সহযোগিতাপূর্ণ
একটি পরিবেশের অভাবের মাঝেই তাকে নৃত্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি।
নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে ম্যামের এই লড়াই আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দেয়। তার কাছেই আমি শিখেছি নাচকে কেন এবং কীভাবে ভালোবাসতে হয়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: খাগড়াছড়ি।