এটি যদি স্বাভাবিকভাবে না ঘটে, তবে মারাত্মক রোগের আশঙ্কা থাকতে পারে।
Published : 19 Feb 2025, 07:39 PM
আমার বয়স তখন প্রায় ১০ বছর। একদিন স্কুল চলাকালীন মাঠে খেলার সময় হঠাৎ চোখ পড়ল এক বড় আপুর দিকে, সবাই তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। পাশের কিছু ছেলেও হাসাহাসি করছিল।
তারপর আরেক আপু তাকে নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলেন। কৌতূহলী হয়ে আমি তাদের পিছনে ছুটলাম। গিয়ে দেখি ওই আপুটা খুব কাঁদছে।
তার জামার বেশ কিছু অংশে রক্ত লেগে আছে। কিছুক্ষণ পর এক শিক্ষক আপা এসে আপুটিকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। আমি সেদিন কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।
বাড়ি ফেরার পর আমি ভাই ও বাবার সামনে পুরো ঘটনাটা মাকে বললাম। একে একে প্রশ্ন করলাম, "আপুটির কী হয়েছিল? কেন সে কাঁদছিল?" বাবা চুপ করে উঠে গেলেন এবং মা রান্নাঘরে চলে গেলেন। কেউই আমাকে এই বিষয়ে কিছু বলেননি।
এর আগে টেলিভিশনে প্রচারিত বিজ্ঞাপন দেখেও ভাইয়ের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি।
তবে সেদিন বাবা-মা উত্তর না দেওয়াতে কৌতূহল মেটাতে চাচাত বোনকে জিজ্ঞেস করলাম। আপুর জবাব ছিল, "বড় হলে বলব। এখন তুমি ছোট, তাই বলব না।"
ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল আমার। রং মাখানো জামা-কাপড় নিয়ে খেলতে যাওয়াটা ছিল আমার অভ্যাস। একদিন ছবি আঁকতে গিয়ে সাদা পোশাকে লাল রং লাগল, যা অনেকটা রক্তের মত ছিল।
সেদিন প্রথমবার লক্ষ্য করলাম, সবাই আমাকে দেখে হাসছে। তখন আমার বয়স ছিল ১৩ বছর। এবারেও আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না।
প্রতিবেশী এক বড় আপু আমাকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, "কাপড় বদলে এসো।" কৌতূহলী হয়ে আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, "কেন? রং মাখানো জামা নিয়ে আমি তো অনেকবার খেলেছি।"
কোনো উত্তর না পেয়ে বাসায় গিয়ে কাপড় বদলে ফেললাম। এবারও মায়ের কাছে কোনো উত্তর পাইনি। ফলে আমার বড় বোনকে ফোন দিলাম। আপু শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোনেই আমাকে সবকিছু খুলে বলার পর, সেদিন আমি প্রথমবারের মত পিরিয়ড সম্পর্কে জানতে পারি। যাকে বাংলায় মাসিক বা ঋতুস্রাব বলা হয়।
আমি বুঝতে পারি, মাসিক হল মেয়েদের জীবনে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা ও এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এছাড়া এটি নারীদের শারীরিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং সন্তান গর্ভধারণের প্রাথমিক ধাপও। প্রতিটি মেয়ে জীবনের এক পর্যায়ে এই পরিবর্তনটি অনুভব করে।
এটি যদি স্বাভাবিকভাবে না ঘটে, তবে মারাত্মক রোগের আশঙ্কা থাকতে পারে। যদিও এটি এক সাধারণ ঘটনা, সমাজে অনেকেই এটিকে অস্বাভাবিকভাবে দেখে। কেউ কেউ তো রোগও বলে থাকে!
ফলে আমি মনে করি, আমাদের সমাজে ছেলেদেরও বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত, যাতে তারা এই বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি বা অস্বস্তি না বোধ করে।
এছাড়া, এটি লজ্জার কোনো বিষয় নয়। আমাদের বরং নিজের এবং অন্যের জন্য সচেতন হওয়া প্রয়োজন, যাতে মাসিক বিষয়টি সমাজে সবার জন্য স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হতে পারে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।