মিরপুরে একটি শিশু মারা গেল, কাল হয়ত আরেকজনের সঙ্গে এমনটা ঘটবে।
Published : 17 Apr 2025, 10:21 PM
পহেলা বৈশাখের পরদিন রাজধানীর মিরপুরে শিশু হত্যার একটি ঘটনা আমাকে বেশ নাড়া দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে একা পেয়ে মজার ছলে হত্যা করা হয়েছে।
পত্রিকার খবর থেকে জানতে পারি, মিরপুর ১১ নম্বরের বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি মোটর গ্যারেজে আবু বক্কর সিদ্দিক নামের ওই শিশুটির পায়ুপথে বাতাস প্রবেশ করানোর পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় কয়েক জন অভিযুক্তকে আটকও করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ বছর বয়সী একজন শিশুও আছে।
এর আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে যথাক্রমে খুলনা ও নারায়ণগঞ্জে দুই কিশোরের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
ঢাকার এই খবরটি দেখার পর আমি শুধু ভাবছিলাম, আমাদের শিশুমনে কোমলতার বদলে কেন নিষ্ঠুরতা জায়গা করে নিয়েছে? অন্যকে আঘাত করে মজা পাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে কীভাবে এলো?
আমার প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, শিশুদের দোষ কোথায়? দোষ তো বড়দের। শিশুরা সেটাই করবে যেটা সে দেখেছে অথবা তাকে শেখানো হয়নি।
এই যে অন্যকে আঘাত করে মজা পাওয়ার ব্যাপারটা, এটা শুরু হয় পশু-পাখিকে দিয়ে। আমরা অনেকেই শুধু শুধুই কুকুর-বিড়ালকে ঢিল ছুড়ে মারি। আর এতেই অনেক মজা পাই। এটাও যে আরেকটা প্রাণ সেই শিক্ষাটা আমাদের দেওয়া হয় না।
আমাদের সমাজে হাঁস-মুরগি উল্টা করে নিয়ে হেঁটে-হেঁটে বিক্রি করাও পরিচিত দৃশ্য। তাছাড়া যে পাখি বনে জন্ম নেয়, বনেই থাকে, তাকে আমরা খাঁচায় আটকে রাখতে চাই। এছাড়াও কাঁঠবিড়ালিকে ফাঁদ পেতে ধরে চুবিয়ে মেরে ফেলতেও দেখেছি। এই ধরনের নিষ্ঠুর কাজ আমরা অবলীলায় করে ফেলি।
আমি একদিন বাবার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। তখন দেখি কয়েকজন শিশু ফুটপাতের পাশে বসে থাকা একটি কুকুরকে একের পর এক পাথর মারছে। কুকুরটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সে অসুস্থ। তাই সে দ্রুত পালাতেও পারছিল না।
আমিও তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তাই শিশুদের নিষেধ করলাম ঢিল ছুড়তে। এটা দেখে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের অভিভাবক হেসে হেসে বলছিলেন, এই আর ঢিল দিও না। আমরা বলার আগে তারা তাদের সন্তানদের একবার বারণও করেননি। বিনা কারণে এভাবে কুকুর-বিড়ালকে ঢিল মারা তাদের কাছে অন্যায় মনে হয় না। ছোটরা এসবই দেখে দেখে শিখছে, নিষ্ঠুরতা তাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
মিরপুরে একটি শিশু মারা গেল, কাল হয়ত আরেকজনের সঙ্গে এমনটা ঘটবে। এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না। প্রাণের প্রতি মায়া না থাকলে মানবতা চিরতরে হারিয়ে যায়। এই ধরনের অমানবিকতা বন্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে।
শৈশব থেকে যখন একজন শিশু অন্য একটি প্রাণের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারবে তখন তাকে দিয়ে অন্যের ক্ষতি করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। প্রাণের প্রতি আচরণ কেমন হওয়া উচিত সেটা আমাদের শেখানোর দায়িত্ব পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: ঢাকা।