স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে, যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২৮৮ কোটি টাকা।
Published : 01 Aug 2023, 11:57 PM
জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলা মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার।
এর আওতায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের বাহক মশা শনাক্ত করতে ঢাকা মশা নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে একটি সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ইউনিট (ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানজমেন্ট ইউনিট) এবং একটি কেন্দ্রীয় জৈবিক (পতঙ্গবিজ্ঞান) ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে।
পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি ঢাকার পাশের সাভার ও তারাবো পৌরসভায় বাস্তবায়ন করা হবে নানা উদ্যোগ।
সেজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি) একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে, যাতে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
'ইমপ্রুভমেট অব আরবান পাবলিক হেলথ প্রিভেনটিভস সার্ভিসেস প্রজেক্ট' শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এলজিডি। খসড়া প্রস্তাবে মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগ) ডা. মো. সারোয়ার বারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি সিটি কর্পোরেশন ও দুটি পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।”
তিনি বলেন, প্রকল্পটি মূলত দুটি ভাগে বাস্তবায়ন হবে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের একটি অংশ বাস্তবায়ন করবে এলজিডি। প্রকল্পের এই অংশটির মাধ্যমে মশক নিধনের সকল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আরেকটি অংশ বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ অংশের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, “এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য আমরা বিশ্ব ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব করেছি এবং তারা রাজিও হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। বাকি প্রায় ২১৫ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।”
আগামী সেপ্টম্বর মাসের শুরুতে বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড সভায় প্রকল্পটির অর্থায়ন অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। তার আগেই পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকঠামো বিভাগ প্রকল্পটির হিসাব যাচাই করে প্রাক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার সম্মতি নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
মশাবাহিত এই রোগে চলতি বছর ৫৪ হাজারের বেশি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃত্য হয়েছে ২৬১ জনের।
যা যা হবে
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ঢাকা মশা নিয়ন্ত্রণ অফিসে সমন্বিত একটি মশা ব্যবস্থাপনা ইউনিট (আইভিএমইউ) করা হবে।
পাশাপাশি এইডিস মশা শনাক্ত করার জন্য আইভিএমইউ এর অধীনে একটি কেন্দ্রীয় জৈবিক (কীটতত্ত্ব) ল্যাব স্থাপন করা হবে। ডেঙ্গুর ভাইরাস সনাক্ত করার জন্য বায়োলজিক্যাল ল্যাবে আরটি-পিসিআর থাকবে।
ডেঙ্গু শনাক্ত করার জন্য ভেক্টর (মশা), বিশেষ করে এইডিস ইজিপ্টাই চিহ্নিত করতে আরেকটি ল্যাব স্থাপন করা হবে। এসব ল্যাবের সঙ্গে সংযোগ রেখে একটি তৈরি করা হবে একটি পূর্বাভাস মডেল এবং একটি প্রাথমিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থা।
একইসঙ্গে ভেক্টর (মশা) ও রোগ (ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া) প্রতিরোধে গবেষণা করা হবে।তাতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ হ্রাস বা বিস্তার রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া যাবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, আবহাওয়া বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এলজিডি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়ার একটি মডেল তৈরি এবং কার্যকর করবে। এছাড়া আইভিএমইউ এর অধীনে বছরব্যাপী মশক-জরিপ পরিচালনা করা হবে।
এলজিডি কর্মকর্তা সারোয়ার বারী বলেন, “নিয়মিত জরিপের মাধ্যমে কোন এলাকায় মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির ঝুঁকি কতটা, সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি নেবে।”
তিনি জানান, বিভিন্ন রোগের বাহক মশার ব্যবস্থাপনা করতে একটি পতাঙ্গাগার বা ইনসেক্টেরিয়াম নির্মাণ করা হবে। কার্যকরভাবে মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ইউনিটের মাধ্যমে লার্ভিসাইড, অ্যাডাল্টিসাইড ছিটানো হবে।
এছাড়া প্রকল্পটির মাধ্যমে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরি করা হবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) বা চুক্তির ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে উন্মুক্ত ময়দান, খেলার মাঠ, পার্ক, ফুটপাতকে হাঁটাচলা, ব্যায়াম ও বিনোদনের স্থান হিসেবে রূপান্তের ক্ষেত্রে সহায়তা দেবে এই প্রকল্প।
খাদ্যের নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিতে ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিসহ গড়ে তোলা হবে জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগার।
এছাড়া, বায়ু ও শব্দ দূষণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিরসনেও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকবে। মানব শরীরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কেও সামাজিক প্রচারণা চালানো হবে।