কোভিড মহামারী শুরুর আগে এমআরএনএ প্রযুক্তি ছিল পরীক্ষামূলক পর্যায়ে।
Published : 21 Oct 2023, 07:19 PM
যাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে কোভিডের বিরুদ্ধে এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির পথ সুগম হয়েছিল, সেই দুই গবেষক পেলেন চিকিৎসায় এবারের নোবেল।
সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট সোমবার এবারের বিজয়ী হিসেবে হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বায়োকেমিস্ট কাতালিন কারিকো এবং মার্কিন চিকিৎসক ড্রিউ ওয়াইসম্যানের নাম ঘোষণা করে। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার ভাগ করে নেবেন তারা।
কোভিড মহামারী শুরুর আগে এমআরএনএ প্রযুক্তি ছিল পরীক্ষামূলক পর্যায়ে। আর এখন বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষকে এমআরএনএ টিকা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি ক্যান্সারের মত রোগের চিকিৎসায় একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
নোবেল কমিটি বলেছে: আধুনিক সময়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি যখন তৈরি হল, তখনই অভূতপূর্ব গতিতে টিকা তৈরির ক্ষেত্রে এই দুই বিজ্ঞানীর কাজ অসামান্য অবদান রেখেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, কারিকো ও ওয়াইজম্যান দুজনকেই সকালে ফোন করে নোবেল জয়ের খবর জানানো হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দুজনেই বলেন, তারা ‘অভিভূত’।
কোনো রোগের টিকা ওই রোগের ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তোলে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে সেটি শনাক্ত করার পাশাপাশি লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করে তোলে।
আগে যত ধরনের টিকা তৈরি হয়েছে, তার সবই তৈরি হয়েছে মূল ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ামের মৃত বা দুর্বল সংস্করণ ব্যবহার করে অথবা ভাইরাসের খণ্ডিত অংশ ব্যবহার করে। কিন্তু কোভিডের এমআরএনএ টিকা তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। এক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা এমআরএনএ থেকে জেনেটিক প্রতিলিপি নিয়েই তৈরি করা হয়েছে টিকা। ফাইজার ও মডার্নার কোভিড টিকা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তৈরি হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যন্ত দ্রুত টিকা উৎপাদন করা যায়, যা আগে সম্ভব ছিল না।
অধ্যাপক কারিকো এবং অধ্যাপাক ওয়াইজম্যানের মধ্যে পরিচয় হয় ১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে, যখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছিলেন। এমআরএনএ নিয়ে তখন বিজ্ঞানীদের ততটা জানাশোনা ছিল না।
এ দুই বিজ্ঞানী নিউক্লিওসাইড বেইজ পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেন, যা এমআরএনএ প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করে দেয়। ২০০৫ সালে তাদের গবেষণাপত্রটি যখন প্রকাশিত হয়, তখনই বিষয়টি সাড়া ফেলে। তবে তাদের গবেষণার প্রায়োগিক দিকটি বিশেষভাবে নজরে আসে কোভিড মহামারী শুরুর পর। তাদের দেখানো পথে এমআরএনএ টিকা তৈরি সম্ভব হওয়ায় লাখো মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়।
জিন গবেষণার মাধ্যমে মানব বিবর্তনের অজানা অধ্যায়ে আলো ফেলে সুইডিশ বিজ্ঞানী স্ভান্তে প্যাবো গতবছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পান।
চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়েই এবারের নোবেল পর্ব শুরু হল। মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যা, বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য এবং শুক্রবার শান্তিতে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। সবশেষ ৯ অক্টোবর অর্থনীতি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি।
(প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)