সবচেয়ে বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়।
Published : 28 Feb 2024, 08:13 PM
চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অনুমতি না থাকা এবং নানা অনিয়মের অভিযোগে গত দুদিনে সারাদেশের ২২টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এছাড়া আটটি হাসপাতালকে জরিমানা এবং আরও আটটি হাসপাতালকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদেশের ৩৭টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অভিযান চালানো হয়। বুধবার অভিযান চলে ১০টি হাসপাতালে। সবচেয়ে বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. মোহাম্মদ মঈনুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে অভিযানের ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। মঙ্গলবার থেকে অভিযান শুরু হয়।
“বন্ধ করে দেওয়া স্বাস্থকেন্দ্রগুলোর কোনোটির বৈধ কাগজপত্র ছিল না, আবার কাগজপত্র থাকলেও বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া গেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে, কিছু হাসপাতালের পরিবেশ ভালো পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
এদিন ঢাকার মোহাম্মদপুরের লাইফকেয়ার জেনারেল হাসপাতাল; পিপলস হেলথকেয়ার টেকনোলজিস্ট, ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার; কলেজগেট এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের টিজি হাসপাতাল; রেডিয়াম ব্লাড ব্যাংক এবং এএইচএস ডায়ালাইসিস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার; ঢাকা হেলথ কেয়ার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মিরপুরের মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বরের ইশতিয়াক মেডিকেল সেন্টার, রাজধানী ব্লাড ব্যাংক, হেলথ পয়েন্ট, আল হাকিমি চক্ষু হাসপাতাল, কালশীর এ এইচ এস ডায়ালাইসিস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এশিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সাভারের ফুলবাড়িয়া এলাকার আদনান হাসপাতাল ও ডায়ানস্টিক সেন্টার, হেমায়েতপুরের রহমান স্পেশালাইজড হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ডায়াবেটিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের পরিদর্শনে রংপুরের আরকে রোডের মেট্রো হাসপাতাল, ধাপ এলাকার সালমা ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার এবং টেক্সটাইল মোড়ের মেডিকেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম বন্ধ করা হয়।
বুধবার ঢাকায় ১০টি হাসপাতাল পরিদর্শন করে তিনটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলীর ঢাকা ট্রমা সেন্টার, স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং উত্তরায় হাইকেয়ার কার্ডিয়াক ও নিউরো হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে এদিন।
আমাদের নীলফামারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চালানোয় এদিন ডোমারে চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
বন্ধ করে দেওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো হলো- স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ট্রাস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আনছার আলী ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রায়হান বারী। তাকে সহযোগিতা করেন উপজেলা স্যানিটরী কর্মকর্তা মো. আল-আমিন রহমান।
চুয়াডাঙ্গায় বুধবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়েছে বলে আমাদের জেলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় অপরাধে সদর হাসপাতাল সড়কের মদিনা ক্লিনিকের মালিক হুমায়ুন কবিরকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের মালিক আরফিনা খাতুনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চট্টগ্রামেও ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান চালিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই অভিযানে নগরীর মেহেদীবাগ এলাকায় ম্যাক্স হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, ম্যাক্স হাসপাতালের ডায়গিনস্টিক সেন্টারের প্যাডে টেকনোলজিস্টের অগ্রিম স্বাক্ষর দেখা যায়। এছাড়া ল্যাবে মেয়াদোর্ত্তীণ কেমিকেল পাওয়া যায়। ইসিজি করানোর জন্য কার্ডিওগ্রাফারও ছিল না। এসব অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া ন্যাশনাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ইসিজি করানোর জন্য কার্ডিওগ্রাফার পাওয়া যায়নি। তাদের পরিচালিত সিগমা ল্যাবে মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিকেল পাওয়া যায়। এসব অভিযোগে ল্যাবটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হসপিটাল এবং মেডিএইড ডায়গনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে নোংরা পরিবেশ ও অপারেশন থিয়েটার কক্ষ অপরিষ্কার থাকায় মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হসপিটালকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রাজধানীতে দুই মাসের মধ্যে খতনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চলছে। গত ২০ জানুয়ারি রাতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খতনা করতে এসে মারা যায় ১০ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিন আয়হাম।
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার জন্য অজ্ঞান করার পর আর জ্ঞান ফেরেনি শিশু আয়ান আহমেদের। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে সাত দিন লাইফসাপোর্টে রাখার পর ৭ জানুয়ারি তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এই দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে ১০টি নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
লাইসেন্সধারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া ডাক্তারের চেম্বার বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া এবং বিএমডিসির স্বীকৃত অবেদনবিদ ছাড়া যে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করা যে নিষিদ্ধ, সে কথা মনে করিয়ে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে থাকতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেদিন বলেন, “অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। অতীতে কি হয়েছে সেটা… আমি তো বলছি এটা আমি চলমান রাখব।
[প্রতিবেদনটি তৈরি করতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চট্টগ্রাম অফিস এবং চুয়াডাঙ্গা ও নীলফামারী প্রতিনিধি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।]