হবিগঞ্জের এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ‘তদন্তের নির্দেশ’ দিয়েছেন।
Published : 24 Mar 2024, 10:00 PM
বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সাড়ে চার মাস পর ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ও ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ করেছেন এক ব্যক্তি।
রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে লিখিত অভিযোগে হবিগঞ্জের খায়রুল বাশার নামের ওই ব্যক্তি ‘চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অবহেলা ও গাফিলতির’ কারণে তার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
ওই ব্যক্তির ভাই ছাতক উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী আফসার আহমেদ গত ৯ নভেম্বর ধানমন্ডির বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তিনি ডা. স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং ওই দিন এন্ডোস্কপি করাতে এসেছিলেন বলে লিখিত অভিযোগে বলা হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল বলেন, “একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি বিষয়টি তদন্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।”
বক্তব্য জানতে চাইলে ডা. স্বপ্নীল বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
আর ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম এ অভিযোগের পেছনে কিছুদিন আগে একই হাসপাতালে মারা যাওয়া আরেক রোগীর স্বজনদের দুষছেন। তবে আফসার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ডা. শামীম বলেন, “এই কাজগুলো ওই পেশেন্টের (রাহিব রেজা) লোকজন করাচ্ছে। পুরোনো রোগী খুঁজে বের করে। যারা মারা যায় তাদের স্বজনদের ইনসিস্ট করে আমাদের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করার জন্য, যেন তাদের পাল্লাটা ভারী হয়। তাদের ভিত্তিটাকে মজবুত করার জন্য পুরোনো রোগী খুঁজে বের করে। সবাইকে অ্যাপ্রোচ করে, দুয়েকজন হয়তো তাদের কথায় রাজি হয়ে যায়।”
এর আগে এন্ডোস্কপি করাতে এসে রাহিব রেজা নামে এক যুবক ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান। তিনিও ডা. স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে এন্ডোস্কপি করাতে এসেছিলেন।
রাজধানীর একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাহিবের স্বজনরা পরে অভিযোগ করেছিলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এন্ডোস্কপি করার পরপরই অ্যানেস্থিসিয়ার কারণে রাহিবের ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। পরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ তুলে তার পরিবারের তিন সদস্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করেছেন।
এদিকে সাড়ে চার মাস আগের মৃত্যুর ঘটনার এতদিন পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মারা যাওয়া আফসার আহমেদের ছোট ভাই খায়রুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম অভিযোগ করব না। পরে ওই চিকিৎসকের হাতে আরেকজন রোগী মারা গেল। তখন আমাদের মনে হয়েছে আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টিও সামনে আনা উচিত। কারণ এটা না হলে মানুষ জানতে পারবে না ওই চিকিৎসকের সম্পর্কে।
“আমরা মনে করি ওই চিকিৎসকের অব্যবস্থাপনা, অবহেলার বিষয়টি মানুষ জানুক।”
এদিন লিখিত অভিযোগে খায়রুল বাশার তার ভাইয়ের মৃত্যুর দিনের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের কাছে চিকিৎসা নিতে যান তার ভাই। ডা. স্বপ্নীল রোগীকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন সেখানে অ্যান্ডোস্কপি, কোলনস্কপিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চারদিন পর ৯ নভেম্বর এন্ডোস্কপি ও কোলনস্কপির পরীক্ষার সময় দেন। সে অনুযায়ী ৯ নভেম্বর সকাল নয়টায় ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল যান আফসার আহমেদ।
অভিযোগে বলা হয়, এন্ডোস্কপি করার দিন হাসপাতালে যাওয়ার পর তাকে জানানো হয় বিকাল ৪টায় অ্যান্ডোস্কপি করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সকালে শুরু করা হলেও পরীক্ষাটি করা হয় রাত ৮টায়।
“তিনি (ডা. স্বপ্নীল) এসে রোগীর শারীরিক অবস্থার কোনো পর্যবেক্ষণ না করে, কোনো ধরনের প্রি-ইভাল্যুয়েশন ছাড়াই অ্যানেস্থিশিয়া প্রয়োগের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি টেস্ট করানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। টেস্ট করানোর এক পর্যায়ে আমার ভাইকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা আমার ভাইয়ের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। তাই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হচ্ছে। সেদিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগে খায়রুল বাশার লিখেছেন, তার ভাই সুস্থ্য অবস্থায় ওই পরীক্ষাটি করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সময়ের ব্যবধানে লাশ হয়ে ফিরেছেন।
এ ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেন মারা যাওয়া আফসার আহমেদের ভাই।
এদিকে একই হাসপাতালে ফেব্রুয়ারিতে মারা যাওয়া রাহিব রেজার মৃত্যু নিয়ে চলতি মাসে করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই ঘটনার বিশদ অনুসন্ধান করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে স্বাধীন কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেয়।
কমিটিতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রাখতে বলা হয়েছে। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে রুলে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষায়িত বোর্ড গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রাহিব রেজার মৃত্যুতে তার পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেও কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেটিও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।