“বিষয়টি জেনে আমি অবাক হয়েছি,” বললেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য।
Published : 19 Jul 2023, 10:35 PM
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে (এসএসএইচ) কিডনি প্রতিস্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে একটি কমিটি হয়েছে।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা.শারফুদ্দিন আহমেদ বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানান।
সোমবার বিএসএমএমইউর এসএসএইচে পিরোজপুরের এক ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। তার ছোট ভাই সুসেন রায় এই কিডনি দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল বিএসএমএমইউ।
তবে বুধবার সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে, কিডনি দানকারী ব্যক্তি সুসেন রায় নন, সুমিত হাওলাদার নামে অন্য ব্যক্তি।
অভিযোগ ওঠার পর যোগাযোগ করা হলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা.শারফুদ্দিন বলেন, “বিষয়টি জেনে আমি অবাক হয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তারা যত দ্রুত সম্ভব অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেবে। ব্যবস্থা কী হবে, তা আমাদের বিধিতে আছে।”
বিএসএমএমইউর হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক মো. মহছেন চৌধুরীকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক আতিকুল হক, গাইনি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম এবং বিএসএমএমইউর ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দিনকে।
অধ্যাপক ডা. আতিকুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “আমরা বিষয়টি আজ জেনেছি, এখনও তদন্ত কাজ শুরু করিনি।”
বাংলাদেশের মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন অনুয়ায়ী, জীবন রক্ষায় নিকটাত্মীয়ের কিডনিই কেবল নেওয়া যাবে।
আইনে নির্ধারিত নিকটাত্মীয়রা হলেন- মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী ও আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা, নানি, দাদা, দাদি, নাতি, নাতনি এবং আপন চাচাত, মামাত, ফুফাত, খালাত ভাই বা বোন।
এই আইনের ফাঁক গলে ভুয়া নামে সুমিত হাওলাদারের কিডনি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিজেদের কিডনি বেচে তারা এখন কিডনি বেচা-কেনার চক্রে
গত সোমবার বিএসএমএমইউর এসএসএইচে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল ওই ব্যক্তির, যে খবর বিএসএমএমইউ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানিয়েছিল।
তাতে বলা হয়েছিল, কিডনি বিভাগের রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ওই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ১৫ জন চিকিৎসক।
সোমবার অস্ত্রোপচারের পর কিডনিদাতা এবং গ্রহীতা দুজনেই ভালো আছেন বলে জানান অধ্যাপক ডা.হাবিবুর রহমান।
অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংবাদ প্রতিবেদনটি দেখার পর তারা কিডনিদাতা এবং গ্রহীতা দুজনের সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সবকিছু ঠিকই পেয়েছেন।
“আমাদের সাইটে এভরিথিং ইজ ওকে।”
তিনি জানান, কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা এবং গ্রহীতা এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগে দাতার শারীরিক পরীক্ষা করে। সুস্থ হলে দাতার সব আইনি কাগজপত্র, পরিচয় যাচাইয়ে গঠিত বোর্ডে পাঠানো হয়।
তিন সদস্যের ওই বোর্ডে হাসপাতালের একজন পরিচালক, একজন আইনজীবী এবং একজন সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসক থাকেন। তারা সবাই বিএমএমইউর কর্মকর্তা। বোর্ড কাগজপত্র যাচাই করে মহানগর হাকিমের অনুমতি পেলে তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের ছাড়পত্র দেয়।
পরিচয় যাচাইকরণ কমিটির সদস্য সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক হারুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিচয় যাচাইয়ের পুরো বিয়ষটি কোর্টে হয়। সেখানে এফিডেবিট করে আমাদের কাছে পাঠায়। আমরা সেটা সত্যায়িত করে দিই। মূলত কাজগুলো কোর্টে আইনগতভাবেই হয়।”
অধ্যাপক হাবিবুর বলেন, “আমাদের ডিপার্টমেন্টে সার্টিফিকেট আসলে তখন আমরা ওই রোগীকে ভর্তি করি এবং অপারেশনের প্রস্তুতি নিই। আমরা দেখেছি, আমাদের এখানে সবকিছুই ঠিক আছে। বাইরে কী হয়েছে, তা আমরা এখনও পর্যন্ত জানতে পারিনি।”
তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জেনেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে, এখানে আমাদের কেউ জড়িত আছে কি না? নাকি বাইরে থেকেই এটা হয়েছে?
“আমাদের এখান থেকে হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। বাইরের কেউ হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।”