“ব্লেইম কালচার থেকে যতদিন পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত প্রতিবছরই আমাদেরকে ডেঙ্গুর কাছে স্যারেন্ডার করতে হবে।”
Published : 01 Dec 2024, 05:17 PM
এইডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ে বাহাস চললেও তা যে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়নি তা মানছেন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হুমায়ুন কবির তালুকদার।
তিনি বলেছেন, “গেল ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৯০ হাজার ৭৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হল, কোভিডের মত বিশ্ব মহামারী যেখানে কন্ট্রোল করা হয়েছে, কিন্তু আজকে ডেঙ্গুকে আমরা পরাস্ত করতে পারিনি। আমরা বারবার শুধু ডেঙ্গুর কাছেই হেরে যাচ্ছি।”
রোববার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডেঙ্গু নিয়ে দোষারোপ করার স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, “ডেঙ্গুর বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অবস্থা আমাদের থেকে ভয়াবহ অবস্থা ছিল। কলকাতার একজন বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার দেখেছি, তারা কীভাবে ডেঙ্গুকে মোকাবেলা করেছে।
“আসল কথা হচ্ছে আমরা এই ব্লেইম কালচার থেকে যতদিন পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত প্রতিবছরই আমাদেরকে ডেঙ্গুর কাছে স্যারেন্ডার করতে হবে এবং মৃত্যুর সংখ্যা গণনা করতে হবে। আর মানুষের কান্না টেলিভিশনে দেখতে হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর মোট ৪৮৮ জনের প্রাণ কেড়েছে এইডিস মশাবাহিত এ রোগ।
এর মধ্যে এক মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু নিয়ে শেষ হল নভেম্বর; ওই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭৩ জন।
অধ্যাপক হুমায়ুন বলেন, “গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮৮টি জীবন ঝরে গেছে। মৃত্যু মানে হল কোনো সন্তানহারা পিতা বা মাতার কান্না।
“মৃত্যু একটাই হোক বা হাজারটাই হোক- আমি মনে করি, একটা মৃত্যু হলেই সেটা শতভাগ। যার যায়- তারই যায়।”
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, এটাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব না। এটা শুধু সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নয়।
“এটা একটি মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ। এটা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এখনই সময় এসেছে এটাকে নিয়ে ভেবে দেখার। আর এই ভাবনাটা হতে হবে সারা বছরের জন্য। একসময় ছিল শুধু মার্চ এপ্রিলে ডেঙ্গু আসত।
“কিন্তু যেসময় ডেঙ্গু আসার কথা না সেটা এখন আসছে। তাই বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে রাষ্ট্র এবং বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতকে।”
রিঅ্যাক্টিভ পরিকল্পনার পরিবর্তে প্রসপেক্টিভ পরিকল্পনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে দেখি যে, আমরা সবসময় রিঅ্যাক্টিভ প্লানিই করি, আমরা কখনো প্রোসপেক্টিভ প্লানিং করি না।
“আমাদের দেশে এমন লোক প্রয়োজন যারা চিন্তা করতে পারে আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন হবে, আগামী এক বছরে ডেঙ্গুর অবস্থা কেমন হবে, যেখানে কলকাতা পারে সেখানে কেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন পারবে না?"
তিনি বলেন, “রিঅ্যাক্টিভ প্লানিং দিয়ে কখনো সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট করা সম্ভব না। রিঅ্যাক্টিভ পরিকল্পনা দিয়ে কোন সফলতা পাওয়া যায় না, শুধু বাহবা পাওয়া যায়।”
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও গবেষণার তাগিদ দিয়ে অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, “কেন শীতকালে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া হচ্ছে। এখানে অনেক বিষয় আছে- যেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপর বর্তায়।
“সামাজিকভাবে এটা ভেবে দেখার দরকার- কেন আমরা এটা প্রতিরোধ করতে পারছি না। প্রতিটা মেডিকেল কলেজ এবং শিক্ষার্থীদের এটা নিয়ে সচেতন করতে হবে। মোট কথা ডেঙ্গুর বিষয়ে আগাম প্রতিকার করতে হবে।”
আদ-দ্বীন মহিলা মেডিকেল কলেজের শিশু রোগ বিভাগের অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, “শিশুদেরও ডেঙ্গু অনেক হয়। এখন আর ডেঙ্গুর সিজন নাই। সারাবছরই ডেঙ্গু হয়।"
ডেঙ্গু নিয়ে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ সভাপতি অধ্যাপক জাফরউল্লাহ চৌধুরী। সভায় সভাপতি করেন সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান।
অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সহ সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী।