এমআরআই, সিটিস্ক্যান করাতে কেউ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে; কেউ আবার বাড়তি খরচে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাচ্ছেন।
Published : 17 May 2023, 11:01 PM
কম খরচে চিকিৎসা সেবার জন্য সাধারণ মানুষের অন্যতম ভরসার জায়গা যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দেশের অন্যতম বৃহৎ সেই চিকিৎসাকেন্দ্রের দুটি এমআরআই ও একটি সিটিস্ক্যান যন্ত্র বিকল থাকায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
শুধু রাজধানী নয়, বাইরের জেলাগুলো থেকেও প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসেন এখানে। তাদের অনেকের জরুরি পরীক্ষাও করাতে হয়। কিন্তু হাসপাতালের দুটো এমআরআই যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে বিকল। আর দুটো সিটিস্ক্যান যন্ত্রের একটি চারদিন আগে নষ্ট হয়েছে। অন্যটি দিয়ে কাজ চালাতে হিমশিম অবস্থা।
বাধ্য হয়েই রোগীদের নিয়ে স্বজনরা কেউ ছুটছেন পাশের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, কেউ আবার যাচ্ছেন বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে বাড়তি টাকা বের হয়ে যাচ্ছে তাদের পকেট থেকে, সঙ্গে যানজটের শহরে রোগী নিয়ে ছোটাছুটি করে হচ্ছেন গলদঘর্ম।
ভোগান্তির রকমফের
গত মঙ্গলবার হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগে গিয়ে এমআরআই করতে আসা রোগীদের জটলা দেখা যায়। যন্ত্র বিকল থাকার বিষয়টি তারা সেখানে এসেই জানতে পেরেছেন। এরপর রোগীদের টেনেহিঁচড়ে অন্য হাসপাতাল বা ডায়াগনাস্টিক সেন্টারে নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আনছেন স্বজনরা।
এই বিভাগের টেকনোলজিস্টরা বলছেন, একটি যন্ত্র দিয়ে এতদিন দুই শিফটে ২০-৩০টি এমআরআই করানো হয়েছে। সেটিও বিকল হওয়ায় রোগীরা এখন শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে যাচ্ছেন, কেউ বেসরকারিভাবে করে আনছেন।
বাগেরহাট থেকে চিকিৎসা নিতে আসা তুষার মিয়া (৪৫) হাসপাতালের নিউরো বিভাগে দেখিয়েছেন। চিকিৎসক তার মাথার এমআরআই করাতে বলেছেন। স্বজনরা তাকে রেডিওলজি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর মেশিন নষ্ট থাকার বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তারা ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষাটি করিয়ে আসেন।
“যানজটের শহরে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেল থেকে ধানমণ্ডি যাতায়াতের কী কষ্ট তা বোঝার কেউ নেই,” এভাবেই আক্ষেপ ঝরে তুষার মিয়ার কণ্ঠে।
আরেকজন রোগীর স্বজন মো. ইদ্রিস জানান, ঢাকা মেডিকেলে এমআরআই করাতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগে। বাইরে লাগে এর দ্বিগুণ। সঙ্গে রোগী টানাটানির কষ্ট আর যাতায়াতে আরও এক হাজার টাকা খরচ আছে।
ঢাকা মেডিকেলের যন্ত্র নষ্ট হওয়ায় চাপ পড়েছে পাশের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এমআরআই যন্ত্রে। তাও সেখানে দুদিন আগে থেকে সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হয়।
নওগাঁর বাসিন্দা মো. সুমন (৩২) কানের সমস্যা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে পড়েছেন ভোগান্তিতে। চিকিৎসক তাকে এমআরআই করাতে বলেছেন। এরপর দুদিন আগে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সিরিয়াল দিয়ে মঙ্গলবার করাতে পেরেছেন।
সুমনের স্ত্রী সুরভি আক্তার বলেন, “শেখ হাসিনা বার্নে আমাদের পরিচিত লোক আছে, তারপরও আমি দুদিন আগে সিরিয়াল দিয়ে আজ এমআরআই করাইতে পারছি। বাইরে করাইলে অনেক বেশি টাকা লাগে।”
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাজ্জাদ জালাল বলেন, “এখানে একটি এমআরআই ও দুটি সিটিস্ক্যান মেশিন রয়েছে। এখানে ইনস্টিটিউটের রোগীর বাইরে ঢাকা মেডিকেলের রোগীদের চাপ বেড়েছে। সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এক শিফটে প্রতিদিন গড়ে ১০/১২টি এমআরআই করানো যাচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ায় সিরিয়াল দিয়ে করাতে হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, কোভিড মহামারীর আগে হাসপাতালের দুটো এমআরআই যন্ত্রের একটি বিকল হয়। দ্বিতীয়টি বিকল হওয়ারও চার মাস পার হচ্ছে।
হাসপাতালের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের শেষে দিকে দুটো এমআরআই এবং একটি সিটিস্ক্যান যন্ত্র মেশিন বসনো হয়েছে।
পরিচালক নাজমুল হক বলেন, এমআরআই মেশিন দুটির পাঁচ বছর ওয়ারেন্টি ছিল। সে সময়ের মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে কোম্পানি মেরামত করে দেবে, এমন চুক্তি ছিল। ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন তা কোম্পানি থেকে মেরামত করাতে হলে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “বর্তমানে জরুরি রোগীর ক্ষেত্রে আমরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের সহযোগিতা নিচ্ছি।”
হাসপাতালের সিটিস্ক্যান কক্ষের কর্মীরা জানিয়েছেন, দুটি যন্ত্রের একটি রয়েছে জরুরি বিভাগে, অন্যটি নতুন ভবনের নিচ তলায়। দুই শিফটে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলত যন্ত্রগুলো। দুই যন্ত্রে সকালের শিফটে গড়ে ৯০ থেকে ১২০ টি স্ক্যান করা হত। বিকালে করা হত ৫০ থেকে ৬০টি। এছাড়া রাতেও জরুরি প্রয়োজনে চালানো হত যন্ত্র। বর্তমানে একটি যন্ত্র নষ্ট থাকায় নতুন ভবনের যন্ত্রটির ওপর চাপ বেড়ে গেছে।
তারা বলছেন, কিছু রোগী বার্ন ইন্সটিটিউটে যাচ্ছেন, তারপরও অনেক চাপ। এভাবে চললে এই যন্ত্রটিও যে কোনো সময় বিকল হতে পারে।
নষ্ট সিটিস্ক্যান যন্ত্র মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, “কোম্পানিকে জানানো হয়েছে, হয়তো কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”