২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর করা মূল্য তালিকা এড়িয়ে গিয়ে দাম কমার দাবি করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
Published : 03 Apr 2024, 11:15 PM
হৃদরোগের চিকিৎসা কার্ডিয়াক সার্জারিতে ব্যবহৃত কয়েক ধরনের করোনারি স্টেন্টের দাম কমানোর যে দাবি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। বরং সংস্থাটির সবশেষ দেওয়া মূল্য তালিকা অনুযায়ী অন্তত ২০ ধরনের করোনারি স্টেন্টের দাম বেড়ে গেছে।
২৩টি ধরনের করোনারি স্টেন্টের দাম কমানো নিয়ে মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, “এটি হার্টের রিংয়ের মূল্য হ্রাসে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”
এতে ২৩ ধরনের স্টেন্টের মধ্যে ২২টির দাম আগের চেয়ে কমার আর একটির দাম কিছুটা বাড়তি থাকার কথা বলা হয়েছে।
তবে এ তালিকা করতে গিয়ে অধিদপ্তর ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সংস্থাটির দেওয়া মূল্য তালিকা এড়িয়ে গেছে।
সেদিন বিভিন্ন দেশে তৈরি ৪৪ ধরনের স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচর মূল্য নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই মূল্য তালিকা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১৬ ডিসেম্বর থেকে।
মঙ্গলবার নতুন যে মূল্য তালিকা ডিজিডিএ দিয়েছে তার মধ্যে চারটি স্টেন্টের দাম নির্ধারণ হয়েছিল গত বছরের ১৭ জানুয়ারি, দুটি স্টেন্টের দাম ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং একটি স্টেন্টের দাম ঠিক করা হয় ২৭ ডিসেম্বর।
বাকি স্টেন্টগুলোর আগের মূল্য নেওয়া হয়েছে ২০২২, ২০২১, ২০১৭, ২০১৫, ২০১৯ এবং ২০২০ সালের তালিকা থেকে।
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বরের মূল্য তালিকা অনুযায়ী দেখা গেছে, নতুন তালিকায় স্টেন্টের দাম ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
অধিদপ্তরের একজন পরিচালকের দাবি, তারা যে সময় যে মূল্য তালিকা করেছিলেন, সেটি সব বিক্রেতা মানেননি। এ কারণেই নতুন তালিকা। ফলে ডিসেম্বরের তালিকা ‘বিবেচ্য হবে না।’
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বরের তালিকা অনুযায়ী, পোল্যান্ডে তৈরি অ্যালেক্স এবং অ্যালেক্স প্লাস স্টেন্টের দাম ছিল ৫৩ হাজার টাকা। নতুন তালিকায় সেটি ৬০ হাজার টাকা হয়ে গেছে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৭ হাজার টাকা।
ডিজিডিএ ওই দুটি স্টেন্টের ২০২২ এবং ২০১৭ সালের দামের সঙ্গে তুলনা করেছে। সে সময় একটির দাম ছিল ৮০ হাজার টাকা, আরেকটির দাম ছিল ৬২ হাজার ৩৯৫ টাকা।
মঙ্গলবারের তালিকায় জাপানের তৈরি আল্টিমাস্টার টেনসেইয়ের দাম দেওয়া হয়েছে ৬৬ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বরের মূল্য ৮৩ হাজার ২০০ টাকা ধরে ওই স্টেন্টের দাম ২৩ হাজার ২০০ টাকা কমেছে দাবি করা হয়েছে। অথচ ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বরের মূল্য তালিকা অনুযায়ী ওই স্টেন্টের দাম ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বেড়েছে ৬ হাজার টাকা।
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বরের মূল্য তালিকা ধরে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৫৫ হাজার টাকার ডিরেক্ট স্টেন্ট সিরো ৬৬ হাজার টাকা এবং ২০ হাজার টাকা দামের ডিরেক্ট স্টেন্ট ৩০ হাজার টাকা করা করা হয়েছে।
দেশে প্রথমবার রোবটের সাহায্যে হার্টে বসল রিং
দাম জটিলতায় হার্টের রিং: বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ বন্ধ
এছাড়া সু্ইজারল্যান্ডের অরসিরো ৫ হাজার, অরসিরো মিশন ৩ হাজার, প্রো-কাইনেটিক এনার্জি ৫ হাজার, বায়োমেট্রিক্স নিওফ্লেক্স ২ হাজার, বায়োমেট্রিক্স আলফা ১ হাজার, বায়োফ্রিডম ৩ হাজার টাকা বেড়েছে।
ভারতের তৈরি মেটাফর ৫ হাজার, এভারমাইন ফিফটি ১০ হাজার, বায়োমাইম মর্ফ স্টেন্টের দামও গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাফিনিটি এমএস মিনির দাম ৫ হাজার, দক্ষিণ কোরিয়ার জেনোস ডিইএস ১১ হাজার, স্পেনের ইভাসকুলার এনজিওলাইট ৭ হাজার, জার্মানির জিলিমাস ৫ হাজার এবং নেদারল্যান্ডসের অ্যাবলুমিনাস ডিইএস প্লাসের দাম ৫ হাজার টাকা বেড়েছে।
যে ব্যাখ্যা অধিদপ্তর পরিচালকের
এ বিষয়ে কথা বলতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
পরে অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বছরের ডিসেম্বর মাসে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল সেখানে চারটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা ছিলেন। ফলে বাকি সরবরাহকারীরা ওই দামটি গ্রহণ করেনি। এ কারণে সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, "দাম নির্ধারণের ওই সভায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর কেউ আসেনি। তারা দামটা গ্রহণও করেনি। তারা বিষয়টি নিয়ে কোর্টেও গিয়েছেন। আর মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের বলা হয়েছে দামটি পুনরায় নির্ধারণ করতে। এরপর আমরা সবার সঙ্গে মিটিং করেছি, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টরাও সেখানে ছিলেন। সবার সঙ্গে আলাপ করে এই দামটি ঠিক করা হয়েছে। এখন আগের চেয়ে দাম অনেক কমেছে।"
কী হয়েছিল ডিসেম্বরে
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অধিদপ্তর যখন স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করে দেয় তখন আমদানিকারকদের একটি বড় অংশ নতুন দাম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সে সময় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ করে দিলে জরুরি এই চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন রোগীরা।
মেডিকেল ডিভাইস ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়াসিম আহমদ মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন দাম নির্ধারণের পর বিষয়টি নিয়ে তাদের খুব একটা আপত্তি নেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ডলার, ইউরোর যা দাম তাতে এখন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাও কম। এখন যা দাম আছে আমাদের ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের বলতে হবে দেশের সরকার নিয়ম করেছে, তাদের কাছ থেকে কিছু বেনিফিট নিয়ে অ্যাডজাস্ট করে আমরা আপাতত সারভাইভ করব।”